নয়াদিল্লি: জ্ঞানবাপী মসজিদ বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন সংঘপ্রধান মোহন ভাগবত। তবে কি তিনি হিন্দুত্ববাদের রাস্তা থেকে সরে আসতে চাইছেন? এই প্রশ্ন তুলছে রাজনৈতিক মহল। কারণ
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘকে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বলেই জানে সবাই। রাম মন্দির নির্মাণ থেকে শুরু করে দেশের মধ্যে হিন্দুত্ববাদের বিপুল প্রচার এবং প্রসারে এই সংগঠনের যথেষ্ট ভূমিকা আছে। কিন্তু কিছুদিন আগেই সংঘ প্রধান মোহন ভাগবত জ্ঞানব্যাপী মন্দির বিতর্কে উগ্র হিন্দুত্ববাদের বিরোধিতা করেন। একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “প্রত্যেক মসজিদের মধ্যে শিবলিঙ্গ খুঁজতে যাওয়া ঠিক নয়। আমাদের কিছু জায়গা (ধর্মীয় স্থান) নিয়ে বিশেষ ভক্তি থাকতে পারে। কিন্তু তা বলে রোজ নতুন নতুন বিষয় নিয়ে কেন জিগির তোলা হবে? আমাদের আদৌ বিতর্ক বাড়ানো উচিত নয়। জ্ঞানবাপী নিয়ে আমাদের ভক্তি-শ্রদ্ধা থাকতেই পারে। কিন্তু তা বলে প্রত্যেক মসজিদেই কেন শিবলিঙ্গ খোঁজা হবে?” জ্ঞানবাপী মসজিদ বিতর্কে তিনি আরও বলেন, “ইতিহাসকে পাল্টানো যায় না। আজকের হিন্দু বা মুসলিম কেউ মন্দির, মসজিদ তৈরি করেননি। আদালতের রায় সবাইকে মেনে নিতে হবে।”
স্বাভাবিকভাবেই মোহন ভাগবতের এই মন্তব্যে জোর চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। তবে কি প্রবল হিন্দুত্ববাদ থেকে সরে আসতে চাইছে সংঘ? নাকি আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে নতুন কোনও চিত্রনাট্যের আশ্রয় নিতে চাইছেন তাঁরা? ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে গভীর ভাবনা চিন্তা করেই এমন মন্তব্য করেছেন সংঘ প্রধান। উল্লেখ্য রাম মন্দির নির্মাণ নিয়ে বিজেপি আন্দোলন করে যাবে এটা বহুদিন ধরেই তাদের প্রধান অ্যাজেন্ডা ছিল। অবশেষে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ শুরু হয়েছে। কিন্তু নতুন করে বিতর্ক উঠেছে জ্ঞানবাপী মসজিদ, ইদগাহ মসজিদ, কুতুবমিনার, তাজমহল, জামা মসজিদ নিয়ে। একাধিক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন দাবি করেছে সেখানে আগে মন্দির ছিল। সেখানে খননকার্যের দাবি জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছে তারা। ঠিক এই জায়গা থেকে সংঘ প্রধানের বক্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ এই মসজিদগুলি নিয়ে সংঘ যদি নতুন করে দাবি তোলে, বা সেগুলিকে বিজেপি যদি প্রশ্রয় দেয় তাহলে কেন্দ্র অস্বস্তিতে পড়বে।
বিরোধীরা বলবে বিজেপি অথবা সংঘ সেই মন্দির ইস্যু নিয়েই ময়দানে রয়ে গিয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ যদি আদালতের দ্বারস্থ হন সেক্ষেত্রে সংঘ বা কেন্দ্রের উপর দায় বর্তাবে না। সেক্ষেত্রে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি আদালতে গেলে দেশজুড়ে নতুন করে হিন্দুত্ববাদ এমনিতেই জেগে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে। অর্থাৎ সংঘ বা বিজেপি সরাসরি ওই ইস্যুর মধ্যে না ঢুকলেও গেরুয়া শিবির যে ধর্মীয় মেরুকরণের সুবিধা পাবে, তা একপ্রকার নিশ্চিত বলেই মনে করেন রাজনীতির কারবারিদের একাংশ। সেক্ষেত্রে কেন্দ্র বলতেই পারবে আদালত যা নির্দেশ দেবে সেটা মেনে নেওয়া হবে। আর কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে মোহন ভাগবত ঠিক সে কথাটাই বলেছেন। তাই বিষয়টিকে দুইয়ে দুইয়ে চার করে নিচ্ছে রাজনৈতিক মহল। লোকসভা নির্বাচনের ঠিক দু’বছর বাকি। তাই এখনও অনেক নাটক দেখা বাকি আছে। বিষয়টি আগামী দিনে কোন দিকে মোড় নেয় এখন সেটাই দেখার।