নিজস্ব প্রতিনিধি: সন্তোষ দত্তের সেই বিখ্যাত ডায়লগ অনুসরণ করে বলা যেতেই পারে, বিজেপিতে কি গ্রহণযোগ্য মুখ কম পড়িয়াছে? আর সেই কারণেই কি মহাগুরু মিঠুন চক্রবর্তীকে গুরুদায়িত্ব দেওয়া হল পঞ্চায়েত এবং আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে? উল্লেখ্য রাজ্য বিজেপির কোর কমিটিতে রাখা হয়েছে মিঠুন চক্রবর্তীকে। সদ্য রাজ্য বিজেপির কোর কমিটির তালিকা ঘোষণা করেছেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। চার জন বিশেষ আমন্ত্রিত সদস্য-সহ মোট চব্বিশ জনের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এই চার জন হলেন বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুনীল বনশল, কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক মঙ্গল পাণ্ডে, সহ পর্যবেক্ষক আশা লাকড়া ও অমিত মালব্য। তবে তালিকায় নিঃসন্দেহে চমক হিসেবে রয়েছেন মিঠুন চক্রবর্তী। কংগ্রেস, বিজেপি, তৃণমূলের মতো ডানপন্থী দলগুলির ক্ষেত্রে ক্যারিশ্মাটিক নেতা-নেত্রীদের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি থাকে। সেখানে শুধুমাত্র সংগঠনিক দক্ষতার উপর ভিত্তি করে দলকে টেনে নিয়ে যাওয়া যায় না। এটা স্পষ্ট রাজ্য বিজেপিতে সেই অর্থে প্রবল জনপ্রিয় মুখের অভাব রয়েছে। তাই রাজনীতির কারবারিরা মনে করছেন মিঠুন চক্রবর্তীর ‘স্টার ভ্যালু’কে কাজে লাগানোর জন্যই তাঁকে বড় দায়িত্ব দেওয়া হল পঞ্চায়েত এবং লোকসভা নির্বাচনের আগে। অর্থাৎ পঞ্চায়েত ও আগামী লোকসভা নির্বাচনে প্রচার আর জনসম্পর্ক কর্মসূচিতে মিঠুন চক্রবর্তী হতে চলেছেন বিজেপির তুরুপের তাস।
গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপিতে যোগ দেন মিঠুন।তাঁকে তখন প্রচারে ব্যাপকভাবে কাজে লাগায় বিজেপি। কলকাতা থেকে পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, সর্বত্র প্রচারে দেখা যায় মহাগুরুকে। প্রচারে নিজের সিনেমার বিভিন্ন জনপ্রিয় ডায়ালগ বলতে থাকেন মিঠুন। সেই সময় মিঠুনকে ঘিরে দলের কর্মী-সমর্থকদের উৎসাহ, উদ্দীপনা ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু নির্বাচনে বিজেপি ধরাশায়ী হওয়ার পর থেকেই মিঠুনকে সেভাবে রাজ্য বিজেপির কর্মকাণ্ডে আর দেখা যায়নি। তবে বেশ কিছুদিন প্রত্যক্ষ রাজনীতির বাইরে থাকার পর এবারের দুর্গাপুজোর আগে ফের সক্রিয় হন তিনি। একাধিক বার দাবি করতে থাকেন তৃণমূলের বহু বিধায়ক নাকি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। যা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে বেশ চর্চা শুরু হয়ে যায়। এরপরই রাজ্য বিজেপির কোর কমিটিতে স্থান পেলেন তিনি। বিজেপির এবারের এই কোর কমিটিতে একটা ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করা হয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কোর কমিটিতে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরীকে জায়গা দিয়ে বার্তা দেওয়া হল কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পুরনো ও নতুনের মধ্যে দ্বন্দ্ব চাইছেন না। প্রত্যাশিতভাবেই রয়েছেন সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারী ও দিলীপ ঘোষ।
এছাড়া কমিটিতে রয়েছেন অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়, রাজ্য বিধানসভায় বিজেপির মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গা। নতুন এসেছেন তিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক, শান্তনু ঠাকুর এবং জন বার্লা। রয়েছেন দুই বিধায়ক অগ্নমিত্রা পাল, দীপক বর্মন, সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়, সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো এবং জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়। সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী ও সতীশ ধণ্ডও রয়েছেন কোর কমিটিতে। রয়েছেন বাঁকুড়ার সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার। তবে মূলত আলোচনা শুরু হয়েছে মিঠুন চক্রবর্তীকে নিয়ে। বিভিন্ন দুর্নীতির ঘটনায় তৃণমূল যখন রাজ্য রাজনীতিতে অনেকটাই ব্যাকফুটে চলে গিয়েছে, তখন মিঠুনের মতো স্বচ্ছ ইমেজের সুপারস্টারকে সামনে রেখে প্রচারে নেমে বাজিমাত করতে চাইছে গেরুয়া শিবির। তবে বিভিন্ন সময় দেখা গিয়েছে মিঠুনের বক্তব্যকে দলীয় স্তর থেকে সেভাবে মান্যতা দিতে চাননি রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই রাজ্য বিজেপিতে মিঠুনের উত্থান দলে নতুন করে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে উস্কে দেবে কিনা, সেই বিষয়টি নিয়েও যথারীতি চর্চা শুরু হয়েছে।