দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন চান মমতা, পরিবারতন্ত্র মুক্ত দেশ চান শুভেন্দু! দু’জনেই যা বলছেন, ভেবে বলছেন তো?

দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন চান মমতা, পরিবারতন্ত্র মুক্ত দেশ চান শুভেন্দু! দু’জনেই যা বলছেন, ভেবে বলছেন তো?

নিজস্ব প্রতিনিধি: তৃণমূল সুপ্রিম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি শাসকদলের সর্বস্তরের নেতা-মন্ত্রী বা কর্মীরা বারবার দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনের কথা বলে চলেছেন। সদ্য মেঘালয় সফর করেছেন মমতা এবং অভিষেক। সেখানে গিয়েও মমতা দাবি করেছেন সেই রাজ্যে যদি তৃণমূল ক্ষমতায় আসে তাহলে দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন উপহার দেবেন তাঁরা। একই দাবি এর আগে তৃণমূলকে গোয়া, ত্রিপুরা, অসমে গিয়েও করতে দেখা গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে যেভাবে এক শ্রেণির নেতা-মন্ত্রীর পাশাপাশি প্রশাসনের একাংশের বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কীভাবে মেঘালয়ে গিয়ে বলছেন তাঁরা সেই রাজ্যে ক্ষমতায় এলে দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন উপহার দেবেন? এই চর্চা যথারীতি শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। তবে শুধু মমতা একা নন, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী যেভাবে নিয়মিত বলে চলেছেন দেশ থেকে পরিবারতন্ত্র দূর করতে হবে, তাতে তাঁর বক্তব্য নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-সহ বিজেপির সকলেই পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার হয়ে থাকেন। আর বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে শুভেন্দুর মুখেও সেই একই কথা বারবার শোনা যাচ্ছে। কিন্তু শুভেন্দু কী তাঁর পরিবারের সদস্যদের কথা ভুলে গিয়েছেন? এ প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠছে। শুভেন্দুর পিতা শিশির অধিকারী কাঁথি লোকসভা কেন্দ্র থেকে একাধিকবার সাংসদ ও কেন্দ্রের মন্ত্রী হয়েছেন। তার আগে তিনি তৃণমূলের বিধায়কও নির্বাচিত হয়েছিলেন। দীর্ঘদিন কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়া একাধিক নিগমের মাথাতেও তাঁকে বিভিন্ন সময় দেখা গিয়েছে। শুভেন্দুর ছোট ভাই সৌমেন্দু অধিকারী কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান হয়েছেন। শুভেন্দুর আরেক ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ। শুভেন্দু তৃণমূলে থাকার সময় একাধিক দফতরের মন্ত্রী ও বিভিন্ন নিগমের চেয়ারম্যান ছিলেন। তাই শুভেন্দু যেভাবে তৃণমূলকে নিশানা করে পরিবারতন্ত্রের কথা বলে সরব হন, সেটা কি তাঁকে মানায়? তাই মমতা ও শুভেন্দু দুজনেই যা বলছেন, সেটা তাঁরা ভেবে বলছেন কিনা সেটা নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে।

তবে কি তাঁরা মানুষকে খুবই বোকা বা মূর্খ ভাবছেন? সেটা ভাবলে খুবই ভুল করবেন মমতা এবং শুভেন্দু। শাসক বা বিরোধী দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতা-নেত্রীদের উপর সব সময় কিন্তু সাধারণ মানুষের কড়া নজর রয়েছে এবং সেটা থাকবেও। তাই দু’জনেই যদি লোক হাসানো কথা বলে চলেন তাতে একটা সময় মানুষের ধৈর্যচ্যুতি ঘটতে বাধ্য। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির ঘটনা সামনে আসতেই পর্ষদ স্বীকার করে নিয়েছে তাদের বহু জায়গায় ভুল হয়েছে। এভাবেই তারা মেনে নিয়েছে যে দুর্নীতি হয়েছে। আর গরু পাচার, কয়লা পাচারের পাশাপাশি আবাস যোজনা নিয়ে যে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তা কী অস্বীকার করতে পারে রাজ্যের শাসক দল? তাহলে কিসের ভিত্তিতে মেঘালয়ে গিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন তাঁরা সেই রাজ্যে ক্ষমতায় এলে দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন উপহার দেবেন? অন্যদিকে কীভাবে শুভেন্দু অধিকারী পরিবারতন্ত্রের  বিরুদ্ধে কথা বলে চলেছেন? একটা সময় এর জবাব কিন্তু তাঁদের দিতেই হবে। বাংলার মানুষ সেই জবাব চাইছেন এবং আগামী দিনেও চাইবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *