শিক্ষক-শিক্ষিকা পদে বিপুল সংখ্যক নিয়োগের ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর, কী বলছেন বিরোধীরা?

শিক্ষক-শিক্ষিকা পদে বিপুল সংখ্যক নিয়োগের ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর, কী বলছেন বিরোধীরা?

নিজস্ব প্রতিনিধি: শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি ইস্যুতে শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। যে ঘটনায় প্রবল অস্বস্তিতে পড়েছে রাজ্য সরকার। এই অবস্থায় সোমবার শিক্ষক দিবসের দিন বড় ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন বিশ্ব বাংলা মেলা প্রাঙ্গণে শিক্ষক দিবস উপলক্ষে রাজ্য সরকারের ‘শিক্ষা রত্ন’ প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন ৮৯ হাজার নতুন পদে শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। এর পাশাপাশি আগামী ১৫ দিনের মধ্যে রাজ্যের ৩০ হাজার বেকারের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ দিয়ে এই চাকরি দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন- অভিষেক ইস্যুতে হোঁচট খেল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা? কতটা অসুবিধায় পড়ল সিবিআই-ইডি?

এর পাশাপাশি শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী বোঝাতে চান দু’একজনের জন্য রাজ্য সরকার বা গোটা তৃণমূলকে নিশানা করা ঠিক নয়। পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ার পর যেভাবে দুর্নীতি ইস্যুতে সার্বিকভাবে তৃণমূলকে তীব্র আক্রমণ করছে বিরোধীরা, সে প্রসঙ্গে এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন এভাবে সবাইকে দায়ী করা ঠিক হবে না। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,” আমি কত টাকার মালিক হলাম, এটা আমার পরিচয় নয়। পয়সা আজ আছে, কাল নেই। ফুরিয়ে যাবে। আপনারা যদি আমাকে বলেন আপনি ১০০ শতাংশ কন্ট্রোল করতে পারবেন? আমি কে? আমি তো একজন সাধারণ মানুষ। এগুলো নির্ভর করে নিজেদের উপরে। আমি কতটা পর্যন্ত লোভী হব নির্ভর করবে আমার উপরে। আমি কতটা ভালভাবে চলব, নির্ভর করবে আমার উপরে”। সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন,”একজন ভুল করলে সবাইকে দায়ী করা অনুচিত। সব জগতে সবাই ঠিক হয় না। আমার পাঁচটা আঙুল কি সমান? তেমন সমাজে ভাল মানুষও আছে, খারাপ মানুষও আছে। একটা খারাপ মানুষ একটা খারাপ ব্যবহার করলে সেজন্য গোটা সমাজটাকে কুৎসা করে উগরে দিলাম, আর সবাইকে একই জায়গায় ফেললাম এটা ঠিক হয় না। কখনও কখনও ভাল মানুষও বিপথে পরিচালিত হয়ে যায়।” উল্লেখ্য দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে চাকরিপ্রার্থীরা আন্দোলন করছেন। এদিন সে প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বিচার যাঁরা পাননি, যদি মনে করেন পাননি, আমাদের থেকেই পাবেন। প্রক্রিয়ার জন্য সময় লাগবে। আমি চাকরি দিতে চাই। কিন্তু মামলা করে সেই পথ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে! কেউ কেউ পিআইএল করে জীবনটাই পিআইএল করে দিল”।

এর পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ‘‘স্বাধীনতার পর ৬৫-৬৬ বছরে ১২টি বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছিল রাজ্যে। আর গত ১১ বছরে আরও ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয় ও ৫১টি নতুন কলেজ তৈরি করা হয়েছে।”  কিন্তু প্রশ্ন এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষিকাকে কবে নিয়োগ করা হবে তা নিয়ে স্পষ্ট করে মুখ্যমন্ত্রী কিছু বলেননি। সেই নিয়োগ এক লপ্তে হবে, নাকি ধাপে ধাপে নিয়োগ করা হবে, তা পরিষ্কার নয়। এছাড়া যে ৩০ হাজার পদে নিয়োগের কথা মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছে তার মাপকাঠি কি, কারা সেই কাজের জন্য যোগ্য, কীভাবে আবেদন করা যাবে সেটাও স্পষ্ট নয় বলে ওয়াকিবহাল মহলের মত। স্বাভাবিকভাবেই বিরোধীরা বিষয়টি নিয়ে নিশানা করছেন মুখ্যমন্ত্রীকে। বিরোধীদের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়ম মানেন না। তাই বঞ্চিতরা বাধ্য হয়ে মামলা করতে বাধ্য হন। আর তখন নিয়োগ আটকে যাওয়ায় মুখ্যমন্ত্রীকে আর কোষাগার থেকে টাকা খরচ করতে হয় না। তাই ইচ্ছা করেই মুখ্যমন্ত্রী ওই পথে হাঁটেন বলে বিরোধীদের অভিযোগ। রাজ্যে কর্মসংস্থানের অবস্থা নিয়ে দিন দিন উদ্বেগ বাড়ছে। এই অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রী যে বিপুল সংখ্যক নিয়োগের কথা ঘোষণা করেছেন তা দ্রুত বাস্তবায়িত হোক, এমনটাই চাইছেন চাকরিপ্রার্থীরা। কিন্তু কবে সেই প্রক্রিয়া শুরু হবে তা কারও জানা নেই। এই অবস্থায় বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকার কবে বিজ্ঞপ্তি জারি করে সেটাই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen + ten =