মমতা-শুভেন্দুর সাক্ষাৎ ঘিরে জল্পনা তুঙ্গে, এবার কি শুভেন্দুর মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধিতায় ভাটা পড়বে?

মমতা-শুভেন্দুর সাক্ষাৎ ঘিরে জল্পনা তুঙ্গে, এবার কি শুভেন্দুর মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধিতায় ভাটা পড়বে?

নিজস্ব প্রতিনিধি: নন্দীগ্রাম বিধানসভা নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারিয়ে দেওয়ার পর থেকেই শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে তৃণমূল নেত্রীর সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকেছে। তারপর থেকেই বিভিন্ন ইস্যুতে মমতাকে নজিরবিহীন আক্রমণ করে চলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। পাল্টা মমতা নাম না করে শুভেন্দুকে নিশানা করে গিয়েছেন। অবস্থাটা এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে কেউ কারও যেন মুখ দেখতে চাইতেন না। প্রতিনিয়ত একে অপরের প্রতি লাগাতার আক্রমণ, আর আক্রমণের সময় চোখাচোখা বিশেষণের ব্যবহার।

এক বছরের বেশি সময় ধরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বিরোধী  দলনেতার সম্পর্ক এমনটাই সবাই দেখতে পেয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার সৌজন্যের রাজনীতি দেখল বাংলা। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রায় রোজই নাম করে সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে থাকেন। সেই মমতাই এদিন তাঁকে ‘ভাই’ বলে সম্বোধন করে নিজের ঘরে চা খেতে ডাকেন।‌ এরপর শুভেন্দু দলীয় বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পল, মনোজ টিগ্গা, অশোক লাহিড়ীকে সঙ্গে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে যান।‌ সেখানে তিন-চার মিনিট ছিলেন তাঁরা। আর ঘরে ঢুকেই মুখ্যমন্ত্রীর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেছেন শুভেন্দু। যে বিষয়টি নিয়ে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ শুভেন্দুকে কটাক্ষ পর্যন্ত করেছেন। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে রাজ্য বিধানসভায় যে সৌজন্যের নজির তৈরি হল তার জেরে কি এবার মমতা-শুভেন্দুর একে অপরের প্রতি আক্রমণ একটু হলেও কমবে? মমতাকে যে ভাষায় শুভেন্দু আক্রমণ করে থাকেন, সেই তীব্রতা কি কমতে দেখা যাবে? যদিও শুভেন্দু শনিবারই বনগাঁর ঠাকুরবাড়ির একটি সভায় উপস্থিত থেকে সেই সম্ভাবনা সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়েছেন। উল্টে জোরের সঙ্গে মমতাকে ফের নিশানা করে বলেছেন, আমি তাঁকে গণতান্ত্রিক হবে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী করে ছাড়ব। 

রাজনীতিতে সৌজন্য থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু শুভেন্দু-মমতার সম্পর্কটা যে জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে, সেখানে এমনটা যে ঘটবে সেটা কেউ ভাবতেও পারেননি। তবে শুভেন্দু স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী ডেকেছেন বলেই তিনি তাঁর ঘরে গিয়েছেন। আর সেই বিষয়টি নিয়েই শনিবার শুভেন্দু বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী আত্মসমর্পণ করেছেন বিরোধীদের কাছে। যদিও স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন রাজনীতিতে এই সৌজন্যেরই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আর  এই সৌজন্যের আবহের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে কংগ্রেস ও বামেরা। বহুদিন ধরেই তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির সেটিং রয়েছে বলে অভিযোগ করে থাকে তারা। তাই নতুন করে এই বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন বাম-কংগ্রেস নেতৃত্ব। তাই এখন যদি শুভেন্দু আগামী দিনে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে আক্রমণের তীব্রতা কমিয়ে দেন তাতে ক্ষতি হবে গেরুয়া শিবিরেরই। কিন্তু শুভেন্দু যে সে পথে হাঁটবেন না সেটা পরিষ্কার। তাতে শুভেন্দুর অবশ্যই রাজনৈতিক ক্ষতি হবে। উল্টে তিনি মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলের বিরোধিতাকে আরও উচ্চগ্রামে নিয়ে যাবেন, এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কারণ তাতে তাঁর দলের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতা আরও বাড়বে। তাই বিধানসভায় শুভেন্দু-মমতার মধ্যে যে সৌজন্যের রাজনীতি তৈরি হয়েছে সেখান থেকে রাজনীতির কারবারিরা কিছু একটা খুঁজতে চাইলেও সবাইকে হতাশ হতে হবে। এমন কিছু ‘ফ্লেভার’ সেখান থেকে খুঁজে পাওয়া রীতিমতো অসম্ভব ব্যাপার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *