×

মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী ‘বিদ্রোহী’ শিন্ডে, কোন অঙ্কে এত বড় সিদ্ধান্ত নিল বিজেপি?

 
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী ‘বিদ্রোহী’ শিন্ডে, কোন অঙ্কে এত বড় সিদ্ধান্ত নিল বিজেপি?

নিজস্ব প্রতিনিধি:  যত কাণ্ড মহারাষ্ট্রে! মহারাষ্ট্র নাটকের প্রতিটি পরতে পরতে জড়িয়ে রয়েছে নানা ঘটনাপ্রবাহ।

আর সেই সূত্রেই মহারাষ্ট্র রাজনীতিতে বড় চমক দেখা গিয়েছে। সবাই যখন ভাবছেন  মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেবেন বিজেপির দেবেন্দ্র ফড়নবিশ, ঠিক তখনই হল বড় ঘোষণা। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নাম ঘোষিত হল বিদ্রোহী শিবসেনা নেতা একনাথ শিন্ডের। আর দেবেন্দ্র জানালেন তিনি কোনও মন্ত্রিত্বই গ্রহণ করবেন না। যদিও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডার অনুরোধে উপ-মুখ্যমন্ত্রী হতে রাজি হয়ে যান তিনি। আর বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে সাতটায় তাঁদের দু'জনকে শপথ বাক্য পাঠ করালেন মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল ভগত সিং কোশিয়ারি। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন না সদ্য প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে। তবে অনুষ্ঠানে প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলেন এনসিপি সুপ্রিমো শারদ পাওয়ার। মহারাষ্ট্র রাজনীতিতে যে এমন বাঁক আসবে, সেটা কেউই বুঝতে পারেননি। যেখানে খেলা শেষ হলেও যেন তার শেষ নেই। হিন্দি ছবির সেই বিখ্যাত সংলাপের মতো, 'পিকচার আভি বাকি হ্যায় মেরে দোস্ত'। ঠিক সেভাবেই যেন মুখ্যমন্ত্রী পদে বসলেন এক সময়ের অটোচালক তথা শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত বালাসাহেব ঠাকরের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ নেতা একনাথ শিন্ডে। শিন্ডের এই উত্থান রূপকথার মতো। মহারাষ্ট্রের সাতারা অঞ্চলের এক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া একনাথ আজ বসলেন মহারাষ্ট্রের সিংহাসনে। কিন্তু কি কি কারণে  মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে তাঁকে? সেক্ষেত্রে একাধিক কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা।

যেভাবে দেবেন্দ্রর বদলে একনাথকে মুখ্যমন্ত্রী পদে নির্বাচিত করল বিজেপি সেটাকে রাজনৈতিক মহল গেরুয়া শিবিরের মাস্টার স্ট্রোক হিসেবেই দেখছে। এর কারণ একটাই, উদ্ধব ঠাকরে তথা লক্ষ লক্ষ বালাসাহেব অনুগামীদের বিশেষ বার্তা দেওয়া। যখন একনাথ শিন্ডে বিদ্রোহ শুরু করেছিলেন তখন উদ্ধব ঠাকরে তাঁদের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, ‘‘দল ভাঙলেও একনাথ কি মুখ্যমন্ত্রী হতে পারবেন? বিজেপি কি ছেড়ে দেবে?’’ সেই প্রশ্নের মোক্ষম জবাব কয়েক দিনের মধ্যেই পেয়ে গেলেন উদ্ধব। সেই সঙ্গে 'আত্মত্যাগ' করে বিজেপিতে ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছেন দেবেন্দ্র ফড়নবিশ। আসলে এই পথে না হাঁটলে বিজেপি হয়ত মহারাষ্ট্রে সরকার করতেই পারত না। কারণ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার জন্যই বিদ্রোহ করে বিজেপিকে বার্তা দিয়েছিলেন শিন্ডে, এটা দ্রুত বুঝে গিয়েছিল গেরুয়া শিবির।

সবচেয়ে বড় কথা শিন্ডেকে মুখ্যমন্ত্রী না করলে আগামী দিনে বিক্ষুব্ধ শিবসেনা বিধায়কদের অনেকেই ফের উদ্ধব শিবিরে চলে যেতে পারেন, এই আশঙ্কাও ছিল বিজেপির মধ্যে। তাই উদ্ধবকে শিক্ষা দিতে মরিয়া বিজেপির এ ছাড়া আর অন্য কোনও পথ খোলা ছিল না। ২০১৪ সালে যখন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন দেবেন্দ্র ফড়নবিশ তখন মন্ত্রিসভায় ছিলেন একনাথ। তাঁদের দুজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তাই শিবসেনায় থেকেও বহুদিন ধরেই বিজেপির সঙ্গে জোট করে সরকার গড়ার ব্যাপারে উদ্ধব ঠাকরের উপর চাপ দিয়ে আসছিলেন শিন্ডে। আর সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়াতেই বিক্ষুব্ধ হন তিনি। আর তাতেই মিলল এত বড় পুরস্কার। এর আগে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে আসার পরেও তাঁকে মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী করেনি বিজেপি। কিন্তু শিন্ডেকে করা হল কেন? আসলে বালাসাহেব ঠাকরের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার ধরে রাখার পাশাপাশি মারাঠাবাসীকে বিশেষ বার্তা দিতে এ ছাড়া আর অন্য উপায় ছিল না বিজেপির। সেই সঙ্গে উদ্ধব ঠাকরের কেরিয়ার শেষ করে দেওয়ার জন্য এই পথে হেঁটেছে বিজেপি, এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

কারণ আড়াই বছর আগে উদ্ধব এনডিএ শিবির ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন মহারাষ্ট্রে মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন সেই প্রশ্নে। তাই বিজেপি ও শিবসেনা জোটের কাছে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও দেবেন্দ্র ফড়নবিশ মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেননি। তখন থেকেই প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ছক কষতে থাকে বিজেপি। অবশেষে আড়াই বছরের মাথায় সুযোগ পেয়ে গেল তারা। সবচেয়ে বড় কথা শিল্ডের হাতে বিধায়ক সংখ্যা বিজেপির তুলনায় অনেক কম। তাই শিন্ডে মুখ্যমন্ত্রী হলেও মহারাষ্ট্রের সরকার পরিচালনা করবে বিজেপিই। তাদের হাতেই থাকবে স্টিয়ারিং। কিন্তু সরকারের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠলে তার দায় ঠেলে দেওয়া যাবে মুখ্যমন্ত্রীর উপর। তাই বিজেপির কাছে ব্যাপারটা এমন দাঁড়িয়েছে যে জলে আছি অথচ যেন জলে নেই। সব মিলিয়ে এই মেগা সিদ্ধান্ত নিয়েছে গেরুয়া শিবির।

From around the web

Education

Headlines