নিজস্ব প্রতিনিধি: এই প্রথম রাজ্য বিধানসভায় সিপিএম তথা বামেদের কোনও অস্তিত্ব নেই। তাদের বিধায়ক সংখ্যা শূন্য। একইভাবে লোকসভায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে বামেদের কোনও সাংসদ নেই। যে বিষয়টি নিয়ে গত বিধানসভা নির্বাচনে পর থেকেই চর্চা চলছে বঙ্গ রাজনীতিতে। আর তাতে দেখা যাচ্ছে তৃণমূল বামেদের সম্পর্কে সুর নরম করেছে। যা ফের একবার দেখা গেল জ্যোতি বসুর ১০৯ তম জন্মদিবসে। শুক্রবার বিধানসভায় তাঁর তৈলচিত্রে মাল্যদান করে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর তাৎপর্যপূর্ণভাবে তিনি বলেন, “রাজনৈতিক মতবিরোধ ছিল, কিন্তু তাঁর হাতে গড়া সিপিএমের কোনও প্রতিনিধি বিধানসভায় না থাকাটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের। ভাবলেও খারাপ লাগে।”
একুশের ভোটযুদ্ধে একটি আসনও পায়নি বামেরা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বিধানসভায় বাম প্রতিনিধি নেই। ফলে গতবছরের মতো এবারও জ্যোতি বসুর জন্মদিনে তাঁকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করলেন তৃণমূল বিধায়করা। আর জ্যোতি বসু সম্পর্কে স্পিকার আরও বলেন, “৩৪ বছর যে দলটা শাসন করেছে, যাদের সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক বিরোধ ছিল, কিন্তু সেই দলটার কোনও প্রতিনিধি না থাকাটা দুর্ভাগ্যজনক।”
এর পাশাপাশি তাঁর সংযোজন, “২১ জুলাইয়ের ঘটনা না ঘটালেই পারতেন। কিন্তু তাঁর অনেক ইতিবাচক দিকও ছিল। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অনুরোধও দলের সিদ্ধান্তের জন্য প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।” স্পিকারের পাশাপাশি এদিন জ্যোতি বসুর ছবিতে মাল্যদান করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, “রাজনৈতিকভাবে বিরোধ থাকতেই পারে। কিন্তু সমস্ত গুণী মানুষকে আমরা শ্রদ্ধা জানাই। এটাই আমাদের প্রথা।” একটা সময় বিজেপি সম্পর্কে বর্বর শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন জ্যোতি বসু। এদিন ফিরহাদের বক্তব্যে সেই শব্দ ফিরে এল। তিনি বলেন, “বর্বর দল। জ্যোতিবাবু বলতেন, ঠিক বলতেন।” অর্থাৎ জ্যোতি বসুর জন্মদিনে তাঁর সুরে সুর মেলাতে দেখা গেল তৃণমূলকে। যা নিঃসন্দেহে অবাক করার মতো ব্যাপার।
এর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় বামেদের শূন্য হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে কিছুটা আক্ষেপ করেছিলেন। আর বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলের একাধিক নেতা-নেত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছে বামেদের সঙ্গে তাঁদের মতবিরোধ থাকলেও বিজেপির তুলনায় আদর্শগতভাবে সিপিএম ভাল। কারণ সিপিএম ধর্মের ভিত্তিতে রাজনীতি করে না। তবে বিষয়টি নিয়ে রাজনীতির কারবারিদের একাংশের ব্যাখ্যা একটু অন্যরকম। তাঁরা মনে করছেন যেহেতু এখন রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি, তাই কৌশলগত কারণেই সিপিএম সম্পর্কে একটু নরম মনোভাব পোষণ করছে তৃণমূল। এতে যদি বিজেপির থেকে ভোটের একাংশ বামেদের দিকে চলে যায় তাহলে রাজনৈতিকভাবে আরও লাভ হবে তৃণমূলের। ভোট ভাগ হয়ে যাওয়ার ফায়দা তারা আরও বেশি তুলতে পারবে ইভিএমে। তবে আগামী দিনে যদি সিপিএম তথা বামেরা ফের রাজ্যের প্রধান বিরোধী শক্তি হয়ে ওঠে, তখন কিন্তু তৃণমূল তাদের সম্পর্কে এভাবে আর সুর নরম করবে না। এমনটাই মত ওয়াকিবহাল মহলের। সব মিলিয়ে জ্যোতি বসু তথা সিপিএম সম্পর্কে তৃণমূলের এই বক্তব্য নিয়ে নতুন করে চর্চা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।