অন্য ধারায় হতে পারে রাজনীতি, নয়া দিশা দেখালেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়

অন্য ধারায় হতে পারে রাজনীতি, নয়া দিশা দেখালেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়

নিজস্ব প্রতিনিধি: গোটা রাজ্যবাসীর কাছে বীরের মর্যাদা পাচ্ছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সাধারণ মানুষ মনে করেন কেউ তাঁদের পাশে না দাঁড়ালেও বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় রয়েছেন সকলের পাশে। বস্তুত দুর্নীতি দূর করতে বিচারপতির আসন থেকে যেভাবে একের পর এক কড়া নির্দেশ দিয়েছেন তিনি তাতে শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। সেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এবার একটি টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিলেন। যেখানে বহু বিষয়ের পাশাপাশি রাজনীতি নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ শোনালেন তিনি।

অবসরের পর তাঁকে রাজনীতিতে দেখা গেলে যে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না, সেটা তাঁর কথাতেই স্পষ্ট। কারণ তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, এখনই এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আসেনি। অর্থাৎ ভবিষ্যতে বিষয়টি নিয়ে তিনি তেমন সিদ্ধান্ত প্রয়োজনে নিতেই পারেন। তবে  বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় রাজনীতিতে আসবেন কিনা সেটা পরের কথা। কিন্তু রাজনীতি কত রকম ভাবে হতে পারে সেটা  নিয়েও নতুন দিশা দেখিয়েছেন তিনি। তাঁর মন্তব্য,”রাজনীতি সবসময় দলীয় রাজনীতি হবে এমন কোনও কথা নেই। পাড়ার মোড়ে দাঁড়িয়ে রাজনীতির কথাও তো বলা যেতে পারে।” অর্থাৎ কোনও একজন ব্যক্তি রাস্তায় একা দাঁড়িয়ে সমাজ তথা দেশের উন্নয়ন প্রসঙ্গে নিজের ধ্যান-ধারণা প্রকাশ করে সাধারণ মানুষকে কাছে টানতে পারেন রাজনৈতিক দলের ঝান্ডা ছাড়াই, সম্ভবত এমনটাই বলতে চেয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি যে ধরনের মানুষ, যেভাবে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে আইনের সাহায্য নিয়ে রুখে দাঁড়িয়েছেন, তাতে এমন অন্য ধরার মানসিকতা শুধুমাত্র তাঁর কাছ থেকেই যে পাওয়া সম্ভব, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। 

স্কুল সার্ভিস নিয়োগ দুর্নীতি মামলা নিয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের একের পর এক রায় গোটা সমাজ ব্যবস্থাকে নাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি মনে করেন রাজ্যে স্কুলে নিয়োগে মুড়ি-মুড়কির মতো দুর্নীতি হয়েছে। এ বিষয়ে তাই তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, “মুড়ি-মুড়কির মতো দুর্নীতি হয়েছে বলেই মুড়ি মুড়কির মতো সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিতে হয়েছে। এত দুর্নীতি জীবনেও কল্পনা করতে পারি না৷”  তাঁর আশা সিবিআই প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করবে। তবে সেই প্রক্রিয়া যাতে দ্রুত শেষ হয় তা বারবার শোনা গিয়েছে তাঁর মুখে। সেই সঙ্গে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন,” যারা জালিয়াতি করে চাকরি পেয়েছেন তাঁদের প্রত্যেকের চাকরি যাবে। ধরতে পারলেই চাকরি যাবে। তাঁরা যেন নিশ্চিন্তে না থাকেন৷” সেই সঙ্গে যারা বেআইনিভাবে চাকরি পেয়েছেন তাঁদের কটাক্ষ করে বিচারপতিকে বলতে শোনা  গিয়েছে,” এঁরা কি শেখাবেন, এঁরা তো স্কুলে টুকতে সাহায্য করবেন!” সব মিলিয়ে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বুঝিয়ে দিয়েছেন বিচারপতি হিসেবে বা একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর আপসহীন লড়াই চলবে। আর অবসরের পর সত্যিই যদি তিনি রাজনীতিতে আসেন তাহলে সেটা যে সম্পূর্ণ অন্য ধরার রাজনৈতিক ক্ষেত্র প্রস্তুত করবে সেটা আগাম অনুমান করা যায় তাঁর বক্তব্য থেকেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 + 6 =