নিজস্ব প্রতিনিধি: পঞ্চায়েত নির্বাচন আর সন্ত্রাস ও প্রাণহানি, এ যেন ‘মেড ফর ইচ আদার’ হয়ে গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ইতিহাসে। অতীতে দেখা গিয়েছে পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কীভাবে গ্রাম-বাংলায় ব্যাপক সন্ত্রাস হয়েছে। আর সেই সন্ত্রাসের বলি হয়েছে অসংখ্য যুবক। আর কয়েক মাস পরেই রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট। তার আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে এলাকা দখলের লড়াই। ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিরোধ তো রয়েছেই, খোদ শাসক দলের একাধিক গোষ্ঠীর মধ্যে যেভাবে খুনোখুনি হচ্ছে, তাতে পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কার কালো মেঘ দেখা যাচ্ছে বাংলার বুকে। এমন অবস্থা হয়েছে যে বসিরহাটে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল থামাতে গিয়ে পুলিশকে পর্যন্ত গুলি খেতে হয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মালদায় বোমা বিস্ফোরণের পাশাপাশি রাজ্যের একাধিক জেলা থেকে হিংসার খবর আসছে। মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে যেভাবে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এত হিংসার খবর সামনে এসেছে, তাতে চিন্তিত রাজ্য প্রশাসন। অথচ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার প্রশাসনিক আধিকারিকদের বলছেন বোমা-বন্দুক মুক্ত রাজ্য করতে হবে। জেলাভিত্তিক আগ্নেয়াস্ত্র কোথায় কোথায় রয়েছে তা খুঁজে বের করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশকে। যদিও ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ দেওয়া আর সেটিকে বাস্তবায়িত করার মধ্যে প্রচুর ফারাক রয়েছে। তাই গুটিকয়েক জায়গা থেকে অস্ত্র উদ্ধার হলেও বাংলার কোণায় কোণায় প্রচুর বোমা-গুলি-বারুদ যে মজুত রয়েছে, তা সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনাতেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। আর সেই সমস্ত ঘটনা নিয়ে যথারীতি শুরু হয়েছে চাপানউতোর পর্ব।
মালদায় বোমা বিস্ফোরণের পিছনে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের অভিযোগ করছে বিজেপি। পাল্টা তৃণমূলের অভিযোগ পঞ্চায়েত ভোটের আগে ঝাড়খণ্ডের দুষ্কৃতীদের দিয়ে বিজেপি বোমা মজুত করেছিল। আর বোমা বিস্ফোরণের পরেই মানিকচক থানার ওই গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েত জুড়ে থমথমে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কয়েক দিন আগেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপির ছামনাবুনিতে বল ভেবে বোমা নিয়ে খেলতে গিয়ে ফেটে দুই কিশোর জখম হয়েছিল। এছাড়া মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি থেকে আগ্নেয়াস্ত্র-সহ এক যুবক ধরা পড়েছে পুলিশের হাতে। বীরভূমের রামপুরহাটেও আগ্নেয়াস্ত্র-সহ এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সবমিলিয়ে এটা স্পষ্ট পঞ্চায়েত নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে ততই বোমা-গুলি-বন্দুক শব্দগুলি আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার দাবি করছেন এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচন অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে হবে। যদিও অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বিরোধীরা তাতে আশ্বস্ত হতে পারছে না। কারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তো দূরের কথা, গত পঞ্চায়েত ভোটে হাজার হাজার আসনে বিরোধীরা প্রার্থীই দিতে পারেনি। যদিও এবার রাজ্যে প্রধান তিন বিরোধী দল বিজেপি, সিপিএম ও কংগ্রেস এখন থেকেই পঞ্চায়েত ভোটে শাসক দলকে কড়া টক্কর দেবে বলে ঘোষণা করেছে। তাই রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, যেভাবে বিরোধীরাও এখন থেকে সুর চড়াচ্ছে তাতে আদৌ পঞ্চায়েত ভোট শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হবে তো? তাই পঞ্চায়েত ভোট শান্তিপূর্ণভাবে করা রাজ্য পুলিশের কাছে রীতিমতো বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে কাজে তারা কতটা সফল হয় এবং সেটাই দেখার।