হিজাব বিতর্কের নিষ্পত্তি হবে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চেই! ঐকমত্য হল না দুই বিচারপতির!

হিজাব বিতর্কের নিষ্পত্তি হবে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চেই! ঐকমত্য হল না দুই বিচারপতির!

নিজস্ব প্রতিনিধি: হিজাব বিতর্কের সমাধান হল না। সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ এ বিষয়ে সহমত পোষণ করতে পারেনি বলেই থমকে গিয়েছে রায়দান। এরপরই মামলাটি চলে গিয়েছে প্রধান বিচারপতি ইউ ইউ ললিতের বেঞ্চে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হিজাবৎ ব্যবহারের ঐতিহাসিক মামলায় দ্বিধাবিভক্ত সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ। ঐকমত্যে না পৌঁছতে পেরে অত্যন্ত সংবেদনশীল এই মামলাটিকে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য  পাঠানো হয়েছে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে। শীর্ষ আদালতের দুই বিচারপতি হেমন্ত গুপ্ত ও সুধাংশু ধুলিয়া হিজাব বিতর্ক নিয়ে দুই রকম মত প্রকাশ করেছেন। একজনের মতে কর্নাটক হাইকোর্টের শিক্ষা ক্ষেত্রে ধর্মীয় পোশাক বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে করা মামলাগুলি খারিজ করে দেওয়া উচিত। কিন্তু অপর বিচারপতি ভিন্ন মত পোষণ করে বলেন, “মহিলাদের এমনিতেই শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে নানা বাধা-বিপত্তি আছে। এক্ষেত্রে জোর করে কোনও সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিলে সেটা তাদের শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে।” এভাবেই কর্ণাটক হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেন তিনি। নিয়ম অনুযায়ী এখন বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চের আওতায় চলে যাবে। অর্থাৎ এবার প্রধান বিচারপতি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। বৃহস্পতিবার এই রায়ের পর কর্ণাটক সরকারের শিক্ষামন্ত্রী বি সি নাগেশ জানিয়েছেন, রায় খণ্ডিত। কাজেই রাজ্যের বিদ্যালয়ে আপাতত হিজাব নিষিদ্ধ থাকছে।

চলতি বছরের শুরুতে  শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব ও তার পাল্টা গেরুয়া উত্তরীয়ের ব্যবহার নিয়ে উত্তাল হয় কর্ণাটক। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যায় একাধিক দিন বন্ধ রাখতে হয়েছিল সমস্ত স্কুল কলেজ। জারি করতে হয়েছিল ১৪৪ ধারা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় পোশাক ব্যবহার নিয়ে কর্ণাটক হাইকোর্ট গত ১৫ মার্চ জানিয়েছিল হিজাব পরা ইসলাম ধর্মে অপরিহার্য নয়। সে জন্যই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘ইউনিফর্ম’ প্রাধান্য পাবে। কোনও ধর্মের কোনও ধর্মীয় পোশাক পরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসা যাবে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ইউনিফর্ম কোড মানতে হবে প্রত্যেককে। রাজ্য সরকার ইউনিফর্ম মানার নির্দেশ সব ধর্মের পক্ষে বাধ্যতামূলক করার যে দাবি জানিয়েছিল, কর্ণাটক হাইকোর্টের রায়ে তা মান্যতা পেয়েছিল। এই মামলার রায়কে চ্যালেঞ্জ করে মুসলিম মহিলারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব ব্যবহার বহাল রাখার জন্য আবেদন করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টে। এই মামলার রায় দিতে গিয়ে সংবিধানের ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদের উল্লেখ করে বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া বলেন, ‘হিজাব পরা বা না পরা মুসলিম ছাত্রীদের পছন্দের অধিকার। এর বেশি বা কম কিছুই নয়। আমার কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মেয়েদের শিক্ষার প্রসার।’ অন্যদিকে হিজাব নিষিদ্ধ হওয়ার বিরুদ্ধে যে আবেদন জমা পড়েছিল, তা খারিজ করে দেন বিচারপতি হেমন্ত গুপ্ত।

কর্ণাটক হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে।’ হিজাব মামলা নিয়ে ১১টি প্রশ্ন তৈরি করেছেন বলেও জানান তিনি। শবরীমালা মন্দির বিতর্কের মতো হিজাব মামলার শুনানিও নয় বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে হওয়া উচিত কিনা, সেই চর্চা শুরু হয়েছে। এ ছাড়াও, পড়ুয়ারা কী পোশাক পরবেন, তা কলেজ কর্তৃপক্ষই কি ঠিক করবেন, হিজাব নিষিদ্ধ হওয়ায় সংবিধানে উল্লিখিত ধর্মাচরণের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে কিনা, এই প্রশ্নও রয়েছে বলে জানান বিচারপতি গুপ্ত। পাশাপাশি সরকারি নির্দেশে নাগরিকদের সংবিধান স্বীকৃত মতপ্রকাশের অধিকার, গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার খর্ব হচ্ছে কিনা, সেই প্রশ্নও রয়েছে বলে জানান হেমন্ত গুপ্ত। অন্যদিকে বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া কর্ণাটক সরকারের নির্দেশ খারিজ করে বলেন, ‘হিজাব পরা বা না পরা একটা ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়। গ্রামীণ ভারতে একটি বাচ্চা মেয়েকে অনেক সময়ই অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। সেকথা মাথায় রেখেই যে প্রশ্নটা আমার মনে এল, তা হল কেন আমরা তার জীবনটাকে আরও কঠিন বানাচ্ছি?’ ফলে দুই বিচারপতি এই নিয়ে একমত হতে পারেননি। দুই বিচারপতির দুই ভিন্ন রায়ের পরই মামলাটি এবার সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির উচ্চতর বেঞ্চে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তাই প্রশ্ন, কোন পথে গড়াতে চলেছে হিজাব বিতর্ক? যে বিষয়টি নিয়ে একসময় শোরগোল পড়ে গিয়েছিল দেশজুড়ে, সেই মামলার ভবিষ্যতের দিকে নজর রয়েছে সকলেরই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen − four =