নিজস্ব প্রতিনিধি: হিমাচল প্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ শুক্রবার ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু গুজরাট নির্বাচনের দিনক্ষণ এদিন ঘোষণা করা হয়নি। যা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা। যদিও এদিন হিমাচলের ভোটের দিনক্ষণ প্রকাশ করার পর মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, গুজরাট বিধানসভার মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি। সেখানে হিমাচল প্রদেশ বিধানসভার মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৮ জানুয়ারি। তাই হিমাচলের নির্বাচনের দিনক্ষণ আগে ঘোষণা করা হয়েছে।
সেই সঙ্গে কমিশনের যুক্তি, হিমাচলে শীতকালে এতটাই ঠান্ডা পড়ে যে, একটু আগে নির্বাচন করে নিলে মানুষের সুবিধা হয়। তাই সেখানে আগে নির্বাচন করা হচ্ছে। উল্লেখ্য গুজরাটে কত কয়েক মাস ধরেই লাগাতার বিভিন্ন প্রকল্পের শিলান্যাস এবং উদ্বোধন কর্মসূচিতে সামিল হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহরা। আর এটা চলতেই থাকবে বলে বিরোধীরা মনে করছেন। তাই বিজেপিকে সুবিধা পাইয়ে দিতেই গুজরাট নির্বাচনের দিনক্ষণ শুক্রবার প্রকাশ করা হয়নি বলে বিরোধীদের অভিযোগ। কারণ নির্বাচন একবার ঘোষণা হয়ে গেলে সেখানে কোনও প্রকল্পের ঘোষণা বা উদ্বোধন করা যাবে না। কংগ্রেসের দাবি ২০১৭ সালেও একই ঘটনা ঘটেছিল। সেবার গুজরাট এবং হিমাচল প্রদেশে পৃথক দিনে ভোট হয়। যদিও ভোট গণনা হয়েছিল একই দিনে। কংগ্রেসের অভিযোগ গুজরাট নির্বাচনের আগে সেবার বিজেপি প্রচুর মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এবারও সেই একই ঘটনা ঘটবে বলে কংগ্রেস মনে করছে। অর্থাৎ আগামী কয়েক দিনে ভোটারদের মন জয় করতে গুজরাটে বহু প্রকল্পের ঘোষণা করা হবে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেসের যুক্তি দশ বছর আগে কেন্দ্রে যখন তারা ক্ষমতায় ছিল সেই সময় গুজরাট এবং হিমাচল প্রদেশের ভোট ঘোষণা হয়েছিল একই দিনে। কিন্তু বিজেপি শাসনকালে সেটা হচ্ছে না। তাই নির্বাচন কমিশন হিমাচলে আগে ভোট করা নিয়ে যে যুক্তি দিয়েছে তাতে সহমত হতে পারছে না কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা। এর পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন যে যুক্তি দিয়েছে তারও বিরোধিতা করছে কংগ্রেস-সহ অন্যান্য বিরোধী দল। উদাহরণ হিসেবে তারা গোয়া এবং উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের কথা তুলে ধরছে। বিরোধীদের দাবি চলতি বছরের শুরু থেকে যখন পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন ঘোষণা হয় তখন গোয়া ও উত্তরপ্রদেশে সরকার গড়ার প্রশ্নে ৬০ দিনের পার্থক্য ছিল। কিন্তু এরপরেও ওই দুটি রাজ্যে একসঙ্গেই ভোট ঘোষণা করা হয়েছিল। তাই বিরোধীরা নিশ্চিত প্রধানমন্ত্রী যাতে জনগণের মন জয় করতে আরও কিছু প্রকল্পের ঘোষণা করতে পারেন গুজরাটে গিয়ে, সেই লক্ষ্যেই বিজেপিকে বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দিতে ভোট ঘোষণা করা হয়নি।
এদিকে হিমাচলে ফের ক্ষমতায় আসার ব্যাপারে বিজেপি অনেকটাই নিশ্চিত। যদিও হিমাচলে পরপর দু’বার একই দলের ক্ষমতায় আসার নজির অত্যন্ত কম। তা সত্ত্বেও বিজেপি মনে করছে এই পাহাড়ি রাজ্যটিতে কংগ্রেস এবং আম আদমি পার্টির মধ্যে বিরোধী ভোট ভাগ হয়ে যাওয়ার সুবিধা তারা পাবে। কিন্তু গুজরাটের গ্রামীণ অঞ্চলের একটা বড় অংশ যেভাবে বিজেপির উপর ক্ষুব্ধ হয়ে রয়েছে নানা কারণে, তা নিয়ে চিন্তিত দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। অভিযোগ কৃষকরা খুব খারাপ অবস্থার মধ্যে রয়েছেন নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহদের রাজ্যে। তাই গুজরাটের ভোট নিয়ে শুক্রবারই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাসভবনে বিশেষ বৈঠকে বসেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। সব মিলিয়ে রাজনৈতিক মহল মনে করছে সম্ভবত এই সমস্ত কারণেই গুজরাটে নির্বাচনের দিন ঘোষণা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।