নিজস্ব প্রতিনিধি: অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ার পর বেহালায় প্রাক স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের একটি মঞ্চ থেকে বিষয়টি নিয়ে প্রথম মুখ খুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দল যে পুরোপুরি অনুব্রতর পাশেই রয়েছে সেই স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সভায় নেতারা ইডি, সিবিআই তথা কেন্দ্রকে নিশানা করে ঝাঁঝালো বক্তব্য রাখছেন। এই পরিস্থিতিতে অনুব্রতর সমর্থনে মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা গেল,” কেষ্টকে কেন গ্রেফতার করা হল? ওঁর দোষ কি? ওকে জেলে রেখে কী হবে?”
অর্থাৎ অনুব্রত ইস্যুতে দলকে যে তৃণমূল রাস্তায় নামাতে চাইছে সেটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে মমতার বক্তব্যে। সেই সঙ্গে তিনি বলেন,”১৬ আগস্ট খেলা হবে দিবস। ওইদিন থেকে খেলা শুরু হবে। মিছিল মিটিং প্রতিবাদ প্রতিরোধ শুরু হবে। সবাই মানুষকে সাহায্য করবেন। চায়ের দোকানে, লোকের বাড়িতে যাবেন। আমাদের পরাধীন করে রেখেছে। রাস্তায় নামতে হবে। নতুন করে রাজনৈতিক দিবস শুরু হবে। সেটা শুরু হবে খেলা হবে দিবস থেকে। বিজেপি দেখলেই বলবেন সবচেয়ে বড় চোর কে? বিজেপি সিপিএম কংগ্রেস ভাই ভাই। বাংলায় এদের ঠাঁই নাই”। উল্লেখ্য অনুব্রত গ্রেফতার হওয়ার পর এই প্রথমবার বিষয়টি নিয়ে মুখ খুললেন মমতা। আর অনুব্রতর সমর্থনে কথা বললেও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিধানসভা কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে তাঁর সম্পর্কে শুধুই বললেন, আইন আইনের পথে চলবে। মুখ্যমন্ত্রীর এদিনের কথাতেই স্পষ্ট, পার্থর পাশে না দাঁড়ালেও অনুব্রতর পাশে তাঁরা সকলেই রয়েছেন। এদিন অনুব্রতর অনেক প্রশংসা করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘ও কিছু চায়নি। সাংসদ, বিধায়ক কিছু হতে চায়নি। আমি ওকে রাজ্যসভায় পাঠাতে চেয়েছিলাম। ও রাজি হয়নি।’’ মমতা জানান, গত কয়েক বছর ধরে অনুব্রত নানা রকম শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। স্ত্রীকে হারিয়েছেন। এমনকি ক্যান্সার আক্রান্ত স্ত্রী নিজের চিকিৎসার সময়ে পাশে থাকার বদলে অনুব্রতকে পঞ্চায়েত নির্বাচনের কাজে মন দিতে বলেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী জোরের সঙ্গে বলেন, ‘‘বিজেপি আমায় ভয় পাচ্ছে। তাই সকাল থেকে কী ভাবে আমার ইমেজ নষ্ট করবে তার চেষ্টা চালিয়ে যায়।’’
উল্লেখ্য মুখ্যমন্ত্রীর কথায় তৃণমূলের অবস্থান রাজ্যবাসীর কাছে এতে স্পষ্ট হয়ে গেল। এটা পরিষ্কার পার্থ আর অনুব্রতকে তৃণমূল এক দৃষ্টিতে দেখছে না। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি পরিকল্পনা মাফিক কেন্দ্রীয় সরকার এসব ঘটাচ্ছে। তাই তাঁকে ক্ষোভের সঙ্গে আরও বলতে শোনা যায়, গরুপাচার হচ্ছে সীমান্ত দিয়ে। সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অধীনে থাকা বিএসএফের। কিন্তু প্রশ্ন একটাই, সিবিআই সূত্রে খবর পাওয়া গিয়েছে অনুব্রতর বিরুদ্ধে গরু পাচার সংক্রান্ত বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। এ ব্যাপারে সবে তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সেই জায়গা থেকে মুখ্যমন্ত্রী তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই কীভাবে অনুব্রতর হয়ে কথা বলছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। অতীতে দেখা গিয়েছে পুলিশকে বোমা মারার কথা বলেও অনুব্রত পার পেয়ে গিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন সময় আইন বিরুদ্ধ কথা বলার পরেও তাঁকে সামান্যতম সতর্ক পর্যন্ত করা হয়নি দলের পক্ষ থেকে। কারণ একটাই, অনুব্রতর সাংগঠনিক দক্ষতা। যেটা নেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মধ্যে। একের পর এক নির্বাচনে বীরভূমে তৃণমূলকে ভোট বৈতরণী অনায়াসে পার করিয়েছেন অনুব্রত। তাই তৃণমূল অনুব্রতর পাশে রয়েছে এবং আগামী দিনেও থাকবে। গত কয়েকদিন ধরে অনুব্রত ইস্যুতে বিরোধীদের কুরুচিকর ভাষায় আক্রমণ করে গিয়েছেন সৌগত রায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মদন মিত্র, অসিত মজুমদার-সহ তৃণমূলের বিধায়ক বা সাংসদরা। রাজ্যবাসীর প্রশ্ন এভাবে কথা বলার পরেও তাঁদের বিরুদ্ধে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব মুখ খুললেন না কেন? উত্তরটা স্পষ্ট, খোদ মুখ্যমন্ত্রী এখন অনুব্রতর পক্ষেই কথা বলছেন। তাই দলের সর্বস্তরের নেতা কর্মীরা বিরোধীদের যে এভাবেই তোপ দাগবেন, তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। অর্থাৎ অনুব্রতর পক্ষে আরও জোরালো ভাবে এবার বক্তব্য রাখতে দেখা যাবে তৃণমূল নেতাদের। সেটা নিজেই স্পষ্ট করেছেন তৃণমূল নেত্রী। ১৬ আগস্ট খেলা হবে দিবস থেকে সেই পর্ব আরও জোরদার হবে। তাই আগামী দিনে অনুব্রত এপিসোড কোন দিকে বাঁক নেয় সেদিকেই চোখ থাকবে সবার।