বছর ঘুরলেই ত্রিপুরায় নির্বাচন! বিজেপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কে? কী বলছে বিজেপির গোপন রিপোর্ট?

বছর ঘুরলেই ত্রিপুরায় নির্বাচন! বিজেপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কে? কী বলছে বিজেপির গোপন রিপোর্ট?

9156bdf73e43ade911f2d52d70f94b89

নিজস্ব প্রতিনিধি: বছর ঘুরলেই ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ফেব্রুয়ারিতে বিধানসভা ভোট হবে উত্তর-পূর্বের এই ছোট রাজ্যটিতে। ৬০ আসন বিশিষ্ট ত্রিপুরায় ম্যাজিক ফিগার ৩১। গত নির্বাচনে সিপিএমকে সরিয়ে ক্ষমতায় আসে বিজেপি। তখন মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন বিপ্লব কুমার দেব। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে সরকার চালানো নিয়ে বহু অভিযোগ ওঠার পর তাঁকে সরিয়ে মানিক সাহাকে মুখ্যমন্ত্রী করেছে বিজেপি। কিন্তু প্রশ্ন তাতেও কি মসনদ ধরে রাখা যাবে? ইতিমধ্যেই বিজেপি এ ব্যাপারে দলীয় স্তরে সমীক্ষা চালিয়েছে বলে খবর। আর সেটি তাদের একেবারেই খুশি করেনি।

সূত্রের খবর, সমীক্ষায় বিজেপি জানতে পেরেছে ত্রিপুরার  জনজাতি এলাকায় সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক অসন্তোষ রয়েছে। এছাড়া আগরতলার পাশাপাশি অন্যান্য শহুরে এলাকাতেও বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষের একাংশ।‌ যেভাবে বিজেপি শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ক্ষমতায় আসার আগে, তার অধিকাংশ পূরণ হয়নি বলে অভিযোগ করছেন ত্রিপুরার মানুষ। তাই বিজেপি যে সমীক্ষা চালিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে তারা ম্যাজিক ফিগারের ধারে কাছে পৌঁছতে পারছে না। জানা গিয়েছে একাধিক পেশাদার সমীক্ষক সংস্থা ত্রিপুরা নিয়ে যে সমীক্ষা চালিয়েছে তাতে বিজেপি ১৮ থেকে ২২টির বেশি আসন পাচ্ছে না।

গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ৩৬, তাদের জোট সঙ্গী আইপিএফটি ৮টি ও বমেরা ১৬টি আসনে জয় পেয়েছিল। কিন্তু গত দু’বছরে প্রদ্যোৎ কিশোর মানিক্য বর্মনের তিপ্রা মোথা পার্টি যেভাবে উঠে এসেছে তাতে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে বিজেপির কপালে। ত্রিপুরার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বলছে রাজ্যটিতে অন্তত পক্ষে ১৪টি বিধানসভা কেন্দ্রে জনজাতি সম্প্রদায়ের ভোট ফলাফল নিমেষে বদলে দিতে পারে। সেই জায়গা থেকে তিপ্রা মোথা বিধানসভা নির্বাচনের পর ক্ষমতায় কে আসবে তা ঠিক করার জায়গায় চলে আসবে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে। রাজনীতির কারবারিদের একাংশের দাবি ওই ১৪ টি আসনেই তিপ্রা মোথা জিতে গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। আর সেটা বোঝা গিয়েছিল ত্রিপুরায় স্থানীয় স্বশাসিত পরিষদের নির্বাচনের ফলাফল দেখেই। সেখানে খুব ভাল ফল করে চালকের আসনে রয়েছে তিপ্রা মোথা। তারাই পরিষদের ক্ষমতা দখল করেছে। এদিকে সুদীপ রায় বর্মন বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিয়ে আগরতলা থেকে জিতে ফের বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন।

সুদীপ ফিরে আসায় কংগ্রেস এখন ত্রিপুরায় অনেকটাই চাঙ্গা। তাই পশ্চিমবঙ্গের মতো ত্রিপুরাতেও যদি বাম-কংগ্রেসের জোট কোনও ভাবে হয়, তাহলে বিজেপির লড়াই অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে এখনও পর্যন্ত এই জোটের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। এর পাশাপাশি ত্রিপুরা পুরসভা নির্বাচনে তৃণমূল ২০ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছিল। কিন্তু এরপর চারটি বিধানসভা উপনির্বাচনে তৃণমূল ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গিয়েছে। প্রত্যেকটিতে তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। ত্রিপুরার রাজনৈতিক মহল নিশ্চিত যে বিধানসভা ভোটে তৃণমূল সামান্যতম ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারবে না। সেক্ষেত্রে ৪৬টি বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপির সঙ্গে মূল লড়াই হবে বাম ও কংগ্রেসের। আর বাকি ১৪টি কেন্দ্রে বিজেপিকে কঠিন লড়াইয়ের মুখে ফেলে দেবে তিপ্রা মোথা।

তবে শুধু সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ নয়, ত্রিপুরায় বিজেপির অন্যতম বড় সমস্যা হয়ে উঠেছে তীব্র গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। ত্রিপুরা থেকে লোকসভা নির্বাচনে জয় পেয়ে প্রতিমা ভৌমিক কেন্দ্রের প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন। এখন থেকেই তিনি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে একটি সূত্রে খবর। এছাড়া বিপ্লব দেবও চুপ করে বসে নেই। তিনিও হারানো জায়গা পুনরুদ্ধারের জন্য চেষ্টা শুরু করে দিয়েছেন। একই ভাবে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার লবিও সমানভাবে সক্রিয়। সব মিলিয়ে ত্রিপুরা রাজনীতিতে ক্ষমতার ভরকেন্দ্র কোথায় থাকবে তা নিয়ে দড়ি টানাটানি চলছেই। যদিও বিজেপির দাবি নির্বাচনে জয়ের পর কে মুখ্যমন্ত্রী হবেন সেটা পরের কথা। অন্যান্য রাজ্যের মতো ত্রিপুরাতেও ভোট হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নামে। আর মোদি ম্যাজিকে ভর করেই ত্রিপুরায় বিজেপি ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে বলে তাদের দাবি। সব মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গের পড়শি রাজ্য ত্রিপুরাতে ভোট ঘিরে টানটান উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *