নিজস্ব প্রতিনিধি: সদ্য কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় রাজ্যের শাসক দলের মান্যতা প্রত্যাহার করার ব্যাপারে যে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। এ বিষয়ে রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেছেন, নির্বাচন কমিশনকে তিনি বললেই তৃণমূলের প্রতীক বাতিল হয়ে যাবে এমন নয়। দেশে আইন রয়েছে। একই বক্তব্য রেখেছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা দলীয় মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে আদালত যদি এমন কোনও নির্দেশ দেয় তাহলে কী নির্বাচন কমিশন কোনও দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে? এই চর্চা যথারীতি শুরু হয়েছে রাজ্য জুড়ে। আর বিষয়টি নিয়ে নানা মত উঠে আসছে।
সেক্ষেত্রে মহারাষ্ট্রের শিবসেনা দলের প্রসঙ্গ উদাহরণ হিসেবে উঠে আসছে। শিবসেনা আড়াআড়ি ভেঙে গিয়েছে। কিন্তু তাদের প্রতীক তির-ধনুক উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠী পাবে, নাকি প্রতীক চিহ্নের মালিক হবে শিন্ডে গোষ্ঠী, সেটা নিয়ে চূড়ান্ত মীমাংসা এখনও হয়নি। তবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নির্বাচন কমিশন শিবসেনার দুটি গোষ্ঠীকে আলাদা আলাদা প্রতীক চিহ্ন ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। তবে কাউকেই তির-ধনুক প্রতীক দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ প্রতীক দেওয়ার ব্যাপারে কমিশন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলেও তাদের সেই ছাড়পত্র দিয়েছে কিন্তু সর্বোচ্চ আদালত। কিছুদিন আগের কথা, দিল্লি হাইকোর্টে সমতা পার্টির পক্ষ থেকে আবেদন করে বলা হয় তাদের টর্চ প্রতীক অন্য কোনও দলকে যেন না দেওয়া হয়। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে আদালত তাদের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। আদালত স্পষ্ট বলেছে যেহেতু তারা কোনও সর্বভারতীয় দল নয়, তাই তাদের প্রতীক সারা জীবনের মতো তাদের কাছে সম্পদ হিসেবে থেকে যাবে সেটা মনে করার কোনও কারণ নেই। অর্থাৎ এক্ষেত্রেও আদালত প্রতীক চিহ্নের ব্যবহার নিয়ে স্পষ্ট মতামত জানিয়েছে। সেই জায়গা থেকে আইনজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ বা অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত রাজনৈতিক দলের প্রতীক সংক্রান্ত বিষয়ে কোনও নির্দেশ দিতেই পারে। তবে সেটি উচ্চ আদালতে মান্যতা পাবে, নাকি খারিজ হয়ে যাবে সেটি পরের কথা। কিন্তু আদালত প্রয়োজনে হস্তক্ষেপ করতে পারে বলে সেই অংশ মনে করছেন। আবার বিরুদ্ধ মতও আছে। সেই অংশ মনে করছেন যেহেতু নির্বাচন কমিশন স্বয়ংশাসিত সংস্থা, তাই রাজনৈতিক দলগুলির প্রতীক চিহ্ন রেখে দেওয়া বা কেড়ে নেওয়ার ব্যাপারে তারাই একমাত্র সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে সেক্ষেত্রেও কোনও অভিযোগ আসতে হবে বা সেই ধরনের পরিঐ তৈরি হতে হবে, যাতে তারা বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হবে।
বছর খানেক আগে কংগ্রেসের প্রতীক হাত চিহ্ন নিয়ে বিজেপির এক নেতা কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। তাঁর যুক্তি ছিল বুথের ভিতরে বা কাছাকাছি রাজনৈতিক দলের প্রতীক চিহ্ন থাকার নিয়ম নেই। কিন্তু কংগ্রেসের ‘হাত’ প্রতীক চিহ্ন মানুষের শরীরের একটি অংশ হয়ে বুথের মধ্যে প্রবেশ করছে। তাই কংগ্রেসের প্রতীক চিহ্ন বাতিল করতে হবে বলে দাবি করেন তিনি। কিন্তু পত্রপাঠ সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছিল কমিশন। অর্থাৎ নির্বাচন কমিশনই বিষয়টি নিয়ে দ্রুততার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। তাই এটা পরিষ্কার তেমন কোনও গুরুতর পরিস্থিতি তৈরি হলে তবেই সেটি আদালতে গিয়ে গড়াবে, আর তখন আদালত বিষয়টি নিয়ে তার পর্যবেক্ষণ শোনাবে। সেক্ষেত্রে উভয় পক্ষের যুক্তি ও পাল্টা যুক্তির উপরেই আদালত তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে।