মানিক-ঘনিষ্ঠ তাপসকে ফের তলব ইডির, এবার কী গ্রেফতারি? সিঁদুরে মেঘ!

মানিক-ঘনিষ্ঠ তাপসকে ফের তলব ইডির, এবার কী গ্রেফতারি? সিঁদুরে মেঘ!

নিজস্ব প্রতিনিধি: শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে নাম জড়িয়েছে মানিক ভট্টাচার্যের ঘনিষ্ঠ তাপস মণ্ডলের। এবার এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) ফের তলব করল তাপস মণ্ডলকে।‌ আগামী ২ নভেম্বর তাঁকে বিধাননগরের সিজিও কমপ্লেক্সে ডেকে পাঠিয়েছে ইডি। নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও পলাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যকে ইডি গ্রেফতার করার পর তাঁকে জেরা করে বহু তথ্য মিলেছে বলে খবর। এরপরই ইডির রাডারে উঠে আসে তাপস মণ্ডলের নাম। তখন তাঁকে তলব করে বেশ কিছুক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা। তবে তাঁর জবাবে বেশ কিছু অসঙ্গতি রয়েছে বলে গোয়েন্দারা মনে করছেন। তার ভিত্তিতেই পুনরায় ডেকে পাঠানো হয়েছে তাঁকে। এই নিয়ে তিনবার ডেকে পাঠানো হল তাপসকে। আর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তলব করার পরেই বহুদিন পর পূর্ব মেদিনীপুরে নিজের গ্রামের বাড়িতে চলে যান তাপস। হঠাৎই বৃহস্পতিবার তাপস চলে গেলেন গ্রামের বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের মাইশোরাতে। এরপর পাতন্দা গ্রামে তাঁর টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ‘মিনার্ভা’তেও গিয়েছিলেন তিনি। তবে সন্ধ্যার আগেই তিনি গ্রামের বাড়ি ছেড়ে চলে যান বলে খবর। এর আগে গ্রামের বাড়িতে গেলে তিনি পরিচিতদের সঙ্গে দেখা  সাক্ষাৎ করতেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার রীতিমতো চুপিসাড়ে গিয়েছেন এবং চুপিসাড়েই এলাকা ছেড়েছেন। তাপসের এই আচরণ নিয়ে যথারীতি পূর্ব মেদিনীপুর জেলা জুড়ে ব্যাপক চর্চা শুরু হয়েছে।

এদিকে কী কারণে তাঁকে ফের তলব করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা? সূত্রের খবর, ২০১৮-২০, ২০১৯-২১ এবং ২০২০-২০২২ শিক্ষাবর্ষে ডিইএলইডি কলেজগুলিতে অফলাইনে কত রেজিস্ট্রেশন হয়েছে, তার হিসেব চাওয়া হয়েছে তাপসের থেকে। ইডির দাবি, ৬০০টি কলেজে অফলাইনে রেজিস্ট্রেশনের জন্য ছাত্র পিছু পাঁচ হাজার করে টাকা নেওয়া হতো। এই টাকা যেত মানিকের কাছে, এমনটাই মনে করছে ইডি। ফলে কত সংখ্যক ছাত্রের অফলাইনে রেজিস্ট্রেশন হয়েছিল এবং মোট কত টাকা নেওয়া হয়েছিল, তা জানতেই আবার তাপসকে তলব করা হয়েছে বলে খবর। 

বেশ কিছু দিন ধরেই শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডির আতস কাচের নীচে রয়েছেন মানিক ভট্টাচার্যের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত তাপস মণ্ডল। এর আগে গত রবিবার তাঁকে তলব করা হয় অনলাইন ক্লাস সম্পর্কে বিশদ জানতে। ইডির দাবি কোভিড কালে অনলাইন ক্লাস নিয়ে প্রচুর টাকা নয়ছয় করা হয়েছিল। অল বেঙ্গল টিচার্স ট্রেনিং অ্যাচিভারস অ্যাসোসিয়েশনের (এবিটিটিএএ) প্রেসিডেন্ট হিসেবে রয়েছেন তাপস মণ্ডল। এই সংস্থার অধীনে বহু কলেজ রয়েছে যেখানে ডিএলএড-এর কোর্স করানো হয়। করোনা পরিস্থিতিতে এবিটিএএ-র পক্ষ থেকে ডিএলএড-এর চল্লিশ হাজার পড়ুয়ার কাছ থেকে মাথাপিছু ৫০০ টাকা করে নিয়ে অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়। টালিগঞ্জের একটি সংস্থা সেটির দায়িত্ব পায়। প্রায় দু কোটি টাকার চুক্তি করা হয়েছিল। এই টাকা তুলে কোথায় পাঠানো হয়েছিল, কাকে পাঠানো হয়েছিল এই সমস্ত তথ্য রবিবার তাপসের কাছ থেকে ইডি আধিকারিকরা জানতে চান বলে খবর। জেরায় তাপসের জবাবে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন ইডি আধিকারিকরা। এরপরই তাঁকে পুনরায় তলব করা হয়েছে। 

যদিও তাপস দাবি করেছেন যে, অনলাইন ক্লাসের সঙ্গে মানিক ও তাঁর ছেলের কোনও যোগ নেই। কিন্তু, ইডির দাবি, মানিক-পুত্রের সংস্থার মাধ্যমেই অনলাইন ক্লাস হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে  তাপসকে পুনরায় জেরা করতে চান ইডি আধিকারিকরা। আর সেই বিষয়টি নিয়েই জল্পনা চলছে যে এবার হয়ত তাপসকে গ্রেফতার করা হতে পারে। তাই এ ব্যাপারে জল এখন কতদূর গড়ায় সেদিকেই চোখ থাকবে সবার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

12 − 6 =