Aajbikel

মিঠুন আছেন বলেই কি নন্দনে প্রদর্শিত হচ্ছে না দেবের 'প্রজাপতি'? বাম থেকে তৃণমূল, চলেছে ট্র্যাডিশন!

 | 
মিঠুন আছেন বলেই কি নন্দনে প্রদর্শিত হচ্ছে না দেবের 'প্রজাপতি'? বাম থেকে তৃণমূল, চলেছে ট্র্যাডিশন! 

নিজস্ব প্রতিনিধি: বর্তমানে দুই নায়ক রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভিন্ন মেরুতে রয়েছেন। যদিও তাঁদের মধ্যে কোনও মানসিক দূরত্ব নেই। উল্টে বয়সের বহু ফারাক থাকলেও রয়েছে নিবিড় বন্ধুত্ব। কিন্তু তাঁদের রাজনৈতিক পরিচয় ভিন্ন হওয়ায় তার মাসুল দিতে হচ্ছে দু'জনকেই। তাই মিঠুন চক্রবর্তী এবং দেব অভিনীত 'প্রজাপতি' ছবিটি 'নন্দন' প্রেক্ষাগৃহে স্থান পায়নি প্রদর্শিত হওয়ার জন্য। অন্তত সমালোচকদের এমনটাই দাবি। যদিও তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। কিন্তু তাতে সমালোচনা বন্ধ হয়নি। বিরোধীরা নিশ্চিত যে বিজেপিতে রয়েছেন বলেই মিঠুনের 'প্রজাপতি' ছবিটি  'নন্দন' প্রেক্ষাগৃহে রিলিজ করতে দেওয়া হয়নি। আর গোটা বিষয়টি নিয়ে বেশ হতাশ তৃণমূল সাংসদ তথা এই ছবির অন্যতম অভিনেতা দেব। ইতিমধ্যেই তিনি বিষয়টি নিয়ে ইঙ্গিত পূর্ণ টুইট করেছেন। তাতে তিনি লিখেছেন,"এবারের জন্য তোমায় মিস করব নন্দন। কোনও সমস্যা নেই। ফের দেখা হবে আগামীতে।"

অন্যদিকে বিজেপি যথারীতি বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলকে তীব্র আক্রমণ করতে শুরু করেছে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ, রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদাররা বিষয়টি নিয়ে নিশানা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সরকারকে।

মিঠুন একটা সময় তৃণমূলের সাংসদ ছিলেন। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তিনি বিজেপিতে যোগদান করার পরেই তাঁর সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠে। সেই সময় নির্বাচনী প্রচার সভাগুলিতে নিজের জনপ্রিয় ছবির ডায়ালগ 'এক ছোবলে ছবি' বলার জন্য মিঠুনের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ পর্যন্ত দায়ের করেছিল তৃণমূল। তৃণমূলের অভিযোগ এভাবে মিঠুন নাকি খুনের হুমকি দিচ্ছিলেন। যদিও পরবর্তীতে সেই মামলা কলকাতা হাইকোর্টে গেলে সেটি ধোপে টেকেনি। একই ভাবে বামমনস্ক চিত্র পরিচালক অনীক দত্তের 'ভবিষ্যতের ভূত' ছবিটি পশ্চিমবঙ্গের কোনও হলে রিলিজ হতে পারছিল না তৃণমূলের বাধায়, এমনটাই অভিযোগ করেছিলেন পরিচালক। যদিও পরবর্তীকালে আদালতের নির্দেশে ছবিটি কয়েকটি হলে মুক্তি পায়। সেই ছবিতে নাম না করে শাসক দলকে আক্রমণ করা হয়েছিল বলে সকলেই জানেন। আর সেই কারণেই ছবিটি তৃণমূলে রোষের মুখে পড়ে। আবার সেই অনীক দত্তেরই ছবি 'অপরাজিত' একইভাবে 'নন্দন' প্রেক্ষাগৃহে রিলিজ করা যায়নি। শাসক দলের হয়ে যে সমস্ত শিল্পীকে কথা বলতে শোনা যায় না, তাঁদের রাজ্য সরকার প্রাপ্য সম্মান দেয় না বলে অভিযোগ। তাই রাজ্যের 'বঙ্গ সম্মান' প্রদর্শন মঞ্চে ডাক পান না তৃণমূল বিরোধী শিল্পী বা অভিনেতা-অভিনেত্রীরা।

একই ছবি দেখা গিয়েছিল বাম আমলেও। ব্রাত্য বসুর নাটক 'উইঙ্কল টুইঙ্কল' দীর্ঘদিন প্রদর্শিত হতে পারেনি বামেদের বাধায়, এমনটাই অভিযোগ ওঠে। পরে অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পর সেই নাটক প্রদর্শিত হয়েছিল। ‌এছাড়া বাম আমলে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে আলেকজান্ডার স্কুরভ পরিচালিত 'টরাস' ছবিটির প্রর্দশন নিয়ে ব্যাপক সমস্যা দেখা দেয়। সেই ছবিতে লেনিনকে যেভাবে দেখানো হয়েছিল তার বিরোধিতা করে রাস্তায় নামে বাম সংগঠনগুলি। তখন বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে। শেষ পর্যন্ত তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের হস্তক্ষেপে ছবিটি প্রদর্শিত হয়েছিল। এর পাশাপাশি মহানায়ক উত্তমকুমার বাম বিরোধী ছিলেন বলে মৃত্যুর পর তাঁকে প্রাপ্য সম্মান দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছিল সব মহল থেকে। তাই এটা স্পষ্ট শাসকের দোষের মুখে বারবার শিল্পী ও শিল্পকে পড়তে হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে মিঠুন-দেব অভিনীত 'প্রজাপতি' ছবিটি। এমনকী এক ধাপ এগিয়ে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ দাবি করেছেন, এই ছবিতে মিঠুনের অভিনয় অত্যন্ত দুর্বল বলে ছবিটি নাকি চলছে না। দেব ভাল অভিনয় করলেও মিঠুনের অভিনয় নাকি খুবই খারাপ হয়েছে, এমনটাই দাবি কুণালের। এভাবেই 'প্রজাপতি' ছবিটি নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে বিতর্ক এখন তুঙ্গে। ওয়াকিবহাল মহলের প্রশ্ন, শিল্পীর সঙ্গে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব রয়েছে বলেই তাঁকে একঘরে করে দিতে হবে? সেই কারণেই কি কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধনী মঞ্চে ডাক পাননি মিঠুন? প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।

Around The Web

Trending News

You May like