পাহাড় রাজনীতিতে নয়া মোড়, তৃণমূল ছাড়লেন বিনয় তামাং! এবার হাত মেলাবেন বিমল গুরুংয়ের সঙ্গে?

পাহাড় রাজনীতিতে নয়া মোড়, তৃণমূল ছাড়লেন বিনয় তামাং! এবার হাত মেলাবেন বিমল গুরুংয়ের সঙ্গে?

নিজস্ব প্রতিনিধি: নতুন করে কি দার্জিলিং তথা পাহাড় অশান্ত হয়ে উঠবে? এই জল্পনা শুরু হয়েছে পাহাড় রাজনীতিতে সমীকরণ বদলে যাওয়ার পর থেকেই। গত কয়েক বছরে পাহাড় রাজনীতিতে বারবার পট পরিবর্তন হয়েছে। বছরের শেষে ফের একবার পাহাড় রাজনীতিতে রং বদলের ঘটনা ঘটল। তৃণমূলের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করলেন পাহাড়ের অন্যতম রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেতা বিনয় তামাং। তিনি তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর পাহাড় রাজনীতিতে বদল ঘটে। প্রভাব বাড়তে থাকে অনীত থাপা ও তাঁর অনুগামীদের। সেই সময় থেকেই কোণঠাসা হতে থাকেন বিনয়। এরপর অনীত থাপার হাতে চলে যায় জিটিএ। এখানেই শেষ নয়, বুধবার আস্থা ভোটে দার্জিলিং পুরসভাও অজয় এডওয়ার্ডের হামরো পার্টির হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে অনীত থাপার দল। অর্থাৎ পাহাড় রাজনীতিতে এই সময় অনীত  থাপার প্রভাব যে আরও বহু গুণে বেড়ে গিয়েছে তা স্পষ্ট। সবচেয়ে বড় কথা এদিনের আস্থা ভোটে অনীতের দলকে তৃণমূলের দুই  কাউন্সিলর সমর্থন জানিয়েছে। আর সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি বিনয়। এরপরই তৃণমূল থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করেছেন তিনি। বুধবার এটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিনয় জানিয়েছেন,” তৃণমূলের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করলাম। তৃণমূল ইচ্ছে করলে আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক পদক্ষেপ করতেই পারে। কিন্তু মনে রাখতে হবে এই মুহূর্তে দার্জিলিংয়ের গণতন্ত্র ভয়ঙ্কর বিপদের মধ্যে রয়েছে। পাহাড় এবং দার্জিলিংয়ের সমতলের বেশ কয়েকজন নেতা সীমান্ত পারের বিভেদকামী শক্তির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছেন। যা দেশের নিরাপত্তা এবং অখণ্ডতার জন্য বিপজ্জনক বলেই মনে করি”। সেই সঙ্গে পাহাড়ের দুর্নীতি দূর করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পদক্ষেপ করার জন্য আবেদন জানিয়েছেন বিনয়।

এই পরিস্থিতিতে বিনয় তাঁর পুরনো দল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার ফিরে যাবেন বলে শোনা যাচ্ছে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে পাহাড়ে গণতন্ত্র ফেরানোর দাবিতে মঙ্গলবার দিল্লিতে ধর্নায় বসেছিলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নেতা বিমল গুরুং। ঠিক তার পরদিনই বিনয় পাহাড়ের গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন। কিছুদিন আগেই পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবি নিয়ে পাহাড়ের বেশ কয়েকজন নেতা দিল্লিতে বৈঠক করেছিলেন। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিমল এবং বিনয় দু’জনেই। তখন তৃণমূল জানিয়েছিল তাদের অনুমতি ছাড়াই সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিনয়। তখনই বোঝা যায় বিনয় বেশিদিন হয়ত আর তৃণমূলে থাকবেন না। বুধবার সেটাই সত্যি হয়েছে।

বছর পাঁচেক আগে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে পাহাড় যেভাবে উত্তপ্ত হয়েছিল সেই স্মৃতি এখনও সবার কাছে টাটকা। বিমল গুরুংয়ের নেতৃত্বে রক্তক্ষয়ী আন্দোলন হয়েছিল পাহাড়ে। রাজ্যের এক পুলিশকর্মীর মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছিল। এরপর বিমলের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ধারায় মামলা দায়ের করে রাজ্য। তখন দীর্ঘদিন পাহাড় ছেড়ে অন্যত্র আত্মগোপন করেছিলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার এই নেতা। এরপর রাজ্যে একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিমল গুরুং সাংবাদিক সম্মেলন করে তৃণমূলের পাশে থাকার বার্তা দেন। জানান মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ফের তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দেখতে চান। এরপর পাহাড়ে গিয়ে নতুন করে জমি দখলের চেষ্টা করেন। কিন্তু ততটা সাফল্য পাননি তিনি। সেখানে অনীত থাপা পাহাড়ে নিজের ভিত শক্ত করে নিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে নতুন করে পাহাড়ে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলন গড়ে উঠবে কিনা সেই নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। একটি সূত্রে খবর নিজেদের হারানো জায়গা ফিরে পেতে বিমলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিনয় তামাং সেই দাবিতে নতুন করে সোচ্চার হয়ে পাহাড় রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে চাইবেন। যদিও এ বিষয়ে বিনয়-বিমলরা কোনও মন্তব্য করেননি। তাই পাহাড় রাজনীতি আগামী দিনে কোন দিকে যায় সেটাই দেখার।- ফাইল ছবি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × one =