নিজস্ব প্রতিনিধি: ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের পর হাওড়া স্টেশনে বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। ফের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উদ্দেশ্য করে বিজেপি সমর্থকদের জয় শ্রীরাম ধ্বনি দিতে শোনা গেল। লক্ষ্য একটাই, মুখ্যমন্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করা। আর সেই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে মুখ্যমন্ত্রী সেদিন মূল অনুষ্ঠান মঞ্চে ওঠেননি। মঞ্চের পাশে চেয়ারে বসে মাইকে নিজের বক্তব্য রেখেছিলেন তিনি। সেই ঘটনা নিয়ে যথারীতি রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে উঠেছে। এখন প্রশ্ন জয় শ্রীরাম শব্দবন্ধটি ধর্মীয়, সামাজিক নাকি রাজনৈতিক স্লোগান হিসেবে ব্যবহার করছেন বিজেপি কর্মীরা? বিশেষজ্ঞরা বলছেন জয় শ্রীরাম একটি সংস্কৃত অভিব্যক্তি। যার দ্বারা ভগবান রামের বিজয় বোঝানো হয়ে থাকে। কিন্তু জনসংঘ থেকে ১৯৮০ সালে ভারতীয় জনতা পার্টি অর্থাৎ বিজেপি তৈরি হওয়ার পর এই জয় শ্রীরাম রাজনৈতিক স্লোগান হিসেবেই ব্যবহৃত হতে শুরু করেছে।
এভাবে বিজেপি জয় শ্রীরাম বলে সেটিকে হিন্দু জাতীয়তাবাদী আকার দিতে চাইছে বলেই রাজনৈতিক মহল মনে করে। যদিও উত্তর ভারতের রাজ্যগুলিতে জয় শ্রীরাম বলে একে অন্যকে সম্ভাষণ করতে শোনা যায়। যেমন বৃন্দাবনে কেউ কাউকে দেখলেই ‘রাধে রাধে’ বলছেন, এটা দীর্ঘদিন ধরেই প্রচলিত রয়েছে। কিন্তু যাই হোক না কেন এটা স্পষ্ট যে বিজেপি কর্মী সমর্থকরা জয় শ্রীরামকে রাজনৈতিক স্লোগান হিসেবেই ব্যবহার করে চলেছেন। তাই সরকারি অনুষ্ঠানে এই স্লোগান বাঞ্ছনীয় নয় বলেই সকলে মনে করেন। ভগবান শ্রীরাম কোটি কোটি মানুষের আরাধ্য দেবতা হলেও যেভাবে জয় শ্রীরাম স্লোগান দেওয়া হচ্ছে সেটিকে ‘রাজনৈতিক টিজার’ হিসেবেই দেখছেন সাধারণ মানুষ। তাই এই স্লোগান ধর্মীয় বা সামাজিক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে না বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে যে ভঙ্গিমায় জয় শ্রীরাম স্লোগান বিভিন্ন সময় দেওয়া হয়েছে, সেটি পুরোপুরি রাজনৈতিক টিজার হিসেবেই ব্যবহৃত হয়েছে বলে রাজনীতি কারবারিদের একাংশের মত।
প্রত্যাশিতভাবেই এই বিষয়টির বিরোধিতা করেছে বিজেপি বিরোধী দলগুলি। তৃণমূলের পাশাপাশি সিপিএম ও কংগ্রেসও ঘটনার বিরোধিতা করেছে। এ বিষয়ে তৃণমূলের বক্তব্য, সরকারি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বক্তব্য রাখার সময় তো এই স্লোগান কেউ দিচ্ছেন না। তাই তৃণমূল নিশ্চিত উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করে এই স্লোগান দেওয়া হচ্ছে। যদিও বিজেপির প্রশ্ন ভগবান রামের নাম করলে কেউ বিরক্ত হবেন কেন? তাই বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনাই করছে গেরুয়া শিবির। সেই সঙ্গে বিজেপির বক্তব্য তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিচ্ছেন। তাহলে সেটিকেও তো রাজনৈতিক স্লোগান হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। তাই গোটা বিষয়টি নিয়ে দু’পক্ষের তরজা এখন তুঙ্গে। এই পরিস্থিতিতে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে আগামী দিনে ফের যদি মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে এমন স্লোগান বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা দেন, তাহলে তাঁর উচিত হবে কোনও রকম প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে সেটিকে পুরোপুরি অবজ্ঞা করা। তাহলে পরবর্তীকালে হয়ত এই স্লোগান দেওয়া আপনা আপনিই বন্ধ হয়ে যাবে। তাই আগামী দিনে জয় শ্রীরাম স্লোগান নিয়ে নতুন করে আবার বিতর্ক তৈরি হয় কিনা সেটাই দেখার। – প্রতীকী ছবি