নিজস্ব প্রতিনিধি: সাম্প্রতিককালে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি তথা প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে যে আপত্তিকর কথা বলেছেন তা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। উল্লেখ্য একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের স্লোগান ছিল বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়। সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে কটাক্ষ করে দিলীপ ঘোষ বলেছেন, “বাংলায় বলেন বাংলার মেয়ে। গোয়ায় গিয়ে বলেন গোয়ার মেয়ে। বাপ-মায়ের ঠিকানা নেই নাকি। যেখানে যা ইচ্ছা বলে দেবেন, এটা হয় নাকি?” স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হয়েছে তৃণমূল। এই ইস্যুতে রাজ্যপালের কাছে দরবার করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তবে ইতিহাস বলছে শুধু বিজেপি নয়, এ দোষে দুষ্ট কম বেশি সকলেই।
প্রবাদপ্রতিম সিপিএম নেতা প্রমোদ দাশগুপ্ত সত্তরের দশকে একটি ঘটনা সম্পর্কে অত্যন্ত কুরুচিকর ভাষায় পুলিশ সম্পর্কে বলেছিলেন, “পুলিশের বন্দুকে কি নিরোধ পরানো আছে? না হলে গুলি বেরোচ্ছে না কেন?” যা নিয়ে সেই সময় রাজ্যজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এর পাশাপাশি অতীতে বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে সংবাদপত্রে লেখালেখি নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় সিপিএম নেতা বিমান বসুকে সাংবাদিকদের ‘বরাহনন্দন’ বলেছিলেন। এরপর তৎকালীন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতিকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, “লালা বাংলা ছেড়ে পালা”। এমনকী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ অঙ্গভঙ্গি করেছিলেন তিনি। যদিও পরে তিনি ক্ষমা চেয়েছিলেন ঘটনাটি নিয়ে। আর সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় সিপিএম নেতা বিনয় কোঙার সমাজকর্মী মেধা পাটেকরকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন সেখানে গেলে মহিলারা তাঁকে পশ্চাৎদেশ দেখাবেন। একজন মহিলা সম্পর্কে বিনয় কোঙার যে ভাষা ব্যবহার করেছিলেন তা নিয়ে সেই সময় সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। এছাড়া সিঙ্গুর আন্দোলনের সময় আরামবাগের তৎকালীন সিপিএম সাংসদ অনিল বসু তখনকার বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চুলের মুঠি ধরে হিড় হিড় করে টেনে নিয়ে যাওয়ার কথাও বলেছিলেন। বামেদের কু-কথার তালিকা এখানেই শেষ নয়। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় ব্রিটিশ পুলিশের লাঠির আঘাতে প্রবাদপ্রতিম কংগ্রেস নেতা অতুল্য ঘোষের একটি চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তাই কালো চশমা পরে থাকতেন তিনি। কিন্তু ভাবতেও খারাপ লাগে সেই সময় বিরোধী বামেরা তাঁকে ‘কানা অতুল্য’ বলে কটাক্ষ করতেন। সঙ্গে বলা হতো ‘কানা বেগুন’। এটা কতটা কুরুচিকর সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
কু-কথা বলার অভিযোগ একাধিক বার উঠেছে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও। ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে একটি নির্বাচনী প্রচারসভায় নরেন্দ্র মোদিকে উদ্দেশ্য করে মমতাকে বলতে শোনা গিয়েছিল কোমরে দড়ি বেঁধে ঘোরানোর কথা। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে তুই-তোকারি সম্বোধন করে মমতা একাধিকবার আক্রমণ করেছেন বলে অভিযোগ। এছাড়া বিরোধীদের উদ্দেশ্য করে একটি সভায় মমতা বলেছিলেন, “মানুষের কোভিড হয়েছে, একটা টাকা দেয়নি। বলছে আমফানের টাকার হিসেব চাই। তুই টাকা দিয়েছিস যে তোকে হিসেব দেব!” আর তাপস পালের কু-কথা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে এখনও চর্চা হয়। কৃষ্ণনগরের তৎকালীন সাংসদ প্রয়াত তাপস পাল বিরোধী দলের মহিলা সদস্যদের ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে ধর্ষণ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। যা নিয়ে আলোড়ন পড়ে যায় রাজ্যে রাজনীতিতে। পরে চাপে পড়ে তিনি ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়েছিলেন। তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, অনুব্রত মণ্ডল-সহ অনেককেই একাধিকবার আপত্তিকর ভাষা প্রয়োগ করতে দেখা গিয়েছে। বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ একটা সময় সুশীল সমাজকে কুকুর বলে কটাক্ষ করেছিলেন। গত বিধানসভা নির্বাচনের সময় দিলীপ ঘোষের পাশাপাশি বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসুকে হুমকি দিয়ে বলতে শোনা যায় জায়গায় জায়গায় শীতলকুচি হবে। আপত্তিকর কথা বলতে শোনা গিয়েছিল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকেও। ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পর দিল্লি জুড়ে শিখ নিধন শুরু হয়। তখন রাজীব গান্ধী বলেছিলেন একটা বড় গাছ পড়লে তার প্রভাবে কিছু তো হবেই! তাই এটা স্পষ্ট রাজনীতিতে কু-কথা বলার ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে। কবে তা বন্ধ হবে সেটা বলা খুবই কঠিন।