উত্তরপ্রদেশে ‘বুলডোজার ওষুধ’, যোগীর অস্ত্র মধ্যপ্রদেশেও! এটাই কি বিজেপির আসল পন্থা?

উত্তরপ্রদেশে ‘বুলডোজার ওষুধ’, যোগীর অস্ত্র মধ্যপ্রদেশেও! এটাই কি বিজেপির আসল পন্থা?

a6528f6e334d6ca8af7f2f38579bbec1

নিজস্ব প্রতিনিধি:  দুষ্কৃতী রাজ বন্ধ করতে প্রয়োগ করতে হবে বুলডোজার। উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনের এটাই অন্যতম প্রধান অস্ত্র হয়ে উঠেছে।

২০১৭ সালে প্রথমবার উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর যোগী আদিত্যনাথ স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে তিনি কোনও কিছুর সঙ্গে আপস করবেন না। দুষ্কৃতী রাজ রুখতে প্রথমবার ক্ষমতায় এসেই তিনি শুরু করে দেন বুলডোজার দাওয়াই। সেই প্রক্রিয়া চলছে। যদিও সমালোচকরা উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনের এই ভূমিকার নিন্দা করছে। কিন্তু নিজের সিদ্ধান্তে অটল যোগী। উল্লেখ্য হজরত মহম্মদকে নিয়ে বহিষ্কৃত বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মা যে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন তা নিয়ে বহু রাজ্যে অশান্তি অব্যাহত। তবে অশান্তি বন্ধ করতে প্রথম থেকেই কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন। সেক্ষেত্রে দুষ্কৃতীদের বাড়ি বুলডোজার চালিয়ে ভেঙে দিচ্ছে প্রশাসন। সঙ্গে চলছে ব্যাপক হারে ধরপাকড়। উল্লেখ্য কিছুদিন আগেই কানপুরে ভয়াবহ হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। সেই বিক্ষোভের মূল অভিযুক্তের এক আত্মীয়ের বাড়ি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে কানপুরের জয়েন্ট কমিশনার  অফ পুলিশ আনন্দ প্রকাশ তিওয়ারি জানিয়েছেন, “ হিংসার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত জাফর হায়াত হাশমির ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির বাড়ি ভেঙে দিয়েছে কানপুর ডেভেলপমেন্ট অথরিটি। আইন মেনেই এই বাড়ি ভাঙার কাজ করা হয়েছে।” এছাড়া আরও কয়েকটি ক্ষেত্রে ‘বুলডোজার অস্ত্র’ প্রয়োগ করেছে যোগী প্রশাসন। দুষ্কৃতীদের যে কোনও ভাবেই রেয়াত করা হবে না তা প্রতি মুহূর্তে এভাবেই বুঝিয়ে দিচ্ছেন যোগী। দিন কয়েক আগের কথা, যোগী আদিত্যনাথের মিডিয়া উপদেষ্টা মৃত্যুঞ্জয় কুমারকে একটি বুলডোজারের ছবি দিয়ে টুইট করতে দেখা যায়। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, “হামলাকারীদের মনে রাখতে হবে প্রত্যেক শুক্রবারের পরে কিন্তু শনিবার আসে।” স্বাভাবিকভাবেই এই টুইট নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তবে এই প্রথম নয়, এর আগেও একাধিকবার দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে বুলডোজার চালাতে দেখা গিয়েছে উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনকে। গত বিধানসভা নির্বাচনে এই বিষয়টিকে হাতিয়ার করে প্রচারে নেমেছিল বিজেপি। বিজেপির দাবি যেভাবে বুলডোজার চালিয়ে অপরাধীদের শায়েস্তা করা হচ্ছে তাতে রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট করার সাহস পাবে না দুষ্কৃতীরা। সেই সূত্রে প্রশংসাসূচক ভাবে যোগীকে ‘বুলডোজার বাবা’ রূপে তুলে ধরছে উত্তরপ্রদেশ বিজেপি। এবার ফের সেই রাস্তাতেই নতুন করে হাঁটছে উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন। সবচেয়ে বড় কথা মধ্যপ্রদেশেও দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ‘বুলডোজার ওষুধ’ প্রয়োগ করা হচ্ছে। সাম্প্রতিককালে মধ্যপ্রদেশের একাধিক জায়গায় দুষ্কৃতীদের বাড়ি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সামনের বছর মধ্যপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন। তাই এখন থেকেই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কঠোর পদক্ষেপ করতে পিছপা হচ্ছে না শিবরাজ সিং চৌহান প্রশাসন। আর সেখানেও যোগী আদিত্যনাথের ‘বুলডোজার মডেল’ বেশ প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। সব মিলিয়ে অপরাধ দমনে যোগীর ‘বুলডোজার অস্ত্র’ সাড়া ফেলে দিয়েছে দেশজুড়ে।

কিন্তু যোগীর এই ভূমিকার নিন্দা করছেন বহু মানুষ। এলাহাবাদ হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি গোবিন্দ মাথুর স্পষ্ট জানিয়েছেন এভাবে বুলডোজার দিয়ে বাড়ি ভেঙে ফেলা সম্পূর্ণ বেআইনি কাজ হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন যুক্তি দিচ্ছে ওই বাড়িগুলি বেআইনি বলে ভেঙে ফেলা হচ্ছে। আর সেই বিষয়টি নিয়েই গোবিন্দ মাথুর একহাত নিয়েছেন যোগী প্রশাসনকে। তাঁর কথায়, ভারতে বেআইনিভাবে নির্মিত বাড়ির সংখ্যা এক কোটির বেশি। তার সবগুলিই কী এভাবে ভেঙে ফেলা হচ্ছে? সেইসঙ্গে মাথুর বলেছেন পুলিশ হেফাজতে থাকা ব্যক্তির বাড়ি এভাবে ভেঙে ফেলা সম্পূর্ণ অনৈতিক। বলাবাহুল্য বুলডোজার প্রসঙ্গে মাথুরের এই যুক্তি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। কিন্তু বিজেপি চাইছে এভাবে বুলডোজার চালিয়ে পপুলার পলিটিক্স করে মানুষের মন জয় করতে। তবে কি এটাই গেরুয়া শিবিরের অন্যতম ট্রেন্ড হয়ে গেল? এই প্রশ্ন অবধারিতভাবে উঠছে। আর সেইসঙ্গে এটাও স্পষ্ট যে বুলডোজার চালানো নিয়ে এখনই পিছু হটবে না যোগী প্রশাসন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *