Aajbikel

বাংলা এখনও বিজেপির পাখির চোখ? ‘সন্ত্রাস’ ইস্যু তুলে ধরে কী বোঝাতে চাইছে শীর্ষ নেতৃত্ব?

 | 
অমিত শাহ

নিজস্ব প্রতিনিধি: একুশের বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে। ডাবল সেঞ্চুরি করে ক্ষমতা দখল করা তো দূরের কথা, সেঞ্চুরির কাছাকাছি পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি তারা। কিন্তু তা সত্ত্বেও আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে হাল ছেড়ে দিতে রাজি নন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে উপস্থিত থেকে সেটা স্পষ্ট করে দিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

হায়দরাবাদে বিজেপির দু'দিনের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে একাধিকবার উঠে এল পশ্চিমবঙ্গের প্রসঙ্গ। তবে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যেভাবে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারের সমালোচনা করলেন, তাতে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। রবিবার প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করে বলেছেন বাংলায় বিজেপি কর্মীদের খুন করা হচ্ছে। শনিবার হায়দরাবাদে সাংবাদিক বৈঠকে বাংলা নিয়ে সরব হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। এছাড়া দলের একাধিক শীর্ষ নেতৃত্ব পশ্চিমবঙ্গের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। রবিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন বাংলায় শীঘ্রই বিজেপি সরকার গঠন করবে। কিন্তু খোদ প্রধানমন্ত্রীর মুখে যখন বাংলার প্রসঙ্গ উঠে আসে তখন সেটা যে বিশেষ গুরুত্ব পায় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এদিন বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "বাংলায় বিজেপি কর্মীদের খুন করা হচ্ছে। কিন্তু তাতেও আমাদের কর্মীদের থামিয়ে রাখা যায়নি। কোনও ভাবেই তাঁদের দমিয়ে রাখা যাচ্ছে না। তাঁরা দলের পতাকা হাতে এগিয়ে চলেছেন৷" সেই সঙ্গে কেরল এবং তেলেঙ্গানা নিয়েও সুর চড়িয়েছেন মোদি। তিনি বলেন, "এই দুই রাজ্যে আমরা ক্ষমতায় নেই। কিন্তু আমাদের দলের কর্মীরা সেখানে দারুণ লড়াই করছেন। দলের অভিযান থামিয়ে রাখা যাচ্ছে না৷"

এদিন প্রধানমন্ত্রী যখন ভাষণ দেন তখন সেখানে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের থাকার অনুমতি দেওয়া হয়নি। পরে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলি সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন  কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। আর তাতেই জানা যায় প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গে সন্ত্রাসের অভিযোগ করেছেন। বাংলায় কঠিন পরিস্থিতিতে লড়াই করছেন বিজেপি কর্মীরা, এমনটাই জানিয়েছেন তিনি। এদিন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডাও অভিযোগ করে বলেন বাংলায় বিজেপি কর্মীদের উপর অত্যাচার করা হচ্ছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী এবং নাড্ডার এই বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছেন তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন। তিনি বলেন, "সাহস থাকলে ন্যাশনাল ক্রাইম ব্যুরোর রেকর্ডটা দেখান। তাহলেই ধর্ষণ, খুনের ঘটনায় কোন রাজ্য কোন অবস্থানে রয়েছে তা স্পষ্ট হয়ে যাবে। নরেন্দ্র মোদি- অমিত শাহ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূত দেখেন। কারণ, একমাত্র এখানেই ওদের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে লড়াই করছেন দিদি। এজেন্সি দিয়ে ভয় দেখিয়েও কোনও লাভ হচ্ছে না। তাই এসব বলছেন।”

তবে প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য নিঃসন্দেহে খুশি করবে বঙ্গ বিজেপির নেতাকর্মীদের। গত বিধানসভা নির্বাচনের পর ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস ইস্যুতে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করেছে বিজেপি। বিচার চাইতে রাষ্ট্রপতি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছেন বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব। ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআই বিষয়টির তদন্ত করছে। বঙ্গ বিজেপির একাংশের দাবি রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরো ভেঙে পড়েছে। অবিলম্বে রাষ্ট্রপতি শাসন চেয়ে সরব হয়েছেন তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে বঙ্গ বিজেপির নেতৃত্বের সঙ্গে যেন সুরে সুর মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গে সন্ত্রাসের অভিযোগ করলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। তবে কি আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে কোনও বড় পদক্ষেপ করা হতে পারে? সেই সম্ভাবনা কিন্তু উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে যথেষ্ট চর্চা শুরু হয়েছে বঙ্গ রাজনীতিতে।

Around The Web

Trending News

You May like