নিজস্ব প্রতিনিধি: রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সর্বসম্মতভাবে প্রার্থী দেওয়া যায় কিনা তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে বিজেপি। বিষয়টি নিয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে তারা। কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে ইতিমধ্যেই কথাবার্তা শুরু করে দিয়েছেন। রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়্গেকে ফোন করেছেন তিনি। কংগ্রেসের মতামত জানতে চেয়েছেন রাজনাথ। তৃণমূল সুপ্রিমো তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও কথা বলেছেন রাজনাথ। ইতিমধ্যেই মল্লিকার্জুনকে রাজনাথ সিং জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিরোধীদের মতামত জানতে চান। সেই জন্যেই তাঁকে ফোন করেছেন তিনি। তখন মল্লিকার্জুন পাল্টা জানতে চান বিজেপি কোনও প্রার্থীর নাম ভেবেছে কিনা। এমনকী তিনি এটাও বলেছেন বিরোধীরা যদি সর্বসম্মতভাবে কোনও প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করে তাহলে বিজেপি তথা এনডিএ তা মানবে কিনা। যদিও সেই বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানাতে পারেননি কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী। একই কথা রাজনাথকে জানিয়েছেন মমতা। এছাড়া রাজনাথ সিং কথা বলেছেন অখিলেশ যাদব, মায়াবতী, শরদ পাওয়ার প্রমুখের সঙ্গে।
উল্লেখ্য রাজনাথ সিংয়ের দলমত নির্বিশেষে সব নেতার সঙ্গে সম্পর্ক বেশ ভাল। তিনি উগ্র হিন্দুত্ববাদী নেতা বলে পরিচিত নন। তাই মোটের উপর সবার কাছে রাজনাথের একটা গ্রহনযোগ্যতা রয়েছে। মূলত সেই কারণেই রাজনাথকে এই গুরুদায়িত্ব দিয়েছে বিজেপি, এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। আসলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ওয়াইএসআর কংগ্রেস এবং বিজেডির সমর্থন ছাড়া বিজেপি নিজেদের প্রার্থীকে জেতাতে পারবে না। সেক্ষেত্রে সর্বসম্মতিক্রমে প্রার্থী নির্বাচিত হলে লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির গ্রহণযোগ্যতা দেশের কাছে বাড়বে বলেই গেরুয়া শিবির মনে করছে। সেই কারণেই দেরিতে হলেও সর্বসম্মত প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা চালাতে চায় বিজেপি, এমনটাই মনে করা হচ্ছে। সদ্য দিল্লিতে গিয়ে বিরোধী দলগুলির সঙ্গে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে বৈঠক করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যথারীতি সেই বৈঠকের দিকে নজর ছিল বিজেপির। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি যেভাবে সর্বসম্মতি প্রার্থীর ব্যাপারে দেওয়ার ব্যাপারে ইচ্ছা প্রকাশ করল তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
সাসপেন্ডেড বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মা যে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন হজরত মহম্মদকে নিয়ে, তাতে শোরগোল পড়ে গিয়েছে দেশজুড়ে। আন্তর্জাতিক মহল এই ঘটনায় ভারতের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। গোটা ঘটনার জেরে বিশ্বমঞ্চে ‘ফেস লস’ হয়েছে নয়াদিল্লির। সেই জায়গা থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধীদের পাশে নিয়ে সর্বসম্মতভাবে প্রার্থী নির্বাচন করতে পারলে অনেকটাই হারানো জমি ফিরে পাওয়া যাবে বলে মনে করছে গেরুয়া শিবিরের ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক’। সবচেয়ে বড় কথা বিরোধীদের সঙ্গে কথা বলে তারা কি ভাবছে সেটাও বুঝে নিতে চায় বিজেপি। সেভাবে প্ল্যান-এ অথবা প্ল্যান-বি তৈরি করবে গেরুয়া শিবির। অর্থাৎ এটা পরিষ্কার এ বিষয়ে পরিষ্কার চিত্রনাট্য মেনে এগোতে চাইছে বিজেপি। বিজেপির মতো সাংগঠনিক একটি দল সবকিছুই করে যথেষ্ট ভাবনা-চিন্তা করে। তাই সর্বসম্মতিক্রমে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী দেওয়া নিয়ে বিরোধীদের সঙ্গে যে আলোচনা শুরু করেছে বিজেপি তা অত্যন্ত ইঙ্গিতপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।