নিজস্ব প্রতিনিধি: শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ড নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের দুটি ফ্ল্যাট থেকে পঞ্চাশ কোটি টাকা উদ্ধার করেছে ইডি। এরপর পার্থকে গ্রেফতার করে ইডি। আর এই আবহের মধ্যেই গরু পাচার মামলায় সিবিআই গ্রেফতার করেছে বীরভূম তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে। এই সমস্ত ঘটনা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে নিজেদের মাটি শক্ত করতে আগামী সাত সেপ্টেম্বর নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছিল রাজ্য বিজেপি।
রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার নিজেই এই ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু ঘোষণার পরেই সেই কর্মসূচি বাতিল করেছে গেরুয়া শিবির। শোনা যাচ্ছে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ১৩ সেপ্টেম্বর নবান্ন অভিযান হতে পারে। তবে কি রাজ্য নেতৃত্বের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের কারণেই নবান্ন অভিযান বাতিল করা হয়েছে? এই প্রশ্ন যথারীতি উঠছে। আসলে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের শেষ থেকেই জঙ্গলমহল, উত্তরবঙ্গ জুড়ে আদিবাসীদের করম উৎসব শুরু হয়ে যাবে। তাই ওই সময় জঙ্গলমহল, উত্তরবঙ্গ-সহ আদিবাসী অধ্যুষিত জেলাগুলি থেকে দলের কর্মী-সমর্থকদের নবান্ন অভিযানে সামিল করা কঠিন হবে। তাই হাতে এত কম সময়ের মধ্যে অন্যান্য জেলা থেকে লোক এনে নবান্ন অভিযান সফল করা যাবে না বলেই বিজেপি নেতৃত্ব পরে বুঝতে পেরেছেন। সদ্য রাজ্য বিজেপির পর্যবেক্ষক হয়েছেন সুনীল বনশল। তাই নতুন পর্যবেক্ষকের সামনে দলের শক্তি প্রদর্শন করা জরুরি ছিল রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের কাছে। কিন্তু সে ব্যাপারে বড় ধাক্কা খেল তারা।
এই প্রথম নয়, এর আগে একাধিকবার বিজেপি তাদের প্রস্তাবিত কর্মসূচি বদল করেছে। তথ্যচিত্র ‘কালী’-র পোস্টার ঘিরে তুমুল বিতর্ক দেখা যায়। তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া যে পোস্ট করেছেন তাতে বিতর্ক বহুগুণে বেড়ে যায়। যে ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে রাজ্য বিজেপি। এমনকী সেই সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করেন, বাংলায় কালীপুজো ঠিকমতো হচ্ছে তো? উত্তরে লকেট বলেন হ্যাঁ পুজো ঠিকঠাক হচ্ছে। ঠিক তখনই রাজ্য বিজেপি দফতরে শ্রাবণ মাসে কালীপুজো করা হবে বলে ঘোষণা করা হয়। মহিলাদের উদ্যোগে পুজো করা হবে বলে জানানো হয়। এমনকী সেই পুজোয় উপস্থিত থাকার জন্য প্রধানমন্ত্রীকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। প্রত্যেকটি জেলা থেকে বিজেপি কর্মীরা চাল, ডাল প্রভৃতি রাজ্য দফতরে নিয়ে আসবেন বলে ঠিক হয়। যা দিয়ে ভোগ রান্না হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দেখা গেল ঘোষণার কয়েক দিন পরেই সেই পুজোর কর্মসূচি বাতিল করলেন রাজ্য নেতৃত্ব। তবে কি দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণেই একের পর এক কর্মসূচি বাতিল করতে হচ্ছে? সেভাবে বিজেপির তৃণমূল স্তর থেকে সমর্থন পাওয়া যাচ্ছে না? এই প্রশ্ন উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল জয়ের পরেও দুর্নীতি ইস্যুতে বর্তমানে অনেকটা ব্যাকফুটে চলে গিয়েছে তৃণমূল। সেই জায়গা থেকে বিজেপি রাজ্য জুড়ে উপযুক্ত আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। বিক্ষিপ্তভাবে বিজেপি নেতারা আন্দোলন কর্মসূচিতে অংশ নিলেও তা রাজ্যবাসীর মধ্যে সেভাবে রেখাপাত করেনি। তাই নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে নিজেদের পায়ের তলার মাটি শক্ত করতে চেয়েছিলেন সুকান্ত মজুমদাররা। কিন্তু সেই কর্মসূচি দ্রুত বাতিল করতে হল। আদিবাসী সমাজকে বিশেষ বার্তা দিতেই রাষ্ট্রপতি পদে বিজেপি তথা এনডিএ শিবির নিয়ে এসেছে আদিবাসী সমাজের অন্যতম প্রধান মুখ দ্রৌপদী মুর্মুকে। উল্লেখ্য পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী সমাজের মধ্যে বিজেপির প্রতি সমর্থন অনেকটাই রয়েছে। দ্রৌপদী মুর্মুকে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার পর সেই সমর্থন আরও বেড়েছে বলেই বিজেপি মনে করে। তাই আদিবাসী সমাজের করম উৎসবের কথা মাথায় রেখে নবান্ন অভিযান বাতিল করতে হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন ঘোষণা করার আগে এই বিষয়গুলি ভাবেননি কেন তাঁরা? বারবার কর্মসূচি ঘোষণার ক্ষেত্রে এরকম ফাঁক থেকে যাচ্ছে কেন, সেই প্রশ্ন যথারীতি উঠছে। সবচেয়ে বড় কথা দুর্নীতি ইস্যুতে বিজেপি যেভাবে রাজ্য জুড়ে আন্দোলন করবে বলে সবাই ভেবেছিলেন, তা বাস্তবে দেখা যায়নি। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি নবান্ন অভিযান পিছিয়ে দিয়েছে। কিন্তু যে সময়ের কথা এখন তারা বলছে তখন থেকে বাংলায় পুজোর মরশুম কার্যত শুরু হয়ে যাবে। তাই বিজেপি নবান্ন অভিযান কতটা সফলভাবে করতে পারে সেদিকেই চোখ থাকবে রাজনৈতিক মহলের।