Aajbikel

মিঠুনকে ফের সক্রিয়ভাবে কেন মাঠে নামাচ্ছে বিজেপি? স্টার ইমেজকে কাজে লাগিয়েই বাজিমাত?

 | 
মিঠুনকে ফের সক্রিয়ভাবে কেন মাঠে নামাচ্ছে বিজেপি? স্টার ইমেজকে কাজে লাগিয়েই বাজিমাত?

নিজস্ব প্রতিনিধি: নেতা কি কম পড়িয়াছে? এই প্রশ্ন রাজ্য বিজেপিকে নিয়ে অবধারিতভাবে তোলা যেতে পারে। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে যেভাবে রাজ্যে তারা সাড়া জাগিয়েছিল তার ছিটেফোঁটাও এখন দেখা যাচ্ছে না। দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সুযোগ্য নেতৃত্বের বড়ই অভাব ঘটেছে রাজ্য বিজেপিতে।  বিজেপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ঠারেঠোরে স্বীকার করে নেন যে এই মুহূর্তে তাঁদের সামনে কোনও জনপ্রিয় মুখ বা সুদক্ষ নেতা নেই।

গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে রাজ্য বিজেপি কার্যত ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে। দিলীপ ঘোষ শিবিরের সঙ্গে সুকান্ত মজুমদারের শিবিরের বিস্তর ব্যবধানের কথা সকলেই জানেন। এই পরিস্থিতিতে মিঠুন চক্রবর্তীকে ফের সক্রিয়ভাবে মাঠে নামাতে চলেছে বিজেপি। তবে কি স্টার ইমেজকে কাজে লাগিয়ে বঙ্গে হারানো জমি ফেরত পেতে চায় তারা? বিধানসভা নির্বাচনের সময় বিজেপিতে যোগদান করে প্রচারে সারা ফেলে দিয়েছিলেন মহাগুরু। তারকা প্রচারক মিঠুনের জনসভায় কাতারে কাতারে ভিড় হয়। রাজনৈতিক বক্তব্যের পাশাপাশি নিজের হিট ছবির সংলাপ মিঠুনকে বলতে শোনা যায় প্রত্যেকটি জনসভায়। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির শোচনীয় পরাজয়ের পর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে আস্তে আস্তে গুটিয়ে নেন মিঠুন। তার প্রধান কারণ ছিল শারীরিক অসুস্থতা। আর আগের চেয়ে কিছুটা সুস্থ হতেই ফের রাজনীতির ময়দানে দেখা যাচ্ছে ডিস্কো ড্যান্সারকে।

সোমবার সকালেই কলকাতায় পৌঁছন মিঠুন। পরে সন্ধ্যা নাগাদ বিজেপির রাজ্য দফতরে গিয়ে দলের বর্তমান নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এরপর রাতে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘‘দল আমাকে যে কাজ দিয়েছে, তা করে যাব আমি। আমি রাজনীতি করি না, আমি মানুষ-নীতি করি। বাংলার মানুষের জন্য কাজ করতে চাই এবং সেটা করবও। শরীর খারাপ থাকায় এত দিন আসতে পারিনি। রাজনীতি রাজনীতির জায়গায় থাকুক। কিন্তু যা খবর পেয়েছি, ভোটের পর যে অশান্তি হয়েছে, তা খুবই দুঃখজনক। তিন থেকে সাতাত্তর হয়েছে বিজেপি। আমি খুবই খুশি। এক দিনে সব পাল্টে যায় না। কিন্তু বিজেপি যে জায়গায় পৌঁছেছে, আমি খুবই খুশি।’’ বিজেপি সূত্রে খবর, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনকে নজরে রেখেই আবার বাংলায় পাঠানো হয়েছে অভিনেতাকে। লোকসভা কেন্দ্র ধরে ধরে প্রচার চালানোর যে কর্মসূচি নিয়েছে রাজ্য নেতৃত্ব, সেই সব কর্মসূচিতে কাজে লাগানো হতে পারে মিঠুনকে। আর সেই সূত্রে মিঠুনকে বিজেপি রাজ্যসভার সাংসদ করতে চায় বলে একটি সূত্রে খবর পাওয়া যাচ্ছে। উল্লেখ্য এর আগে তৃণমূল মিঠুনকে রাজ্যসভায় পাঠিয়েছিল। কিন্তু নানা কারণে মিঠুন সেখানে বেশিদিন থাকতে পারেননি। রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন তিনি। তাই মিঠুনকে ফের একবার রাজ্যসভায় দেখা যেতেই পারে। সম্প্রতি রূপা গঙ্গোপাধ্যায় ও স্বপন দাশগুপ্তের রাজ্যসভা পদের মেয়াদ শেষ হয়েছে। সেক্ষেত্রে বাংলা থেকে মিঠুনের মতো ব্যক্তিত্বকে বিজেপি রাজ্যসভায় নিয়ে গেলে তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

এখন প্রশ্ন একটাই, বিজেপি সক্রিয়ভাবে মিঠুনকে ফের কেন মাঠে নামাতে চাইছে? আসলে বিজেপির মরা গাঙে জোয়ার আনতে এমন একজনকে দরকার যিনি সামনে থেকে নীচু তলার কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করতে পারবেন। সাত রাজ্যে বিশেষ দায়িত্ব পেয়ে দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ পশ্চিমবঙ্গে বেশি সময় দিতে পারছেন না। বা বলা ভাল কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব চাইছেন না দিলীপকে বেশি করে রাজ্যে রাখতে। কারণ তাতে সুকান্ত মজুমদারের শিবিরের সঙ্গে তাঁর অনুগামীদের ঠোকাঠুকি আরও বাড়বে। উল্টোদিকে সুকান্ত মজুমদার যেভাবে রাজ্যে দল চালাচ্ছেন তাতেও বিশেষ আশার কিছু দেখছেন না কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মোকাবিলা করতে গেলে ন্যূনতম যে ক্যারিশমা থাকা দরকার তার ছিটেফোঁটাও নেই সুকান্তর মধ্যে। কিন্তু সুকান্তকে এখনই সভাপতি থেকে সরালে অনেক প্রশ্ন উঠে যাবে। যা সাংগঠনিক দল বিজেপির কাছে অত্যন্ত অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। ঠিক সেই জায়গা থেকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মিঠুন চক্রবর্তীকে বাংলার মাটিতে ফের সক্রিয়ভাবে নামিয়ে বাজিমাত করতে চায়। তাঁর 'স্টারডম'কে কাজে লাগিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে ঘুরে দাঁড়িয়ে তৃণমূলকে টক্কর দিতে তৈরি হতে চায় বিজেপি।

Around The Web

Trending News

You May like