সৌরভের ইমেজ কাজে লাগাতে তৎপর বিজেপি-তৃণমূল? নীরবে সবটাই দেখে চলেছেন ‘মহারাজ’!

সৌরভের ইমেজ কাজে লাগাতে তৎপর বিজেপি-তৃণমূল? নীরবে সবটাই দেখে চলেছেন ‘মহারাজ’!

4fdd0ffebdc3262b886e8519367421c3

নিজস্ব প্রতিনিধি: বিসিসিআই সভাপতি পদ থেকে সরতে হচ্ছে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে। যে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক চর্চা চলছে ক্রিকেট দুনিয়ার পাশাপাশি রাজনৈতিক মহলে। অবশেষে সোমবার  বিষয়টি নিয়ে মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন উত্তরবঙ্গ সফরে যাওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশে মমতা বলেন, ”সৌরভের সঙ্গে প্রতিহিংসার রাজনীতি নয়। আইসিসি নির্বাচনের জন্য সৌরভকে পাঠানো হোক৷” মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে খোদ প্রধানমন্ত্রীকে আবেদন জানিয়েছেন, তা গোটা বিষয়টিতে নিঃসন্দেহে অন্য মাত্রা যোগ করেছে।

তৃণমূলের দাবি সৌরভ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। বহু আবেদন বা জোরাজুরি সত্ত্বেও সৌরভ বিজেপিতে যোগদান করেননি বলেই তাঁকে বিসিসিআই সভাপতি পদ থেকে সরতে হচ্ছে বলে তৃণমূলের অভিযোগ। যদিও রাজ্য বিজেপি সেই অভিযোগ নস্যাৎ করেছে। তবু তৃণমূল সেই দাবি থেকে সরেনি। এই পরিস্থিতিতে সোমবার সৌরভ ইস্যুতে প্রথম মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, সৌরভ বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের রায় সৌরভের জন্যও ছিল, অমিত শাহের ছেলের জন্যও ছিল। সৌরভ নেই, অথচ বিসিসিআইয়ে থেকে গেলেন অমিতবাবুর ছেলে। সে থাকুন, আমার কিছু আসে যায় না। কিন্তু আমার প্রশ্ন সৌরভকে বাদ দেওয়া হল কেন? আমি এটা জানতে চাই।” এরপরই তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার একান্ত অনুরোধ, আইসিসি নির্বাচনের জন্য সৌরভকে পাঠানো হোক। সৌরভ বঞ্চিত। ওকে বঞ্চিত করা হয়েছে। সৌরভকে সবাই চেনেন। শুধু বাংলা নয়, গোটা বিশ্ব ওকে চেনে। সৌরভ জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। দেশের গর্ব। যাঁরাই ক্রিকেট খেলেছে, তাঁরাই সৌরভকে চেনেন। আমি গোটা ঘটনায় শকড। সরকারের কাছে অনুরোধ করব, সৌরভের সঙ্গে প্রতিহিংসার রাজনীতি নয়। ও কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্য নয়। ক্রিকেটের স্বার্থে, খেলাধুলার স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক।” সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি সারা পৃথিবীর ক্রিকেটপ্রেমীদের তরফ থেকে বলব সৌরভ আমাদের গৌরব। সৌরভ যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে মাঠেও খেলেছে, প্রশাসনও চালিয়েছে।”

উল্লেখ্য একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপিতে সৌরভের যোগদান করা নিয়ে চর্চা তুঙ্গে ওঠে। শুধু তাই নয়, এমন খবরও রটে যে সৌরভ বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হতে চলেছেন। সেই সময় গুরুতর অসুস্থ হয়ে সৌরভকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। যদিও তাঁর বিজেপিতে যোগদান করা নিয়ে গুঞ্জন থেমে থাকেনি। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ধরাশায়ী হয়। এরপর সৌরভকে নিয়ে সাময়িক চর্চা থেমে থাকলেও চলতি বছরের মে মাসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কলকাতা তথা রাজ্য সফরে এসে সৌরভের বাড়িতে নৈশভোজে যোগ দেন। তখন থেকেই নতুন করে সৌরভকে নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। যদিও তারপর নবান্নে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন সৌরভ। এমনকী শহরের অন্য একটি অনুষ্ঠানে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। বিষয়টি  রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, আসলে এভাবে সৌরভ ‘ব্যালান্স’ করতে চাইছেন। এই পরিস্থিতিতে সৌরভ ইস্যুতে মুখ খুললেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী।

তবে এটা স্পষ্ট যে, সৌরভের মতো স্বচ্ছ ইমেজধারী মহাতারকাকে পাশে পেতে তৎপর প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল। তৃণমূল নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে যে লাগাম ছাড়া দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তাতে যথেষ্ট বিপাকে পড়েছে দল। এই পরিস্থিতিতে সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। জেলায় জেলায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অন্যতম প্রধান ইস্যু হয়ে উঠতে চলেছে বিরোধীদের কাছে। ঠিক সেই জায়গা থেকে সৌরভের পাশে থেকে নতুন করে বাঙালি সত্তা তথা বাঙালি আবেগ মুখ্যমন্ত্রী  জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। কারণ দলমত নির্বিশেষে রাজ্যের প্রত্যেকটি মানুষের কাছে সৌরভের স্থান অত্যন্ত উঁচুতে রয়েছে। সেই জায়গা থেকে সৌরভ ইস্যুতে মুখ খুলে রাজ্যবাসীকে মুখ্যমন্ত্রী বিশেষ বার্তা দিয়েছেন বলেই মনে করা হচ্ছে। একই ভাবে বিজেপিও জায়গা ছাড়ার পাত্র নয়। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে বলেছেন, মমতা যদি চাইতেন তাহলে আগেই শাহরুখ খানের পরিবর্তে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে রাজ্যের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর করতে পারতেন। অর্থাৎ শুভেন্দুর বক্তব্য রাজ্য সরকার এর আগে সৌরভকে সেই সম্মান ইচ্ছা করলেই দিতে পারত। সব মিলিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে চর্চা শুরু হয়েছে কিংবদন্তি বাঙালি ক্রীড়াব্যক্তিত্ব সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *