রাজ্যজুড়ে আশা কর্মীদের বিক্ষোভে অস্বস্তিতে নবান্ন, কী দাবিদাওয়া রয়েছে তাঁদের?

রাজ্যজুড়ে আশা কর্মীদের বিক্ষোভে অস্বস্তিতে নবান্ন, কী দাবিদাওয়া রয়েছে তাঁদের?

নিজস্ব প্রতিনিধি: শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ড নিয়ে রাজ্য যখন অনেকটাই ব্যাকফুটে চলে গিয়েছে, তখন রাস্তায় নেমে তৃণমূল সরকারকে নতুন করে অস্বস্তিতে ফেললেন আশা কর্মীরা। সম্প্রতি একগুচ্ছ দাবি দাওয়া নিয়ে পথে নেমেছিলেন তাঁরা। বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ দেখান আশা কর্মীরা। ন্যায্য বেতন, সরকারি কর্মীর স্বীকৃতি-সহ বেশ কিছু দাবিতে পথে নামেন হাজার হাজার আশা কর্মী। স্বাভাবিকভাবেই আশা কর্মীদের এই বিক্ষোভে তৃণমূল সরকার বেশ অস্বস্তির মধ্যে পড়েছে। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা-সহ একাধিক জেলায় আশা কর্মীরা প্রবল বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। ক্যানিং-বারুইপুর রোড অবরোধের পাশাপাশি দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে তাঁরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। এমনকী ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের সামনেও চলে বিক্ষোভ। তাঁরা বিক্ষোভ দেখান ডায়মন্ডহারবার, ফলতা, কুলপি, উস্তি-সহ বিভিন্ন অঞ্চলে।

এই প্রথম নয়, গত বছরের শেষ দিকেও আশা কর্মীরা বিক্ষোভ দেখান। ন্যূনতম ২১ হাজার টাকা বেতন, সরকারি সমস্ত রকম সুযোগ সুবিধা, বকেয়া-সহ বিভিন্ন দাবিতে তাঁরা আন্দোলন করছেন। তাঁদের অভিযোগ বারবার প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। তাই ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চালানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।

গত বছরের ডিসেম্বরে হুগলি, বর্ধমান, দুই চব্বিশ পরগনা-সহ বিভিন্ন জেলায় পথে নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন আশা কর্মীরা। সেবার নিজেদের পোশাক পরে রাস্তায় নামতে দেখা গিয়েছিল তাঁদের। আশা কর্মীদের দাবি, তাঁদের মূল কাজ হচ্ছে গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য পরিষেবা দেওয়া। অথচ তাঁদের দিয়ে নানা প্রকল্পের কাজ করিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠছে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে। সবচেয়ে বড় কথা অতিমারি করোনা পরিস্থিতিতে তাঁরাই সামনের সারিতে থেকে কাজ করেছেন। অথচ তাঁদের কোনও স্থায়ী বেতন কাঠামো নেই। সেই কারণেই এবার তাঁরা ন্যূনতম ২১ হাজার টাকা বেতনের দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন। আশা কর্মীদের কথায়, পশ্চিমবঙ্গের আপামর জনসাধারণ জানেন সুষ্ঠু স্বাস্থ্য পরিষেবা দিয়ে থাকেন আশা কর্মীরা। অথচ দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের ইনসেন্টিভের টাকা পড়ে থাকে বলে অভিযোগ করছেন তাঁরা। উল্লেখ্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অধীনস্থ জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের আওতায় চুক্তির ভিত্তিতে বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় আশা কর্মী পদে নিয়োগ করা হয়ে থাকে। নতুন করে আশা কর্মী পদে নিয়োগের ব্যাপারে সম্প্রতি বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। আশা কর্মীরা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে মাসিক সাড়ে চার হাজার টাকা বেতন পেয়ে থাকেন। সেই সঙ্গে আরও কিছু অতিরিক্ত ভাতা পান তাঁরা। তাই আশা কর্মীদের দাবি, যে বিপুল কাজের বোঝা চাপানো হয়েছে তাঁদের উপর তাতে এই টাকায় সংসার চালানো যাচ্ছে না। আগামী বছরের গোড়াতেই রাজ্যে হবে পঞ্চায়েত নির্বাচন। তাই আশা কর্মীরা যেভাবে নতুন করে আন্দোলন করছেন তাতে স্থানীয় স্তরে বেশ অস্বস্তির মধ্যে পড়েছে তৃণমূল। এর কিছুটা প্রভাব পঞ্চায়েত নির্বাচনে পড়তে পারে বলে অনেকের মত।

আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ দেওয়া নিয়ে কোনও ঘোষণা এখনও পর্যন্ত করতে পারেনি তৃণমূল সরকার। যা নিয়ে সরকারি কর্মীদের অসন্তোষ চরমে গিয়ে পৌঁছেছে। বিরোধীদের অভিযোগ রাজ্য জুড়ে বছরভর প্রচুর উৎসব সরকারিভাবে পালন করা হয় যেখানে বিপুল অর্থ খরচ হয়। অথচ সরকারি কর্মী বা চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে নবান্ন এতটুকু ভাবিত নয় বলে অভিযোগ বিরোধীদের। যদিও তৃণমূলের বক্তব্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিটি বিষয় মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। তাই আশা কর্মীদের নিয়ে আগামী দিনে মুখ্যমন্ত্রী কি ভাবনাচিন্তা করেন সেটাই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen + 10 =