নিজস্ব প্রতিনিধি: গত লোকসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহলে ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গিয়েছিল তৃণমূল। বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া জুড়ে শুধুই ফুটেছিল পদ্ম। মেদিনীপুর লোকসভাতেও জয় পেয়েছিলেন তৎকালীন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। কিন্তু একুশের বিধানসভা নির্বাচনে সেই সাফল্য ধরে রাখতে পারেনি বিজেপি। জঙ্গলমহলে হারানো জায়গা অনেকটাই পুনরুদ্ধার করে ফেলেছে তৃণমূল। তবে বাঁকুড়া, পুরুলিয়ায় বিজেপি মোটের উপর ভাল ফল করেছে। সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার পরের বছর লোকসভা ভোট। তাই এখন থেকেই জঙ্গলমহলকে পাখির চোখ করে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে সহ-পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দিয়ে নিয়ে এসেছে আশা লাকড়াকে।
ঝাড়খণ্ডের আদিবাসী সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান মুখ আশা লাকড়াকে আনার মূল কারণ হল আদিবাসীদের সমর্থন বেশি করে পাওয়া। আর কিছুদিন আগে রাজ্যে এসে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে আক্রমণ করে আশা বলেছেন, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে আদিবাসীরা বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা পেলেও বাংলার আদিবাসীরা সেগুলি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আদিবাসী সমাজে অসম্ভব গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে রাঁচি পুরসভার বর্তমান মেয়র তথা দলের জাতীয় সম্পাদক আশা লাকড়ার। সবচেয়ে বড় কথা বিজেপি তথা এনডিএ রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী করে আদিবাসী সমাজের অন্যতম মুখ দ্রৌপদী মুর্মুকে। পরে নির্বাচনে বিপুল ভোটে জিতে রাষ্ট্রপতি হয়েছেন দ্রৌপদী। গেরুয়া শিবির মনে করছে আদিবাসী সমাজকে এভাবে বিশেষ বার্তা দেওয়া গিয়েছে। যার ফসল ফের তোলা যাবে চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে। এর পাশাপাশি বিজেপি কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করেছে সুনীল বনশলকে। সেই সঙ্গে পূর্ণ সময়ের পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিহারের প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মঙ্গল পান্ডেকে। বিহার বিজেপির অন্যতম পরিচিত মুখ তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ঘনিষ্ঠ নেতা বলেই মঙ্গল পান্ডে পরিচিত।
গত লোকসভা নির্বাচনে বিহার বিজেপির সভাপতি ছিলেন মঙ্গল পান্ডে। সেই নির্বাচনে বিজেপি তথা এনডিএ জোট বিহারে চল্লিশটি আসনের মধ্যে ৩৯টি আসনে জয়লাভ করে। সেই সাফল্য বাংলাতেও কাজে লাগাতে চান বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। আসলে নবান্ন অভিযানের পর বিজেপি চাইছে লাগাতার আন্দোলন করে ময়দানে থাকতে। সেই গতি আগামী দেড় বছর ধরে রাখতে চাইছে বিজেপি। আর সেই লক্ষ্যেই গেরুয়া শিবির প্রথমেই বিশেষ নজর দিয়েছে জঙ্গলমহল তথা আদিবাসী ভোটের দিকে। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের স্পষ্ট নির্দেশ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ভুলে রাজ্য বিজেপির সমস্ত নেতাকর্মীকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে পথে নামতে হবে। দলের নেতাকর্মীদের একটা অংশ বিধানসভা নির্বাচনের পর বসে গিয়েছেন। মূলত দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে বিরোধের কারণেই তাঁরা নিশ্চুপ রয়েছেন। কিন্তু বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার উষ্মা প্রকাশ করেছেন। অবিলম্বে মন কষাকষি ভুলে প্রত্যেককে মাঠে নামার বার্তা দিয়েছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে সংগঠনকে চাঙ্গা করতে পশ্চিমবঙ্গে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আশা লাকরা এবং মঙ্গল পান্ডেকে। পঞ্চায়েত এবং আগামী লোকসভা নির্বাচনে ভোট বাক্সে এর ফল কতটা পড়বে সেদিকেই চোখ থাকবে রাজনৈতিক মহলের।