Aajbikel

অনুব্রতর পাশে কতটা রয়েছে তৃণমূল? এবার হাজিরা না দিলে গ্রেফতার হবেন দাপুটে এই নেতা?

 | 
অনুব্রত

নিজস্ব প্রতিনিধি: ফের নতুন করে খবরের শিরোনামে বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। যবে থেকে সিবিআই তাঁকে তলব করতে শুরু করেছে দেখা যাচ্ছে তাঁর চড়া মেজাজ উধাও। অনেকটাই যেন চুপসে গিয়েছেন বীরভূমের 'কেষ্টদা'। সোমবার হাজিরা এড়িয়েছেন তিনি। কিন্তু তাতে নিস্তার পাচ্ছেন না। বুধবার তাঁকে ফের তলব করেছে সিবিআই। সূত্রের খবর এবারও যদি নিজাম প্যালেসে গিয়ে তিনি হাজিরা না দেন তবে তাঁর বিরুদ্ধে কঠিন পদক্ষেপ করবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সেক্ষেত্রে দ্রুত আদালতের শরণাপন্ন হয়ে অনুব্রতকে গ্রেফতার করার জন্য আবেদন করতে পারে সিবিআই। আর সেই প্রেক্ষাপট ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গিয়েছে। মঙ্গলবার কলকাতায় এসেছেন সিবিআইয়ের অতিরিক্ত ডিরেক্টর অজয় ভাটনগর। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে যে সমস্ত  বিষয় নিয়ে তদন্ত করছে সিবিআই তাঁর দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। এদিন কলকাতায় এসে সিবিআই অফিসারদের সঙ্গে বিশেষ বৈঠক করেছেন ভাটনগর। এই পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে তৃণমূল সেভাবে অনুব্রতর পাশে দাঁড়াচ্ছে না। উল্লেখ্য রাজীব কুমার ইস্যুতে যেভাবে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, তার সামান্যতম দেখা যাচ্ছে না পার্থ চট্টোপাধ্যায় বা অনুব্রতর ক্ষেত্রে। এর আগে দেখা গিয়েছে কাউকে সিবিআই বা ইডি তলব করলেই সোচ্চার  হয়েছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু এখন পরিস্থিতির অনেকটাই বদল হয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

ইতিমধ্যেই অনুব্রত ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে সিবিআই। গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী সায়গল-সহ একাধিক ব্যক্তিকে। সূত্রের খবর জেরায় তাঁদের কাছ থেকে যেসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা তাতে অনুব্রতর কপালে যথেষ্ট চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তবে কি সেই কারণেই তিনি বারবার শারীরিক অসুস্থতার দোহাই দিয়ে হাজিরা এড়াচ্ছেন? এই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠছে। আর অনুব্রতর সমস্যা আরও বেড়েছে এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসকদের মেডিক্যাল রিপোর্টে। তাঁরা স্পষ্ট জানিয়েছেন বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতির শারীরিক অবস্থা এমন গুরুতর নয় যে তাঁকে ভর্তি হতে হবে। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে এবার নিজেদের মেধা ও  সম্মানের প্রশ্নেই চিকিৎসকরা এ কথা জানিয়েছেন। কারণ কিছুদিন আগে দেখা গিয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায় এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর আদালতের নির্দেশে তাঁকে পুনরায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হয়েছে ভুবনেশ্বরের এইমস হাসপাতালে। সেখানকার চিকিৎসকরা তখন জানিয়ে দেন পার্থকে ভর্তি করার কোনও প্রয়োজন নেই। স্বাভাবিকভাবেই এসএসকেমের রিপোর্ট নিয়ে  তখন প্রশ্ন তোলেন বিরোধীরা। উল্লেখ্য শুধু কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গ বলে নয়, গোটা দেশের মধ্যে এসএসকেএম হাসপাতালের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এখানকার চিকিৎসা পরিষেবা, চিকিৎসকদের দক্ষতা নিয়ে আজ পর্যন্ত কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেননি। আর সেই সূত্রে বিরোধীদের অভিযোগ শাসক দল তৃণমূলের চাপেই পার্থকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে বাধ্য হয়েছিলেন এসএসকেএমের চিকিৎসকরা। ভুবনেশ্বর এইমসের রিপোর্টের পর যথারীতি এসএসকেএম-এর ভূমিকা নিয়ে যথেষ্ট চর্চা হয় রাজ্য রাজনীতিতে। কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে অনুব্রত মণ্ডলের ভর্তির প্রয়োজনীয়তা নেই বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন চিকিৎসকরা। আর তাতেই বিপদ বাড়ল তাঁর।

তৃণমূল জেলা সভাপতিদের মধ্যে অনুব্রতর গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি রয়েছে তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন সময় তাঁর আলটপকা মন্তব্য তাঁকে সবসময় প্রচারের আলোতে রেখে দিয়েছে। তৃণমূলের অন্যতম প্রধান মুখ তিনি হয়ে উঠেছেন দীর্ঘদিন ধরেই। এই পরিস্থিতিতে অনুব্রতর বিরুদ্ধে সিবিআই কড়া পদক্ষেপ করলে তাতে যে তৃণমূলের নতুন করে মুখ পুড়বে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আর সিবিআই যেভাবে অনুব্রতকে নিয়ে তৎপরতা বাড়িয়েছে তাতে তৃণমূল একেবারেই স্বস্তিতে থাকতে পারছে না। তাই পার্থ-কাণ্ডের পর অনুব্রত ইস্যু আগামী দিনে কোন দিকে বাঁক নেয় সেটাই এখন দেখার।

Around The Web

Trending News

You May like