শাহের বৈঠকের পর মিটবে রাজ্য বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দল? কী ভোকাল টনিক দিয়ে গেলেন অমিত শাহ?

শাহের বৈঠকের পর মিটবে রাজ্য বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দল? কী ভোকাল টনিক দিয়ে গেলেন অমিত শাহ?

dea812f916e0751b3f4b829b8cf4f917

কলকাতা: সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। বারবার বিজেপি দাবি করেছে এবার তারা তৃণমূলের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে লড়বে। কিন্তু কথায় আর কাজে যে কতটা তফাত, তা প্রতিনিয়ত বোঝা যাচ্ছে রাজ্য বিজেপি নেতাদের লাগাম ছাড়া গোষ্ঠীকোন্দল দেখে। সাম্প্রতিককালে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী যেভাবে একে অপরকে নাম না করে আক্রমণ করছেন, তাতে গোটা বিষয়টি অন্য মাত্রা পেয়েছে। এই আবহের মধ্যে শুক্রবার সন্ধ্যায় কলকাতায় এসে রাতেই মুরলীধর সেন লেনের বিজেপির রাজ্য দফতরে পৌঁছে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

শনিবার নবান্নে বিশেষ বৈঠকে যোগ দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তার আগে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামলাতে নেমে পড়তে হল তাঁকে। বিমানবন্দর থেকে রাজ্য দফতরে যাওয়ার সময় শাহের গাড়িতেই ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী এবং সুকান্ত মজুমদার। এরপর রাজ্য দফতরে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন তিনি। সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে দলের নেতারা যাতে একে অপরকে নিশানা করে একটি কথাও না বলেন, সে কথাই বলেছেন শাহ। সেই সঙ্গে মাঠে ময়দানে নেমে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় নেতৃত্বকে। শাহ মনে করেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে যতটা আন্দোলন করা দরকার, তা করছে না রাজ্য বিজেপি। অবিলম্বে সে বিষয়ে জোর দিতে বলেছেন তিনি। সেই লক্ষ্যে কর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর কথাও বলেছেন তিনি।

গত মে মাসে দিলীপ  ঘোষকে সর্বভারতীয় স্তরে নিয়ে যান কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব। তাঁকে বিভিন্ন রাজ্যের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু তাতে দিলীপের গুরুত্ব বাড়ল না কমল তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। তখন দিলীপ বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে অসন্তোষ ব্যক্ত করেছিলেন। বলেছিলেন তাঁকে সর্বভারতীয় স্তরে নিয়ে যাওয়া হলেও তিনি পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে সরে আসবেন না। এমনকী সেই সময় দেখা যায় তৃণমূল নেতারাও দিলীপের পাশে দাঁড়িয়েছেন। দিলীপ ঘোষ সম্পর্কে তৃণমূলকে সুর নরম করে কথা বলতে দেখা গিয়েছিল। সেই সময় নাম না করে রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে কটাক্ষ করে দিলীপকে বলতে শোনা গিয়েছিল, “অন্যান্য বিজেপি নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জ করে পশ্চিমবঙ্গে চল্লিশ শতাংশ ভোট পেয়ে দেখিয়ে দিক।

আসলে লোকসভা নির্বাচনে দিলীপ ঘোষ রাজ্য সভাপতি থাকার সময় বিজেপি বাংলায় ৩৮ এবং বিধানসভা নির্বাচনে ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। কিন্তু দিলীপকে সর্বভারতীয় স্তরে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়ায় খুশি হন সুকান্ত অনুগামীরা। তাঁরা মনে করতে থাকেন এবার থেকে রাজ্য রাজনীতিতে তাঁরাই একতরফা ভাবে ছড়ি ঘোরাতে শুরু করবেন। সেই সময় থেকেই শুভেন্দু অধিকারীর হঠাৎই ক্ষমতা বৃদ্ধি হয় রাজ্য বিজেপিতে। পরবর্তীকালে দেখা যায় বিভিন্ন ইস্যুতে শুভেন্দু, সুকান্ত এবং দিলীপের মধ্যে কোনও বনিবনা হচ্ছে না। এরপর বছর শেষ হতে চললেও বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থামেনি। সাম্প্রতিককালে শুভেন্দু অধিকারী যেভাবে ‘ডিসেম্বর তত্ত্ব’ তুলে ধরে তৃণমূলকে নিশানা করছেন, তাতে তাঁর উপর বেজায় চটেছেন দিলীপ এবং সুকান্ত। আর সেটা নিয়ে নতুন করে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আরও বেশি প্রকট হয়েছে।

কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিষয়টিকে একেবারেই ভাল চোখে দেখছেন না। স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এই সমস্ত বিষয় দল বরদাস্ত করবে না। আর এই আবহের মধ্যেই রাজ্য সফরে এলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটাতে ভোকাল টনিক দিলেন রাজ্য নেতৃত্বকে। তাতে কি পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ঐক্যবদ্ধ বিজেপিকে দেখা যাবে? স্বাভাবিকভাবেই সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। নাকি শাহ দিল্লি চলে যাওয়ার পর রাজ্য বিজেপি যে তিমিরে ছিল রয়ে যাবে সেখানেই? তাই শাহের ‘পেপ টক’ কতটা কাজে লাগল সেটা আগামীদিনেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *