Aajbikel

প্রকাশ্য সভায় ক্ষমা চাইলেন অভিষেক, দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ তৃণমূলকে ক্ষমা করবেন মানুষ?

 | 
অভিষেক

নিজস্ব প্রতিনিধি: গত বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্য জুড়ে তৃণমূলের ঝড় চলে। তবু তার মধ্যেই কয়েকটি জেলায় তৃণমূলের ফল খারাপ হয়েছিল। তার মধ্যে একটি হল নদিয়া। আসলে নদিয়া জেলায় বিপুল সংখ্যক মতুয়া সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে। মতুয়া ভোটের সিংহভাগ লোকসভার পর বিধানসভা ভোটেও বিজেপি পায়। তাই রানাঘাট, কৃষ্ণনগর-সহ নদিয়া জুড়ে বিজেপির ফল বেশ ভাল হয়েছিল। যদিও এরপরে শান্তিপুর বিধানসভার উপ-নির্বাচনে তৃণমূল জয়লাভ করে। কিন্তু তৃণমূল জানে নদিয়া জেলায় তারা এখনও পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। তাই গত মাসেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নদিয়া সফর করেছেন। এবার নদিয়া গেলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সভায় প্রকাশ্যে মানুষের কাছে দলের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাইলেন তিনি। কেন ক্ষমা চাইলেন অভিষেক? রীতিমতো তাঁকে আত্মসমীক্ষা করতে দেখা গিয়েছে। নদিয়ায় তৃণমূলের খারাপ ফলের জন্য দলের কয়েকজন নেতাকে দায়ী করেছেন তিনি। আর সেই সূত্রেই তিনি বলেছেন তৃণমূলের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন না। কোনও ভুল হয়ে থাকলে সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। পঞ্চায়েত ভোট যাতে অবাধে হয় সেই প্রতিশ্রুতিও ফের দিয়েছেন তিনি। বলেছেন পঞ্চায়েত ভোটের দিন দলের কেউ জোর খাটালে তাঁকে দু'ঘণ্টার মধ্যে তৃণমূল থেকে বের করে দেবেন। এছাড়া দলের এক নির্বাচিত পঞ্চায়েত প্রধান ঠিকঠাক কাজ করেননি বলে তাঁকে পদত্যাগের নির্দেশ পর্যন্ত দিয়েছেন তিনি।

গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে বেশ অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল। দলের নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে লাগাম ছাড়া দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। নদিয়া জেলাও তার ব্যতিক্রম নয়। সেই সঙ্গে নদিয়াতে রয়েছে দলের তীব্র গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। তাই সব মিলিয়ে অভিষেক মানুষের কাছে নতমস্তকে ক্ষমা চেয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন, তৃণমূলের যে সমস্ত নেতানেত্রীর জন্য দলের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছেন সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশ, তাঁদের কী এভাবে ফেরানো যাবে? অভিষেক মঞ্চ থেকে ক্ষমা চাইলেই কি মানুষ আবার তৃণমূলের দিকে ফিরতে শুরু করবেন? এ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের সিপিএম শাসনের কথা বলা যেতে পারে। বাম শাসনের শেষ দিকে বিভিন্ন ইস্যুতে দেখা গিয়েছিল দলের নেতৃত্ব মানুষের কাছে ক্ষমা চাওয়ার কথা বলছেন। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভুল স্বীকার করার কথা বলতেন তাঁরা। ২০১১ সালে তৃণমূলের কাছে পরাজয়ের পর সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব বারবার বলেছিলেন মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে হবে দলের নেতাকর্মীদের। তখন থেকেই সিপিএম নেতৃত্বের আচরণে অনেক পরিবর্তন দেখা যায়। কিন্তু তাতে অবশ্য বাংলার ভোটাররা প্রভাবিত হননি। উল্টে যতদিন গিয়েছে সিপিএমের ভোটব্যাঙ্কের ফাটল চওড়া থেকে আরও চওড়া হয়েছে। তাই তৃণমূল এখন যেভাবে সুর নরম করে বারবার ভুল স্বীকার বা ক্ষমা চাওয়ার কথা বলছে, তাতে কি তাদের প্রতি বিশ্বাস হারানো ভোটারদের আবার পাশে ফিরিয়ে আনা যাবে? এই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠছে। রাজনৈতিক মহল মনে করছে তৃণমূল বুঝে গিয়েছে পঞ্চায়েত ভোটে তাদের যথেষ্ট সমস্যার মধ্যে পড়তে হতে পারে। তাই এখন থেকেই ভুলভ্রান্তির কথা স্বীকার করে, ক্ষমা চেয়ে মানুষকে বিশেষ বার্তা দিতে চাইছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তার ফল পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভোটবাক্সে কতটা পড়ে এখন সেটাই দেখার।

Around The Web

Trending News

You May like