নিজস্ব প্রতিনিধি: চব্বিশে লোকসভা নির্বাচন। তার আগে রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন শাসক দল তৃণমূলের কাছে অ্যাসিড টেস্ট ছাড়া আর কিছুই নয়। পঞ্চায়েতে ভাল ফল করতে একের পর এক পদক্ষেপ করছে তৃণমূল। এবার তৃণমূল ঘোষণা করল পঞ্চায়েত নির্বাচনের ২৩ সদস্যের বিশেষ কমিটি। জেলাভিত্তিক তাঁদের নিয়োগ করা হয়েছে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে। এই বিশেষ কমিটি পঞ্চায়েত নির্বাচন পরিচালনা করবে দলের তরফ থেকে। প্রার্থী বাছাই থেকে প্রচার পর্ব, সবকিছুই ঠিক করা হবে কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার পর। শীঘ্রই কমিটি কাজ শুরু করতে চলেছে বলে খবর।
পঞ্চায়েত নির্বাচন উপলক্ষে অতীতে এমন কমিটি তৃণমূলকে করতে দেখা যায়নি। তাই যেভাবে কমিটি গড়ে দেওয়া হয়েছে তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। সাধারণত পঞ্চায়েত নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রচার করেন না। কিন্তু এবার পরিস্থিতির বদল ঘটেছে। কয়লা পাচার, গরু পাচার থেকে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ড, বিভিন্ন ঘটনায় তৃণমূল চরম অস্বস্তিতে পড়েছে। তৃণমূল মনে করছে এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচন তাদের কাছে কঠিন পরীক্ষা হতে চলেছে। তার একটা বড় কারণ বিধানসভা নির্বাচনে বামেরা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেও কিছুদিন হল তারা নতুন করে অক্সিজেন পেতে শুরু করেছে। বেশ কয়েকটি জেলায় বামেরা তৃণমূলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন বলেই রাজনীতির কারবারিদের একাংশ মনে করছেন। এই অবস্থায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী যদি প্রচার করেন তবে অনেকটাই নিশ্চিন্ত হতে পারবে তৃণমূল। তাই পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষিত হয়ে যাওয়ার পর মমতাকে প্রচারে দেখা যাবে কিনা তা নিয়ে কৌতূহল থাকছেই।
কিন্তু এই কমিটি তৈরি নিয়েও প্রশ্নচিহ উঠছে। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আজ আর নতুন কোনও বিষয় নয়। নন্দীগ্রামের একটি অনুষ্ঠানে মঞ্চে কারা থাকবেন তা নিয়ে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের সামনেই দলের নেতাকর্মীরা ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন। শুধু নন্দীগ্রাম বলে নয়, পূর্ব মেদিনীপুরের একাধিক বিধানসভা কেন্দ্রে এই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। কমবেশি দক্ষিণবঙ্গের বেশিরভাগ জেলাতেই তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে। আর উত্তরবঙ্গের কোচবিহারে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যে সবচেয়ে বেশি, সেটা সকলেই জানেন। তাই পঞ্চায়েত নির্বাচন পরিচালনায় তৃণমূলের যে কমিটি তৈরি হয়েছে তার সদস্যরা কতটা নিজের মতো করে কাজ করতে পারবেন, তা নিয়ে যথারীতি প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। তবে এটা ঠিক, এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে তৃণমূল নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছে না। এর আগে উপনির্বাচনগুলিতে তাদের যে কনফিডেন্স ছিল, তার অনেকটাই উধাও। এর কারণ একটাই, বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে তৃণমূল আজ এতটাই বিদ্ধ, তাতে দলের নেতাকর্মীরা সমস্যায় পড়েছেন। এই পরিস্থিতিতে লোকসভার আগে পঞ্চায়েত নির্বাচন তৃণমূলের কাছে অ্যাসিড টেস্ট ছাড়া আর কিছুই নয়। তাতে শাসক দল একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তার করতে পারে কিনা সেদিকেই চোখ থাকবে রাজনৈতিক মহলের।