পালক্কাদ (কেরালা): প্রায় বছর দশ পর নিখোঁজ হওয়া এক যুবতীর খোঁজ পাওয়া গেল তাঁর প্রেমিকের বাড়ি থেকে৷ এর মধ্যে নিখোঁজ যুবতী বা তাঁর প্রেমিকের বাড়ির লোক কিছুই জানতেন না৷ জানাজানি হওয়ার পর তাঁরা সকলেই বিস্মিত৷ ঘটনাটি ঘটেছে কেরালার পালক্কাদ জেলায়৷ গত ১০ বছর ধরে প্রেমিকা তাঁর প্রেমিকের বাড়িতেই একটি ঘরে ছিলেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নেমারার কাছে আরিয়ুর থেকে নিখোঁজ হয়েছিলেন ১৯ বছর বয়সি এক যুবতী। তাঁর বাড়ির সদস্যরা থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন৷ মামলা দায়ের হওয়ায় পুলিশ তদন্ত শুরু করে৷ তিন মাস আগে যুবতীর প্রেমিকের খোঁজ না মেলায় তাঁর বাড়ির লোকজন পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন৷ এর মধ্যেই তাঁকে নেমারায় তাঁর ভাই দেখে ফেলেন৷ তিনি প্রশ্ন করলে, যুবকটি জানান, তিনি তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে সেখানে রয়েছেন৷ তাঁর কথাবার্তায় সন্দেহ হওয়ায় ভাই পুলিশে খবর দেন এবং মঙ্গলবার পুলিশ যুগলকে আদালতে হাজির করে ৷ জিজ্ঞাসাবাদ করতেই পুরো বিষয়টি জানা যায়। প্রেমিকা আদালতকে জানান, তিনি স্বেচ্ছায় তাঁর প্রেমিকের সঙ্গে রয়েছেন৷
আশ্চর্যের বিষয় এই যে, ওই যুবতীর বাপের বাড়ি প্রেমিকের বাড়ির কাছাকাছি ছিল ৷ তিনি ২০২১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত এই ব্যক্তির সঙ্গে একই ঘরে ছিলেন৷ পেশায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি তাঁর প্রেমিক নিজের ঘরের মধ্যে বৈদ্যুতিন কাজের মাধ্যমে এমন কারসাজি করে রেখেছিলেন, যাতে বাড়ির কেউ সেই ঘরে ঢুকতে না পারে৷ এমনকি ইচ্ছা করে অস্বাভাবিক আচরণ করে পরিবারের সদস্যদের থেকে দূরে থাকতেন৷ সেজন্যই তাঁর ঘরে যে আরও একজন বাইরের কেউ লুকিয়ে রয়েছেন, তা বাড়ির সদস্যরা বুঝতেই পারেননি৷ প্রেমিকই খাবার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ঘরে সরবারহ করতেন এবং তাঁর অনুপস্থিতিতে ঘরটি তালাবন্ধ করে রাখতেন। তবে ঘরের মধ্যে কোনও বাথরুম না থাকায় রাতে জানালা দিয়ে বেরিয়ে প্রাত্যহিক কাজ সেরে ফের ঘরে ফিরে আসতেন ওই যুবতী৷
এ ধরনের কাজ করার কারণ হিসেবে দু’জনেই জানান, তাঁদের দু’জনেরই পরিবারের সামনে নিজেদের প্রণয়ের সম্পর্ক প্রকাশ করার সাহস ছিল না৷ তাই প্রাথমিকভাবে পরিকল্পনা ছিল, যুবতী বাড়ি থেকে পালিয়ে কয়েকদিন প্রেমিকের বাড়িতে লুকিয়ে থাকার পর ধীরে ধীরে বিষয়টি পরিবারের কাছে প্রকাশ করবেন৷ কিন্তু পরে আর্থিক অনটন এবং পরিণতির ভয়ে পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হয়ে যাওয়ায় আর তাঁদের সম্পর্কের বিষয়টি কারও পরিবারকেই জানানো হয়নি৷ তবে এই ঘটনা স্থানীয়রা বিশ্বাস করতে নারাজ৷ স্থানীয়দের দাবি, সাধারণত কেরলের বাড়িগুলির মধ্যে বেশ খানিকটা দূরত্ব থাকে৷ কিন্তু এই এলাকায় বাড়িগুলি একেবারে গায়ে গায়ে বানানো৷ তার মধ্যে এখানকার প্রতিবেশীরা একে অপরের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল ৷ এই পরিবেশে ১০ বছর ধরে এভাবে ঘরের মধ্যে একজন লুকিয়ে রইল, অথচ বাড়ির লোকজন বা প্রতিবেশীরা কিছু জানতেই পারলেন না, এটা অবিশ্বাস্য৷
পুলিশের এক অফিসার জানিয়েছেন, দুই পরিবারের কাছ থেকে সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করে ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে ৷