কলকাতা: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ বছরের শেষ সূর্যগ্রহণের সাক্ষী থাকল পৃথিবীর একটা বড় অংশের মানুষ৷ মধ্য প্রাচ্যের কিছুটা অংশ এবং এশিয়া থেকে এই অভূতপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করেছেন দশ লক্ষেরও বেশি মানুষ৷ এই গ্রহণ নিয়ে নানান দেশে যেমন নানান জনশ্রুতিতে রয়েছে তেমনই আছে নানান কুসংস্কার৷ এই সূর্যগ্রহণ ঘিরে এমনই এক প্রচলিত ধারণা হল এই বিশেষ দিনটিতে ডিম নাকি সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে৷ অবশ্যই সেটা নিজে নিজে নয়৷ তবে যদি কেউ চেষ্টা করে দেখে, সফল হবেই৷
তাই সূর্য গ্রহণের দিন এই ধারণা থেকে উৎসাহী মানুষ ডিম নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে থাকেন৷ ডিমকে সটান দাঁড় করিয়ে খবরের পাতায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন৷ বিশেষত স্কুলপড়ুয়ারা বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে চেষ্টা করে দেখে৷ কারণ তাদের কাছে এর বৈজ্ঞানিক দিকটা বেশি প্রয়োজনীয় বলেই মনে হয়৷ কারণ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় বলা হয় বার্ষিক গতির ফলে নিরক্ষরেখায় বা বিষুব রেখায় সূর্যের গমনকে বিষুব(ইকুইনক্স) বলা হয়৷ সূর্য বছরে দুবার বিষুব রেখার উপর দিয়ে গমন করার ফলে প্রতিবছর দুটি বিষুব ঘটে, সূর্যের উত্তরায়ণের সময় হয় মহাবিষুব (স্প্রিং ইকুইনক্স) এবং সূর্যের দক্ষিণায়নের সময় হয় জলবিষুব (অটাম ইকুইনক্স) ৷ এই দুই সময়ে পৃথিবী সূর্যের চারপাশে তার গতির পথের সমান্তরাল দিকে ঝুঁকে থাকে, যা দিন এবং রাতের দৈর্ঘ্যকে ঠিক একই করে তোলে৷ এইসময় সূর্য,চাঁদ এবং পৃথিবী থেকে সমদূরত্বে হওয়ায় মহাকর্ষের টান সমান হয় এবং এই ধারণা থেকেই অনেকের ধারণা এই বিশেষ দিনগুলোতে ডিমকে সোজা করে দাঁড়ানো যায়৷
তবে এই এত মানুষের উৎসাহ-উদ্দীপনা ম্লান করে দিয়ে বৈজ্ঞানিকরা বলছেন সম্পূর্ণ অন্য কথা৷ তারা বিষয়টিকে আরও সহজ করে দিয়ে বলছেন যে, ডিমকে সোজা করে দাঁড় করাতে কোনো বিশেষ দিনক্ষণ দরকার নেই৷ বরং ধৈর্য ধরে কয়েকবার চেষ্টা করলে যে কেউ যে কোনো সময় এই অবাক করে দেওয়া কান্ডটা চাইলেই করে দেখাতে পারে৷ স্মার্ট সায়েন্স এডুকেশনের সিইও হ্যারি ই কেলারের মতে এই বিষয়টি বুঝতে হলে ভারসাম্য এবং ডিম সম্পর্কে তিনটি জিনিস জানা উচিত৷
প্রথমতঃ, সূর্য,চাঁদ এবং পৃথিবী একসারিতে থাকলে যদি সূর্যের প্রভাব পৃথিবীর উপরে পড়ে তবে সেটা নির্দিষ্ট একটিমাত্র জায়গায় হয় আর সেই জায়গার গতি হয় ঘণ্টায় হাজার মাইল৷ বিষুব বা ইকুইনক্সের সময় এত কম সময়ে মধ্যে কোনও মহাকর্ষীয় পরিবর্তন পৃথীবির কোনো কিছুকেই প্রভাবিত করতে পারেনা যা ডিমের ভারসাম্য রক্ষা করতে সহায়ক এবং এমনকি একটা ডিমকে দাঁড় করানোর মত সময়ও পাওয়া যাবে না৷
দ্বিতীয়ঃ, একটা ডিমের কুসুম যদি ঠিক মাঝ বরাবর থাকে তাহলে এমনিতেই যেকোনো সময় তাকে সোজা দাঁড় করানো যেতে পারে৷ ঠিক যেভাবে মাটিতে আমাদের দুপায়ের গণ্ডির মধ্যে আমাদের নিজস্ব মাধ্যাকর্ষণ কেন্দ্র থাকে৷ যার জন্য একপায়ের তুলনায় দুপায়ে দাঁড়াতে সুবিধা হয়৷
তৃতীয়ত, কেলারের মতে দাঁড়াতে পারে এমন চমৎকারী ডিম 'ঠাকুমার ঝুলি'র গল্পে পাওয়া যায়৷ বছরের যেকোনো দিন যেকোনো সময় একটি দিনকে সোজা করে দাঁড় করানো যায়৷ এর জন্য প্রয়োজন সঠিক ডিম, সামান্য অনুশীলন এবং প্রচুর ধৈর্য৷
কিলারের পাশাপাশি মালয়েশিয়ার সাইন্স ইউনিভার্সিটির অবসরপ্রাপ্ত পদার্থবিজ্ঞানী ডাঃ চং হান ইয়ে-র মতেও এই ঘটনার কোনো যথাযথ প্রমান নেই৷ একই মত পোষণ করে আসছেন বিশ্বের বহু বিজ্ঞানী৷
এতো গেল একটি প্রচলিত ধারণা৷ এমন বহু প্রচলিত ধারণা আছে যা থেকে শুধুমাত্র অজ্ঞতার কারণে মানুষের মনে বদ্ধমূল ধারণা তৈরি হয়৷ অনেকক্ষেত্রে এই বদ্ধমূল ধারণা থেকেই জীবনে বিপদের সম্মুখীনও হতে হয়৷