কলকাতা: ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে ঘাসফুল সমূলে উৎপাটন করে পদ্ম ফোটানোর প্রস্তুতি যখন তুঙ্গে তখন মাঝখান থেকে লাভের গুড় খেতে কোমর বেঁধেছে অল ইন্ডিয়া ইত্তেহাদুল-ই-মুসলিমিন৷ তৃণমূল সুপ্রিমো তথা এরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘুদের তোষামোদি নিয়ে এখনও সোচ্চার বিরোধী দল থেকে শুরু করে হিন্দুত্ববাদীদের একটা বড় অংশ৷ সম্প্রতি এনআরসি ইস্যুতেও পদে পদে একই অভিযোগের সম্মুখীন মমতা৷ কিন্তু এবার এই ইস্যুকে নিয়ে উল্টোসুরে সমালোচনা শুরু করেছে তেলেঙ্গানা ভিত্তিক আঞ্চলিক দল এআইএমআইএম৷
কিছুদিন আগেই মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘিতে এক জনসভায় এনআরসি ইস্যুতে নাম না করে এআইএমআইএম প্রধান আসাদউদ্দিনওয়াইসিকে বিজেপির দালাল বলেছিলেন মমতা৷ আর তখন থেকেই জোরদার হয়েছে বিরোধিতা৷ আর তার সঙ্গেই প্রকট হচ্ছে ২০২১-এর আগেই এরাজ্যে আর এক বিরোধী দল হিসেবে নিজেদের জায়গা পাকা করা৷ লক্ষ্য বাংলার মসনদ৷ তাই মুসলিম নয় তবে এব্যাপারে এখনই থেকেই সামলে চলতে চাইছেন ওয়াইসি৷ রাজ্যে এআইএমআইএম-এর ভারপ্রাপ্ত জামিরুল হাসানের কথায় তারই ইঙ্গিত স্পষ্ট৷
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন আগামী বিধানসভা নির্বাচনে এরাজ্যে তাদের দল ক্ষমতায় এলে দলিত মুখ্যমন্ত্রী পাবে রাজ্য৷ অর্থাৎ শুধু সংখ্যালঘু নয় তৃণমূল, বিজেপির জাতি-ধর্ম পক্ষপাতের তকমা এড়াতে রাজ্যের পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়গুলিকে নিয়েও ঘুঁটি সাজাচ্ছে দল৷ তার সঙ্গে হাতিয়ার করা হচ্ছে অনগ্রসর সম্প্রদায়গুলির সঙ্গে কেন্দ্র-রাজ্যের বঞ্চনার লম্বা লিস্ট৷ কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য৷ ইতিমধ্যেই নাকি ১০ জন উচ্চশিক্ষিত দলিতের নামের তালিকাও তৈরি৷ যেখানে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী থেকে শুরু করে অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের নামও রয়েছে৷ সগঠন মজবুত করতে সৈয়দ ওয়াসিম ওয়াকারের পর্যবেক্ষণে নানান কর্মসূচিও শুরু হয়ে গেছে৷
জামিরুল জানিয়েছেন ইতিমধ্যে রাজ্যের ২০০ ব্লকে সংগঠিত হয়েছে এআইএমআইএম৷ বাকি ব্লকগুলিতেও কাজ চলছে৷ প্রতিটি বুথেই সদস্য দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে চলেছে দল৷ শুধু বিধানসভা নয় পুরসভাতেও প্রার্থী দেবে দল৷ দলের মিছিল-মিটিংয়ে জেলায় জেলায় ব্যাপক সাড়া মিলছে৷ লক্ষ লক্ষ মানুষের জমায়েত হচ্ছে দলের কর্মসূচিতে৷
সরকার গঠন প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন যে তারা কোনোদিনই বিজেপির পক্ষে ছিলেন না৷ বরং নন্দীগ্রামকাণ্ডে তৃণমূলের পাশে থেকে এই দলের পক্ষেই সায় দিয়েছিলেন দলের প্রধান ওয়াইসি৷ তবে এবার তারা এককভাবেই এগোতে চাইছেন৷ শাসক দল সহ এরাজ্যের কংগ্রেস-সিপিএম জোটকে ধরাশায়ী করবেন বলেও চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন জামিরুল৷ বলেছেন ২০২১ সালে শুধুমাত্র বিজেপি বনাম এআইএমআইএম থাকবে৷ আর ততদিনে তৃণমূলের চিত্রই মুছে যাবে রাজ্য থেকে৷
এর আগে এআইএমআইএম-এর প্রধান আসাউদ্দিন ওয়াইসি দাবি করেন যে এরাজ্যে সংখ্যলঘুদের জন্য কিছুই করে উঠতে পারেনি মমতা সরকার৷ এবার ওই একই সুর রাজ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত জমিরুল হাসানের গলায়৷ তিনি স্পষ্টতই জানিয়ে দিয়েছেন, এরাজ্যে মুসলিমদের বোকা বানানো হচ্ছে৷ এবিষয়ে কর্মক্ষেত্রগুলির কথা বিশেষ করে উল্লেখ করেছেন তিনি৷ রীতিমত হিসেব তুলে ধরে হাসান জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের সময় ৬৫ জন মুসলিম ছেলে লিখিত পরীক্ষায় পাশ করে৷ কিন্তু ইন্টারভিউতে প্রত্যেকের নাম বাদ পড়েছে৷ মাদ্রাসাতে যারা নিযুক্ত হয়েছেন সেই আড়াই হাজার শিক্ষক সঠিক বেতন পাচ্ছেন না৷ বেতনের দাবিতে তারা অনশন শুরু করেছেন৷ মুখ্যমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা সহ একাধিক মন্ত্রী গিয়ে আশ্বাস দিলেও কোনো সুফল মেলেনি৷ উৎসব অনুষ্ঠানে পুজো কমিটিগুলোকে ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়ার পরিবর্তে শিক্ষকদের প্রাপ্য মেটানোর জন্য সেই টাকা দেওয়া হচ্ছে না কেন বলেও প্রশ্ন তুলেছেন জামিরুল৷
তাঁর মতে তৃণমূলের আমলে এরাজ্যে কোনো শিল্প-কারখানাও হয়নি৷ তাই পেটের দায়ে বাধ্য হয়েই ভিনরাজ্য যেতে হচ্ছে অনগ্রসর ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষকে৷ অবশ্য সেখানে গিয়েও তাদের নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে৷ এপ্রসঙ্গে সম্প্রতি কাশ্মীরে নিহত এরাজ্যের মুসলিম শ্রমিকদের কথা উল্লেখ করেন তিনি৷ জামিরুল জানিয়েছেন ২০২০-র শুরুতেই কলকাতায় আসার কথা ওয়াইসির৷ সেই সময় ব্রিগেডে একটি সামবেশ করার পরিকল্পনা রয়েছে৷
এপ্রসঙ্গে অতীতের স্মৃতি তুলে ধরে এআইএমআইএম-এর জামিরুল হাসান বলেন গত লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্যে তাদের ৩৫ জন প্রার্থীর নামের তালিকা তৈরি করা হয়েছিল কিন্তু এতে তৃণমূলের ভোটে আঁচ পড়তে পারে বিশেষত বিজেপি ভাগ বসাতে পারে সেই চিন্তাভাবনা করেই ওয়াইসির নির্দেশেই পিছিয়ে আসে দল৷ কিন্তু তাতে এরাজ্যের সংখ্যালঘুরা কোনো লাভের মুখ তো দেখেইনি৷ উল্টো তাকেই ‘বিজেপির দালাল’ বলেছেন মমতা৷ তাই নিজেদের সম্প্রদায়ের অধিকারের জন্য এবার নিজেরাই লড়াই করবে দল৷
সুতরাং শাসক দলের বিরুদ্ধে রাজ্যে বিজেপিকে টেনে আনার পাল্টা অভিযোগ তুলে বাংলার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে হাতিয়ার করে ওয়াইসি তথা এআইএমআইএম-এর বঙ্গ বিজয়ের এই পরিকল্পনা যে আগামী দিনে শাঁখের করাত হয়ে উঠতে চলেছে তৃণমূল সুপ্রিমোর জন্য তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না৷