নয়াদিল্লি: প্রায় এক মাস হতে চলল৷ নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউন গোটা দেশ৷ গত ২৫ মার্চ সারা দেশে ২১ দিনের জন্য লকডাউন ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ কিন্তু এই ২১ দিনে কাবু করা যায়নি করোনাকে৷ করোনা কাঁটায় বিদ্ধ ভারতকে সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতে শেষ পর্যন্ত ৩ মে পর্যন্ত লকডাউনের মেয়াদ বাড়াতে বাধ্য হন প্রধানমন্ত্রী৷
কিন্তু দিন দশ আগে লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে বেশ কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছিলেন নমো৷ কিন্তু তাঁর এই আংশিক ছাড়ে পরিস্থিতি আরও দিশেহারা৷ ২০ এপ্রিল থেকে দেশের ৪৫ শতাংশ অর্থনৈতিক কার্যকলাপ শুরু হওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়৷ ২৫ মার্চ থেকে থমকে থাকা কাজে ধীরে ধীরে গতি ফিরতে শুরু করে৷ তথ্যপ্রযুক্তি ও ই-কমার্সের পাশাপাশি কৃষিকাজ, মৎসশিল্পে ছাড় দেয় কেন্দ্র৷ শুরু হয়েছে নির্মাণকাজ৷
ছুতোর, কল মিস্ত্রি বা ইলেকট্রিসিয়ানদের মতো দিন মজুরদেরও কাজ শুরু করার অনুমতি দেওয়া প্রয়োজন ছিল৷ কিন্তু বদলে করোনা জোনের বাইরে থাকা অঞ্চলগুলিতে ব্যাংক, হাসপাতাল, এটিএমের পাশাপাশি সরকারি দফতর খোলার অনুমতি দেয় কেন্দ্র৷ তবে ছাড় মিললেও, বলা হয় সোশ্যাল ডিস্টেনসিং মাস্ট৷ রাজ্যগুলি এই ছাড় দেবে কিনা, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে তাদের হাতেই৷ স্বারাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ‘‘সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘব করতে কিছু কিছু কাজে ছাড় দেওয়া হবে৷ ২০ এপ্রিল ২০২০ থেকে তা কার্যকর হবে৷ তবে লকডাউন নির্দেশিকা মেনেই এই কাজগুলি পরিচালনা করবে রাজ্যসরকার, কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল বা জেলা প্রশাসন৷’’
এই বিবৃতি প্রকাশিত হতেই, একাধিক রাজ্য সিদ্ধান্ত নেয় যে, কোনও রকম ছাড় দওয়া হবে না৷ ৩ মে পর্যন্ত কঠোর ভাবেই পালন করা হবে লকডাউন৷ লখনউয়ের এক হোমিওপ্যাথি ওষুধ ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘কাঁচা মাল নেই৷ বন্ধ যানবাহন৷ কাজে আসতে পারছেন না কর্মীরাও৷ ফলে কাজ চালাতে পারছি না৷’’ কোভিড-১৯ এর সঙ্গে যুঝতে থাকা রাজ্যগুলির সিদ্ধান্তে স্বভাবতই ধাক্কা খায় কেন্দ্রের পরিকল্পনা৷
অন্যদিকে, দেশে ছিল করোনা টেস্টিং কিটের আকাল৷ ফলে করোনার শিকড় কতটা গভীরে পৌঁছেছে তার কিনারা করা সম্ভব হচ্ছিল না৷ গত মাসে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর তরফে জানানো হয়েছিল, ভারতে মাত্র ৪২,৭৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে৷ ১৩০ কোটির দেশে এই সংখ্যা নেহাতই হাস্যকর৷ তবে চলতি মাসে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়৷ ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত চার লক্ষেরও বেশি মানুষের টেস্ট করা হয়েছে৷ পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে আক্রান্তের সংখ্যাও৷ দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ২০ হাজার পেরিয়ে গিয়েছে৷
এই পরিস্থিতিতে লকডাউন হালকা করার সিদ্ধান্ত বুদ্ধিমানের কাজ নয়৷ সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতে মানুষকে ঘর বন্দি রাখা এবং একই সঙ্গে অর্থনীতিকে সচল করা একটি কঠিন বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ দিনে ১৫০ টাকারও কম রোজগার করা কয়েক লক্ষ শ্রমিক ঘরে বসে রয়েছে৷ ক্ষুধার জ্বালায় জ্বলছে দেশ৷
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্টের অর্থনীতিবিদ রীতিকা খেরা বলেন, ‘‘একই সঙ্গে ত্রিফলায় বিদ্ধ ভারত৷ মহামারির জেরে দেখা দিয়েছে স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা, লকডাউনের ধাক্কায় ধয়াশায়ী অর্থনীতি৷ এর সঙ্গে জুড়েছে মানবিকতার অভাব৷ দেশের একটা বড় অংশের মানুষ কী ভাবে দিন কাটাবে সে বিষয়ে চিন্তা ভাবনার অভাব রয়েছে কেন্দ্রের৷ তাঁদের পরিস্থিতিকে উপেক্ষা করা হচ্ছে৷ বিনা পয়সায় চাল-ডাল দিয়ে কতদিন দেশবাসীকে লকডাউনের খাঁচায় বন্দি রাখা হবে৷ কীভাবেই বা অর্থনীতি সচল হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়৷