লখনউ: দুই পোষ্য এবং এক ছেলেকে নিয়ে ছোট সংসার উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ের বাসিন্দা সুশীলা ত্রিপাঠির। বাড়ির পোষ্যদের নিজের সন্তানের মতই ভালবাসতেন তিনি। তাদের দেখাশোনা, যত্নআত্তি, পরিচর্যার মধ্যে দিয়ে কাটত অশীতিপর ওই বৃদ্ধার দিনের অধিকাংশ সময়। তাদের খেতে দেওয়া, বেড়াতে নিয়ে যাওয়া সব কাজই তিনি নিজের হাতেই করতেন। কিন্তু সেই সন্তানসম পশুর হাতেই যে তাকে এভাবে বেঘরে প্রাণ দিতে হবে তা কেউ কোনদিন কল্পনাও করতে পারেননি। সম্প্রতি লখনউয়ের এই বৃদ্ধার ছিন্ন ভিন্ন মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে তার বাড়ি থেকে। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, বাড়ির পোষা পিটবুল কুকুরের হামলাতেই ছিন্নভিন্ন হয়ে ওই বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, ৮২ বছর বয়সী সুশীলা ত্রিপাঠী লখনৌয়ের কায়সরবাগের বাসিন্দা। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষিকা। বৃদ্ধার ছেলে পেশায় একজন জিম ট্রেনার। সম্প্রতি তাঁর ছেলে বাড়িতে একটি ল্যাব্রাডর এবং একটি পিটবুল কুকুর পোষেন। দুটি কুকুরই অত্যন্ত শান্ত স্বভাবের বলে দাবি ওই বৃদ্ধার ছেলে। কিন্তু তার পোষা ব্রাউনি নামের ওই পিটবুল কুকুরের হামলাতেই সম্প্রতি সুশীলা দেবীর মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রোজ সকালে কুকুরদুটিকে নিয়ে হাঁটতে বের হতেন ওই বৃদ্ধা। বুধবার সকালেও তাদের নিয়ে তিনি হাঁটতে বের হচ্ছিলেন। কিন্তু হঠাৎই ব্রাউনি নামের ওই পিটবুল কুকুরটি রেগে গিয়ে ওই মহিলার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাঁর সারা শরীরে একের পর এক কামড় বসাতে শুরু করে সে। অসহায় রক্তাক্ত অবস্থায় সুশীলা দেবী বারংবার আর্তনাদ করলেও কেউই শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচাতে পারেননি বলে খবর। শেষে বাড়ির কাজের লোকের চেষ্টায় কুকুরটিকে সুশীলা দেবীর ওপর থেকে কোনরকমভাবে সরানো হয় এবং দ্রুত ওই বৃদ্ধাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া মাত্রই চিকিৎসকরা সুশীলা দেবীকে মৃত বলে ঘোষণা করেছেন।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, ওই বৃদ্ধার শরীরে মোট ১২টি জায়গায় গভীর ক্ষত পাওয়া গিয়েছে। তাঁর হাত, পা, পেট, পিঠ সর্বত্র কামড়ানো চিহ্ন রয়েছে। এমনকি তাঁর মাথাতেও একটি গভীর ক্ষত রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। অন্যদিকে ওই বৃদ্ধার ছেলের দাবি কুকুরটি বৃদ্ধার ছেলেকে দেখামাত্রই ফের শান্ত হয়ে যায়। তবে হঠাৎ কি কারণে এই পোষ্য কুকুরটি এমন হিংস্র হয়ে উঠল এই মুহূর্তে মাথাচাড়া দিচ্ছে সেই প্রশ্নই।
তবে পশু চিকিৎসকদের দাবি, পিটবুলের এহেন আচরণ নতুন কিছু নয়। স্বাভাবিকভাবেই এই কুকুর অল্পে রেগে যায় এবং কখনো কখনো প্রভুর ওপরেই ঝাঁপিয়ে পড়ে। এর আগেও এই কুকুরের হাতে বহু মানুষের প্রাণ দিয়েছে।