হায়দরাবাদ: স্বপ্ন ছিল আইএএস অফিসার হওয়ার৷ কিন্তু সাফল্য তো সবসময় কাঙ্ক্ষিত পথে ধরা দেয় না৷ তবে ব্যর্থতার পরিণতি যে কত মর্মান্তিক হতে পারে, তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ বোধ হয় তেলেঙ্গানার ওয়ারাঙ্গলের রজনী টোপা কুলা৷ চেয়েছিলেন আইএএস অফিসার হতে৷ করতেন এক বহুজাতিক সংস্থার মানবসম্পদ (এইচআর) বিভাগের ম্যানেজারের চাকরিও৷ নিয়তি তাঁকে নামিয়ে আনল রাস্তায়৷ যাঁর লক্ষ্য ছিল প্রশাসনের সর্বোচ্চ অলিন্দে পা রাখা, সেই রজনীর মুখে উঠল রাস্তার ডাস্টবিনে পড়ে থাকা উচ্ছিষ্ট খাবার৷ সত্যি, জীবন কত নিষ্ঠুর!
মাসকয়েক আগের কথা৷ ঘটনাস্থল, উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরের তেওয়ারিপুর থানার নিকটবর্তী এক এলাকা৷ পথচলতি মানুষ দেখলেন, পুড়িয়ে দেওয়া রোদের মধ্যে আটখানা পোশাক পরে বসে আছেন একটি মেয়ে৷ আর কুড়িয়ে নিয়ে খাচ্ছেন ডাস্টবিনে পড়ে থাকা শুকনো ভাত৷ খবর গেল থানায়৷ দুই পুলিশকর্মী আসতেই তাঁদের সঙ্গে তুখোড় ইংরেজি আর ভাঙা হিন্দিতে কথা বলতে শুরু করলেন মেয়েটি৷ বার্তা পৌঁছল ওপরমহলে৷ শেষ পর্যন্ত মাতৃছায়া চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশনের হাতে পুলিশ তুলে দিল মেয়েটিকে৷ শুরু হল চিকিৎসা৷ মানসিক চিকিৎসায় অবস্থার উন্নতি হতেই সামনে এল রোমহর্ষক কাহিনি৷
জানা গিয়েছে, ২০০০ সালে প্রথম শ্রেণির এমবিএ ডিগ্রি লাভ করেছিলেন রজনী৷ স্থির করেছিলেন, আইএএস অফিসার হবেন৷ দু’বার পরীক্ষাও দেন৷ শিকে ছেঁড়েনি৷ ডুবে যান হতাশায়৷ অবসাদ কাটাতে এর পর চাকরি নেন হায়দরাবাদের এক বড় সংস্থার এইচআর ম্যানেজার হিসেবে৷ কিন্তু তাতেও কাটল না হতাশা৷ সব সময় কুরে কুরে খেত আইএএস অফিসার হতে না-পারার যন্ত্রণা৷ বাড়তে থাকে অবসাদ৷ হারাতে হয় ম্যানেজারের চাকরি৷ আরও নষ্ট হয়ে যায় মানসিক ভারসাম্য৷ বেরিয়ে পড়েন বাড়ি ছেড়ে৷ কী করে যে উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরে পৌঁছে গেলেন, তা মনে করতে পারেন না রজনীও৷
এখন অবশ্য পরিস্থিতি বদলেছে৷ চিকিৎসা আর কাউন্সেলিংয়ের সৌজন্যে অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছেন রজনী৷ মাতৃছায়ার সদস্যদের দিতে পেরেছেন ওয়ারাঙ্গলের হনমকান্ডায় তাঁর বাড়ির ঠিকানা৷ বাড়ির লোকেদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ফাউন্ডশনের সদস্যরাই৷ বাড়ির লোক বলতে অসুস্থ বাবা, বৃদ্ধা মা আর এক ভাই৷ ওঁরা গোরক্ষপুরে আসতে পারেননি৷ তাই মাতৃছায়ার সদস্যরাই হায়দরাবাদে গিয়ে রজনীকে দিয়ে এসেছেন পরিবারের ছায়ায়৷ এখন রজনী কাটিয়ে অপেক্ষা শুধু নতুন ভোরের৷