নয়াদিল্লি: করোনা পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে ক’দিন বাদে বলতে হবে এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ নয়৷ এই মৃত্যুপুরী ভারতবর্ষকে আমরা চিনি না৷ করোনা নামক অতিমারিতে একের পর এক মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন৷ চিকিৎসকরাও কিছু করতে পারছেন না, তাঁদের হাত-পা বাঁধা৷ শুধু অসহায়ের মতো কাঁদছেন তাঁরা৷ হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছেও নিয়মের বেড়াজালে আটকে যাচ্ছেন অনেকে৷
এমনই এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখা গেল দিল্লির রাস্তায়। মঙ্গলবার সকালে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল কোভিড কেয়ার সেন্টারে করোনা আক্রান্ত মাকে নিয়ে এসেছিলেন এক যুবক। কিন্তু অনেক অনুনয় বিনয় করার পরও একবারের জন্যও গেটই খোলেনি সেই হাসপাতাল। অগত্যা করোনা হাসপাতালের বাইরে একটি অটোয় অসুস্থ মাকে বসিয়ে রেখে অপেক্ষা করছিলেন তিনি। বছর আঠাশের ওই যুবক মাকে চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে বাঁচানোর চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখেননি৷ কিন্তু অটোর মধ্যে পড়ে থাকতে থাকতেই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন ওই মহিলা৷ মায়ের মৃত্যুর পর যুবক ফুটপাতের ওপর বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন।
কাঁদতে কাঁদতে অসহায় ছেলে মুকুল ভ্যাস বলেন, ‘ওঁরা আমার মাকে মেরে ফেলল । কত কাঁদলাম মাকে একবার দেখার জন্য। আমাকে আগে সব নিয়ম কাগজপত্র পূরণ করতে বলল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে এই সব করতে করতে আমার মা চলেই গেল।’’ মুকুলকে বলা হয়েছিল তাঁর মা বছর বাহান্নর কিরণ দেবীকে ভর্তি করাতে হলে ডিএসওর অনুমতিপত্র লাগবে। সংবাদমাধ্যমের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন মুকুল৷ কাঁদতে কাঁদতেই বলেন, ‘যখন কেউ মারা যাচ্ছেন, তখন সত্যিই কি ১০০টা নিয়ম মানার সময় থাকে? বিনা চিকিৎসায় আমার মা চলে গেলেন৷’
উল্লেখ্য, টানা সাত দিন দেশে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লক্ষ ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লক্ষ ৬২ হাজার মানুষ। মৃত্যু হয়েছে ৩,২৮৫ জনের। সবচেয়ে শোচনীয় অবস্থা এখন দিল্লির। কাতারে কাতারে মানুষ মারা যাচ্ছে বিনা চিকিৎসায়।