তিয়াষা গুপ্ত: চৌকিদার চোর হ্যায়। এভাবেই বারেবারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ফালাফালা করেছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। এদিন বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকের দ্বিতীয় দিনে মোদী রাহুলকে নিশানা করলেন। তাঁর কথায়, চৌকিদার কাউকে রেয়াত করবে না। একইসঙ্গে তিনি বলেন, মজবুর নয়, মজবুত সরকার উপহার দেওয়াই তাঁর লক্ষ্য। মানুষ ঠিক করুন কাকে তাঁরা বেছে নেবেন। যিনি মাঝে মধ্যেই ছুটি কাটাতে বেপাত্তা হয়ে যান, তাঁকে না মোদীকে দেশবাসী বেছে নেবেন? সরাসরি তাঁদের দিকে এই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন মোদী। স্থান রামলীলা ময়দান।
গত বছর দেশবাসী প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীকে হারিয়েছেন। তাঁকে স্মরণ করলেন মোদী। তাঁর কথায়, এই প্রথম জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক হচ্ছে অটলজিকে ছাড়া। কংগ্রেস পার্টিকে আক্রমণ করে মোদী বলেন, আমাদের আগের সরকার দেশকে অন্ধকারে ডুবিয়ে দিয়েছে। এটা ভুল হবে না যদি বলি ১০ বছরে দেশ দুর্নীতি ও কেলেঙ্কারিতে ডুবে গিয়েছিল। কংগ্রেস কীভাবে অযোধ্যা মামলা ঝুলিয়ে রেখেছ, সেই অভিযোগ তুলেও তাদের আক্রমণ করেন মোদী। তাঁর কথায়, চৌকিদার কাউকে রেয়াত করবে না। এটা তো সবে শুরু। অগাস্টা ওয়েস্টল্যান্ড তদন্ত চলছে। কংগ্রেস ইতিমধ্যেই ভয়ে সিঁটিয়ে আছে।
গত ৪ বছরে মহিলাদের ক্ষমতায়ণে অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সরকারের বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও নিয়ে এখন বিরোধীরা কটাক্ষ করছে। কৃষক সমস্যা নিয়ে নাজেহাল হয়েছেন মোদী। সেই নিয়ে এদিন মুখ খুললেন তিনি। তাঁর কথায়, আগের সরকার অনাচদাতাকে(কৃষক) মানদাতা (ভোটার) হিসেবে দেখত। ২০২২ সালের মধ্যে কৃষকের আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে আমরা দিন-রাত কাজ করছি। নতুন ভারত গড়তে ১০ শতাংশ কোটা এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। দাবি প্রধানমন্ত্রীর।
মোদী আগেও বলেছেন, এদিনও বললেন, তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ নেই। যদিও বিরোধীরা রাফালে থেকে নীরব মোদী নিয়ে নরেন্দ্র মোদীকে ফালাফালা করছে। আগে সংসদে প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারমন আসরে নামেন। রাফালে নিয়ে মুখ খোলেন। এদিন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেন, রাফালে নিয়ে কয়েক হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি ঠেকিয়েছেন মোদী।
বিরোধীদের জোট গড়ার প্রয়াস নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি জেটলি। তাঁর কথায়, কংগ্রেসের শাহজাদা, বাংলার দিদি, আন্ধ্রাপ্রদেশের বাবু, উত্তর প্রদেশের বহেনজি- সবার মনেই সুপ্ত বাসনা। সবাই নির্বাচনের পর পকেট থেকে আস্তিন বের করবেন। অর্থাৎ সবাই যে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার লক্ষ্যে মুখ বুজে আসেন, তা ভালো করে বুঝিয়ে দেন জেটলি। উত্তর প্রদেশ সরকার গত দেড় বছরে ১৮ লাখ দরিদ্রকে বাড়ি করে দিয়েছে, দাবি মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের।
সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে আগেও বারবার গর্ব অনুভব করেছে মোদী সরকার ও তার বাহিনী। এদিন নির্মলা সীতারমন বলেন, ২০১৪ সালের পর থেকে দেশে কোনো সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনা ঘটেনি। গতকাল রামলীলা ময়দানে বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকের উদ্বোধন হয়। সেখানে হাজির ছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ, লালকৃষ্ণ আদবানি প্রমুখ। সভার সূচনায় ভাষণা দিতে গিয়ে অমিত শাহ বলেন, আমরা মন্দির চাই।
লোকসভা ভোট দোড়গড়ায়। বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতি বৈঠকে ফোকাস ১৯। তবে বাংলাকে বিজেপি যে প্রথম থেকে গুরুত্ব দিচ্ছে, তা আরো একবার প্রমাণ হয় অমিত শাহর কথায়। তাঁর বার্তা, ১৯-এ বিজেপি দিল্লিতে ক্ষমতায় ফিরলে পরবর্তী লক্ষ্য হবে বাংলা দখল। একইসঙ্গে জানিয়ে দেন, বাংলায় ক্ষমতায় আসতে প্রস্তুত বিজেপি। এর আগে লোকসভায় বাংলা থেকে ৫০ শতাংশ আসন পাওয়ার টার্গেট বেঁধে দিয়েছিলেন অমিত। সেবারও অমিতের সমালোচনায় সরব হয়েছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এবারও সেই ধারা অব্যাহত থাকল। তাঁর কথায়, এটা অমিত শাহর দিবাস্বপ্ন। সে যাই হোক, এককথায়, আক্রমণের ঝাঁঝ তীব্র করে জাতীয় কর্মসমিতির মঞ্চ থেকে রণাঙ্গণে বিজেপি।