পুলওয়ামা কাণ্ড-ই কি মোদিকে ফিরিয়ে আনবে ক্ষমতায়?

আজ বিকেল: পুলওয়ামা কাণ্ড-ই লোকসভা ভোটের প্রস্তুতির মুহূর্তে শাপে বর হয়ে এসেছিল রাজনৈতিক দলগুলির কাছে। কি বিরোধী কি ক্ষমতাসীন বিজেপি, প্রায় প্রত্যেকেই এই হামলাকে হাতিয়ার করে ভোটের বাজারে জন সমর্থন জোগাড়ে নেমে পড়ে। ঘটনার দিন জিম করবেট উদ্যানে একটি শ্যুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন নরেন্দ্র মোদি। ততক্ষণে সিআরপিএফ কনভয়ে ২৫০ কেজি আরডিএক্স সহ হামলার ঘটনা ঘটে গিয়েছে।

পুলওয়ামা কাণ্ড-ই কি মোদিকে ফিরিয়ে আনবে ক্ষমতায়?

আজ বিকেল:  পুলওয়ামা কাণ্ড-ই লোকসভা ভোটের প্রস্তুতির মুহূর্তে শাপে বর হয়ে এসেছিল রাজনৈতিক দলগুলির কাছে। কি বিরোধী কি ক্ষমতাসীন বিজেপি, প্রায় প্রত্যেকেই এই হামলাকে হাতিয়ার করে ভোটের বাজারে জন সমর্থন জোগাড়ে নেমে পড়ে। ঘটনার দিন জিম করবেট উদ্যানে একটি শ্যুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন নরেন্দ্র মোদি। ততক্ষণে সিআরপিএফ কনভয়ে ২৫০ কেজি আরডিএক্স সহ হামলার ঘটনা ঘটে গিয়েছে। সে খবর পেয়েও শ্যুটিং বন্ধ করে কাজে ফেরেননি মোদি। বরং বেশ হেসে হেসেই ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়ার বিজ্ঞাপন করেছেন। সেই বিজ্ঞাপনের মেকি হাসির মধ্যেই চাপা পড়ে গিয়েছে ৫০জন জওয়ানের অসহায় মৃত্যু ও তাঁদের পরিবারবর্গের শোকগাথা।

বিরোধী শিবিরে ততক্ষণে শোরগোল পড়েছে। বাস্তবিক পক্ষেই প্রশ্ন আসবে, জম্মু কাশ্মীর রাষ্ট্রপতি শাসিত অঞ্চল। তায় পাকিস্তানের সীমান্ত ঘেঁষা হওয়ায় সেনা পুলিশের কড়া নিরাপত্তা রয়েছে সবসময়। তারপরেও কীকরে সিআরপিএফ কনভয়ের মধ্যে ঢুকে পড়ল জঙ্গির গাড়ি? এমনিতে উপত্যকা স্পর্শকাতর এলাকা, তাই প্রতি ৫০ মিটার অন্তর অন্তর থাকে পুলিশ চৌকি, সেনা কনভয়ের রাস্তায় যখন জঙ্গির বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি এল তখন কি সমস্ত চৌকি গুলির দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্মীরা ঘুমোচ্ছিলেন?

প্রশ্ন এখানেই শেষ হয়ে যায় না, অকুস্থল অবন্তীপুরায় জঙ্গি হামলা হতে পারে, গোয়েন্দা দপ্তরের আগাম সতর্কতা থাকলেও প্রশাসন, পুলিশ কী করছিল? কেন পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? একসঙ্গে এতজন সেনার কনভয় সাধারণত যায় না। গেলেও আগে মহড়া হয়, এমনকী যখন সেনা কনভয় যায় তখন রাস্তার দুপাশে সশস্ত্র নিরাপত্তা রক্ষী-সহ থাকে লেজার রশ্মীর প্রাচীর। যদিও ১৪ ফেব্রুয়ারি এর কোনওটিই ছিল না। কেন ছিল না তানিয়ে জবাবদিহি চাইলেও সেনা বা মোদি সরকার যুক্তিসঙ্গত কোনও উত্তর দিতে পারেনি। তাহলে বার বার পাকিস্তানের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে মোদি কি নিজের পকেট ভরেছেন। সেনার ন্যূনতম নিরাপত্তা যে সরকর দিতে পারে না কেন সেই দেশের জন্য নিজেদের প্রাণ দেবে সেনাবাহিনী।

নিন্দুকরা বলে ভোটের বাজারে টপে থাকতে ৫০জন সেনার প্রাণের বিনিময়ে সওদা করেছেন মোদি। পাক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই মহম্মদের সঙ্গেই হয়েছে এই সওদা। আমার সেনাও যাবে তোমরা হামলাও করবে। পরে ভারতীয় মুসলমিদরে জন্য এতবড়া হামলা চালানোর সুয়োগ পেয়েছে পাকিস্তান এসব বলে বিষয়টি অন্যদিকে মোড় ঘুরিয়ে দেব। সোজা সাপ্টা হিসেব। যখন বিরোধীরা জবাব চাইবে, তখন ধর্মীয় বিভাজনের কাঁদুনি গেয়ে ফের বলা হবে, মুসলিমদের ভারতছাড়া করো, নাগরিকত্ব বিল এনে অহিন্দুদের দেশ থেকে তাড়াতে হবে। আর প্রতিবাদে নামা বিরোধীরা তো পাকিস্তানের সমর্থক। গোটা বিষয়টি কেমন ছেলেখেলা হয়ে গেল না। দিনকয়েক নীরব থেকে আচমকা এয়ারস্ট্রাইক নিয়ে তোলপাড় হওয়া। যখন শত্রুপক্ষকে এই মর্মান্তিক পরিণতির প্রত্যুত্তোর দিতে যাবে তখন এত দেখনদারির কি আছে। লোক জানিয়ে বায়ুসেনা হামলা অর্থ তো দেখো বিজেপি সরকার দেশের জন্য কতভাবে। তাই তো বালাকোটে জঙ্গিঘাঁটি বিস্ফোরণে গিয়েছে বায়ুসেনা। আদৌ সার্জিক্যাল স্ট্রাইক টু হয়েছে কি না তানিয়েও জনমনে সন্দেহের শেষ নেই। এই সন্দেহ প্রকাশ করে ইতিমধ্যেই পাকিস্তানের স্বজন হিসেবে বিজেপির কাছে পরিচিতি পেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাহুল গান্ধী। মানো চাই না মানো পাকিস্তান নিয়ে কেন্দ্র যা সিদ্ধান্ত নেবে তা মাথা পেতে স্বীকার করতে হবে, নাহলেই দেশদ্রোহীর তকমা পাবে। একুশে আইন চলছে গোটা দেশে। ভোটের ময়দানেও সেনার রক্ত নিয়ে সমর্থন কুড়োচ্ছেন চৌকিদার।

আবার জনমনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া মুছে দিতে এয়ার স্ট্রাইককেই মোদির সাফল্যের খতিয়ান হিসেবে ধরা হচ্ছে। এর জেরে ৫০ জন সিআরপিএফ জওয়ানের অসহায় মৃ্ত্যুর দায় ঢাকাই পড়ে গেল। কী করে এত বড় দায়বদ্ধতাকে এড়িয়ে যায় কেন্দ্র? ভোটের ময়দানে মানবতাকেই সওদা করছে, এখনও বলবেন নৈতিকতা ভারতীয়দের মূল ধর্ম? যোগী ভোট প্রচারে গিয়ে বলছেন, মোদিজির সেনা পাকিস্তানে গিয়ে জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়ে এসেছে। গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোয় কীকরে পাঁচ বছরের ক্ষমতাসীন এক প্রধানমন্ত্রীর এক্তিয়ারে চলে যায় দেশের সেনা? যোগী কি এর ব্যাখ্যা দিতে পারবেন?

ভারতীয় সেনার এই অপমানেও দেশের শীর্ষ আদালত চুপ, বলাবাহুল্য, সে তো আগেই বিক্রি হয়ে বসে আছে। নাহলে সিবিআই প্রধান আলোক বর্মাকে সরিয়ে রাজেশ আস্তানা দায়িত্ব নেওয়ার সুযোগ পেতে পারেন? উর্জিত প্যাটেল বা তাঁর পূর্বসূরি রঘুরাম রাজন আরবিআই-এর এই দুই প্রাক্তন গভর্নর কেউই কিন্তু নোটবন্দির দায়ভার নিতে রাজি নন। মোদির একার সিদ্ধান্তেই যে এই বিরাট ঘটনাটি ঘটেছিল, দুজনের পদত্যাগেই তা নিশ্চিতষ এনডিএ সরকারের এহেন বহুমুখী প্রতিভার বিচ্ছুরণতো সকলেই দেখলেন। প্রশ্নও শুনলেন, উত্তরটা না হয় আপনারাই দেবেন।

জানান আপনার মতামত৷ আপনার দেওয়া মতামত প্রকাশিত হবে AajBikel.com-এ৷

[contact-form][contact-field label=”Name” type=”name” required=”true” /][contact-field label=”Email” type=”email” required=”true” /][contact-field label=”Website” type=”url” /][contact-field label=”Message” type=”textarea” /][/contact-form]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *