নয়াদিল্লি: হিমালয়ের কোলে ১০ হাজার ফুট উঁচুতে থাকা মানুষের জীবন সংগ্রাম হয়তো আরও কঠিন হতে চলেছে৷ সেখানে উপার্নের সুযোগ যেমন সীমিত, তেমনই প্রতিকূল আবহাওয়া৷ তার উপর নেপালের নয়া মানচিত্রে ঢুকে পড়েছে কালাপানি অঞ্চলের তিনটি গ্রাম গুঞ্জি, নবি এবং কুটি৷ যা হয়তো আমূলভাবে বদলে দেবে তাঁদের জীবন৷
গত কয়েক বছরে সরকারি মদতে উত্তরাখণ্ডের পিথোরগড়ের এই গ্রামগুলির অধিকাংশ বাড়িতেই গড়ে উঠেছিল অতিথি নিবাস৷ ট্রেকার এবং আদি কৈলাশযাত্রীদের কাছে এই অঞ্চল হয়ে উঠেছিল বিশ্রামের আস্তানা৷ তবে এখানে শীতকালে ব্যবসা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে৷ তাপমাত্রা নেমে যায় মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে৷ ভারী তুষারপাত পরিস্থিতি আরও কঠিন করে তোলে৷ নবির গ্রাম-প্রধান সনম নোবিয়াল বলেন, ‘‘আমরা ছয়-সাত মাস গ্রামে থাকি৷ শীত বাড়তেই আবহাওয়া প্রতিকূল হয়ে ওঠে৷ তখন নেমে যাই হিমালয়ের পাদদেশে৷’’ তবে গত কয়েক বছর গ্রীষ্মকালে অতিথি নিবাস থেকে এই অঞ্চলের মানুষেক উপার্জন যে বেশ কিছুটা বেড়েছিল, তা স্বীকার করে নেন নোবিয়াল৷
এই গ্রামগুলির জনসংখ্যা সর্বসাকুল্যে তিন হাজার হবে৷ তবে এখান থেকেই উঠে এসেছেন একাধিক আমলা-আইপিএস, আইএএস, এমনকী পিপিএস (প্রভিনসিয়াস পুলিশ সার্ভিস) এবং পিসিএস (প্রভিনসিয়াল সিভিল সার্ভিস)৷ নবিয়াল আরও জানান, তাঁদের উপার্জনের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস ছিল লিপুলেখ পাসে ভারত-চিন সীমান্তের বার্ষিক বাণিজ্য৷ যেখানে সাধারণত ভেষজ বিক্রি করে থাকেন তাঁরা৷ এর মধ্যে রয়েছে কুটকি, জিম্বু এবং সালাম পাঞ্জা৷ কুমায়োন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রাক্তন প্রধান অজয় রাওয়াত জানান, ষষ্ঠ শতাব্দীতেও লিপুলেখ পাসে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রমাণ মিলেছে৷
তবে এই বছর করোনা সংক্রমণের জেরে বন্ধ রয়েছে বাণিজ্য৷ সাধারণত, প্রতি বছর ১ জুন থেকে লিপুলেখে শুরু হয় বার্ষিক সীমান্ত বাণিজ্য৷ চলে এই ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত৷ কোভিড পরিস্থিতি ছাড়াও এই বছর বাণিজ্য স্থগিত রাখার অন্যতম কারণ হল ভারত-নেপাল সম্পর্কের উত্তেজনা৷ ভারতের আপত্তি সত্ত্বেও নয়া মানচিত্রে সিলমোহর লাগাতে নেপাল পার্লামেন্টে পাশ হয়ে যায় সংবিধান সংশোধন বিল৷ ভারতের প্রায় ৪০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে নতুন মানচিত্রে নিজেদের বলে দাবি করেছে নেপাল। নতুন মানচিত্রে লিম্পিয়াধুরা, লিপুলেখ গিরিপথ এবং কালাপানি অঞ্চলকে নেপালের অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে।
কালাপানির ৩৭২ স্কোয়্যার কিলোমিটার এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে ইন্দো-তিব্বত বর্ডার পুলিশ৷ ভারতের দাবি, উত্তরাখণ্ডের পিথোরগড় জেলার কালাপানি ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ৷ অন্যদিকে, এই অঞ্চলের উপর দাবি জানিয়ে মানচিত্র বদলে ফেলেছে নেপাল৷ এই অঞ্চলের অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার ডিএস ঘাবরিয়াল বলেন, ‘‘গত ৩০-৪০ বছরে সীমান্ত ইস্যুতে কোনও বিতর্ক তৈরি হয়নি৷ কিন্তু নেপাল যে ভাবে এই তিনটি গ্রামকে নিজেদের বলে দাবি করছে তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক এবং বিভ্রান্তিকর৷’’