কৃষি আইনের পর এবার কি নাগরিত্ব আইন বাতিল করবে কেন্দ্র?

কৃষি আইনের পর এবার কি নাগরিত্ব আইন বাতিল করবে কেন্দ্র?

নয়াদিল্লি:  কে বলে আন্দোলন সফল হয় না! দীর্ঘ এক বছর আন্দোলনের পর আজ শেষ হাসি হাসল কৃষকরা৷ তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে কৃষকদের লাগাতার আন্দোলনে পিছু হঠল কেন্দ্র৷ আজ জাতির উদ্দেশে ভাষণে তিন বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ একই ভাবে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আরও একটি লড়াই চলছে৷ ২০১৯ সালে ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ হওয়ার পর থেকেই প্রতিবাদে উত্তাল দেশ৷  আন্দোলনের জেরে বাতিল হবে কি সিএএ? 

আরও পড়ুন- দীর্ঘ ১ বছরের আন্দোলন-লড়াই-কয়েকশো মৃত্যু, ফিরে দেখা কৃষক আন্দোলন

দ্বিতীয় মোদী সরকার প্রথম নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি পাশ করেন। এই বিলের উদ্দেশ্য ছিল ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন। এই আইনে বলা হয়েছে প্রতিবেশি রাষ্ট্র পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ, ভুটান, চিন থেকে আসা সংখ্যালঘু হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি এবং খ্রিষ্টান শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। ২০১৪ সাল পর্যন্ত যাঁরা ভারতে এসেছেন তাঁদের এই নাগরিকত্ব প্রদান করা হবে। উল্লেখ্য বিষয় হল, এখানে মুসলিমদের কথা কিন্তু উল্লেখ করা হয়নি৷ সংখ্যা গরিষ্ঠতার জোড়ে সংসদের উভয় কক্ষেই এই আইন পাশ করিয়ে নেয় মোদী সরকার।

১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য ১২ মাস টানা ভারতে থাকার নিয়মের পাশাপাশি বিগত ১৪ বছরের মধ্যে ১১ বছর ভারতে বসবাস করাটা জরুরি ছিল। নতুন সংশোধনীর দ্বিতীয় অংশে পরিবর্তন ঘটানো হয়। উক্ত দেশগুলি থেকে আসা নির্দিষ্ট ৬টি ধর্মাবলম্বীদের জন্য ১১ বছর সময়সীমা কমিয়ে ৫ বছর করে দেওয়া হয়। ভারতের ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর মতে এই আইন সংশোধনের ফলে ৩১ হাজার ৩১৩ জন উপকৃত হবেন। যাদের মধ্যে  ২৫ হাজার ৪৪৭ জন হিন্দু, ৫ হাজার ৮০৭ জন শিখ, ৫৫ জন খ্রিষ্টান, ২ জন বৌদ্ধ ও ২ জন পার্সি।

বিজেপি সরকারের এই নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু হয় দেশজুড়ে৷ প্রথম বিক্ষোভ শুরু হয় উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলিতে। অসম, নাগাল্যান্ড, মেঘালয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। অসমে ক্রমশ সেই বিক্ষোভের পারদ চড়তে থাকে। বাংলাদেশ হাইকমিশনারের গাড়িতে পর্যন্ত হামলা করে বিক্ষোভকারীরা। এরপর বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে কিছুটা অবনতিও হয়৷ দীর্ঘ একমাস অসমে কার্ফু জারি করা হয়। সেই আঁচ ছড়িয়ে পড়েছিল অন্যান্য রাজ্যগুলিতেও। আন্দোলনের আঁচ লাগে পশ্চিমবঙ্গেও৷ মলদা, মুর্শিদাবাদ, দুই দিনাজপুরে ব্যাপক আন্দোলন হয়৷ মুর্শিদাবাদের লালগোলায় ১০টি ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা৷ মুখ্যমন্ত্রীর কড়া হুঁশিয়ারিতে পরিস্থিতি শান্ত হয়৷ যদিও কেন্দ্রের সিএএ বিরোধী আন্দোলনে সামিল হয়েছে তৃণমূলও৷ 

রাজ্যগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছিল দিল্লির শাহিনবাগ৷ নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতায় অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন দিল্লির সমাজকর্মীরা। কোনও রাজনৈতিক ছাতার তলায় নয়, আন্দোলন চলছিল স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে৷ পরে এই আন্দোলনকে সমর্থন জানান দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। সেই আন্দোলনের ধাক্কায় সিএএ নিয়ে কেন্দ্র পিছু হঠবে কি? উত্তর সময়ই দেবে৷ 
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × five =