কাশ্মীর নিয়ে কেন এত সমস্যা? কী আছে ৩৭০ ধারায়?

শ্রীনগর: ফের উত্তপ্ত কাশ্মীর৷ ছড়িয়ে আতঙ্ক৷ জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা৷ কিছু এলাকায় কারফিউ জারি হয়েছে৷ বন্ধ ইন্টারনেট৷ স্তব্ধ টেলি যোগাযোগ৷ নিয়ন্ত্রণরেখায় বাড়ানো হয়েছে সেনা৷ পাক সেনার হামলার যোগ্য জবাবও দিতে শুরু করেছে ভারতীয় সেনা৷ ইতিমধ্যেই ভারতীয় সেনার গুলিতে মৃত্যু হয়েছে অন্তত চার পাক জওয়ানের৷ খতম আরও তিন জঙ্গি৷ এই নিয়ে ভারত-পাক উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে গৃহবন্দি কাশ্মীরের

কাশ্মীর নিয়ে কেন এত সমস্যা? কী আছে ৩৭০ ধারায়?

শ্রীনগর: ফের উত্তপ্ত কাশ্মীর৷ ছড়িয়ে আতঙ্ক৷ জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা৷ কিছু এলাকায় কারফিউ জারি হয়েছে৷ বন্ধ ইন্টারনেট৷ স্তব্ধ টেলি যোগাযোগ৷ নিয়ন্ত্রণরেখায় বাড়ানো হয়েছে সেনা৷ পাক সেনার হামলার যোগ্য জবাবও দিতে শুরু করেছে ভারতীয় সেনা৷ ইতিমধ্যেই ভারতীয় সেনার গুলিতে মৃত্যু হয়েছে অন্তত চার পাক জওয়ানের৷ খতম আরও তিন জঙ্গি৷ এই নিয়ে ভারত-পাক উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে গৃহবন্দি কাশ্মীরের দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা ও মেহবুবা মুফতি৷ মধ্যরাতে গ্রেপ্তার কংগ্রেস নেতা উসমান মজিদ ও সিপিএমের এমএলএ নেতা এম ওয়াই তারিগামি৷ কিন্তু, কাশ্মীর নিয়ে কেন এত সমস্যা? কাশ্মীর সমস্যা সমস্যা সমাধানে ৩৭০ ধারা বিলোপ করার পথে হাঁটছে কেন্দ্র? ৩৭০ ধারা কী? কাশ্মীরে গণভোটের কথা কেন উঠে আসে আচোলনায়?

কাশ্মীর সমস্যায় মেটাতে জারি হওয়া ৩৭০ ধারা কী? ৩৭০ ধারা সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত হয় ১৯৪৯ সালের ১৭ অক্টোবর৷ এই ধারা জারি করে জম্মু ও কাশ্মীরকে ভারতীয় সংবিধানের আওতামুক্ত রাখা হয়৷ ওই বিশেষ ধারাবলে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যকে নিজস্ব সংবিধানের খসড়া তৈরির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল৷ ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারতকে ভারত ও পাকিস্তানে বিভাজন করে ভারতীয় সাংবিধানিক আইন কার্যকর হওয়ার সময়কাল থেকেই ভারতভুক্তির বিষয়টি কার্যকরী হয়৷ ভারতভুক্তি হওয়ার শর্ত হিসেবে জম্মু কাশ্মীরে সংসদ প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র ও যোগাযোগ তিনটি বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে ক্ষমতাধর৷ কাশ্মীরের ভারতভুক্তির ৫ নং উপধারায় জম্মু ও কাশ্মীরের রাজা হরি সিং উল্লেখ করে দিয়েছিলেন, তাঁর সম্মতি ছাড়া ভারতের স্বাধীনতা আইনে রাজ্যের ভারতভুক্তি কোনও সংশোধনী আইনের মাধ্যমে বদলানো যাবে না৷ ৭ নং উপধারায় বলা ছিল, এই ভারতভুক্তির শর্তাবলী ভবিষ্যৎ কোনও সংবিধানের মাধ্যমে বদলাতে বাধ্য করা যাবে না।

কীভাবে ভারতভুক্তি হল জম্মু ও কাশ্মীর? রাজা হরি সিং প্রাথমিক ভাবে স্থির করেছিলেন তিনি স্বাধীন থাকবেন৷ সেই মতো ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে স্থিতাবস্থার চুক্তি স্বাক্ষর করেন৷ পাকিস্তান সে চুক্তিতে স্বাক্ষরও করে৷ কিন্তু পাক সেনা যখন জম্মু ও কাশ্মীরে অনুপ্রবেশ করে, তখন রাজা হরি সিং ভারতের সাহায্য চান৷ শেষপর্যন্ত কাশ্মীরের ভারতভুক্তি হয়৷ ১৯৪৭ সালের ২৬ অক্টোবর হরি সিং ভারতভুক্তির চুক্তি স্বাক্ষর করেন৷ ২৭ অক্টোবর ১৯৪৭ গভর্নর জেনারেল লর্ড মাউন্টব্যাটেন সে চুক্তি অনুমোদন করেন৷ কাশ্মীরের ভারতভুক্তি যে সাময়িক সিদ্ধান্ত, তা ১৯৪৮ সালে জম্মু ও কাশ্মীর সম্পর্কিত শ্বেত পত্রে ঘোষণা করে ভারত৷ ১৭ মে ১৯৪৯ সালে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল জম্মু ও কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাকে একটি চিঠি লেখেন৷ সে চিঠিতে তিনি জানান, ভারত সরকারের স্থির সিদ্ধান্ত হল জম্মু ও কাশ্মীরের সংবিধান সে রাজ্যের অধিবাসীদের নিয়ন্ত্রণের বিষয়৷ সেই মতামতের প্রতিনিধিত্ব বহন করার উদ্দেশ্যেই গণপরিষদ গঠিত হয়েছে৷

৩০৬ এ ধারা বর্তমান যা ৩৭০, ২৭ মে, ১৯৪৯ সালে গণপরিষদে পাশ হয়৷ সংবিধানের একবিংশ অংশের প্রথম অনুচ্ছেদ এটিই৷ সাময়িক, পরিবর্তনসাপেক্ষ এবং বিশেষ বিধান৷ ৩৭০ ধারাকে সাময়িক বলে বিবেচনা করা যেতেই পারে৷ জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভা এ ধারা পরিবর্তন করতে পারত৷ একে বিলোপ করতে পারত বা একে ধারণ করতে পারত৷ বিধানসভা একে ধারণ করার পক্ষে মত দেয়৷ আরেকটি ব্যাখ্যা হল, গণভোট না হওয়া পর্যন্ত ভারতভুক্তির সিদ্ধান্ত সাময়িক বলে গণ্য৷  সূত্রের খবর, ৩৭০ ধারা বিলুপ্তি করতে পারে কেন্দ্র৷ ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছিল, শিরোনামে সাময়িক লেখা থাকলেও ৩৭০ ধারা সাময়িক নয়। ১৯৬৯ সালে সম্পৎ প্রকাশ মামলায় ৩৭০ ধারাকে সাময়িক বলে মানতে অস্বীকার করে সুপ্রিম কোর্ট৷

৩৭০ ধারা কি বিলোপ করা যেতে পারে? রাষ্ট্রপতির আদেশের ভিত্তিতে অনুচ্ছেদ ৩৭০ (৩) বিলোপ করা যেতেই পারে৷ তবে তেমন নির্দেশের জন্য জম্মু ও কাশ্মীরের গণপরিষদের সম্মতি প্রয়োজন৷ কিন্তু গণপরিষদ বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে ২৬ জানুয়ারি ১৯৫৭ সালে৷ ফলে একটা মত হল, ৩৭০ ধারা আর বিলোপ করা যেতে পারে না৷ তবে এ ব্যাপারে আরেকটি মতও রয়েছে, সেটা হল রাজ্য বিধানসভার সম্মতিক্রমে এই বিলোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে৷

৩৭০ ধারার ১ নং অনুচ্ছেদ বলা আছে, যেখানে রাজ্যগুলির তালিকায় জম্মু-কাশ্মীরকে রাখা হয়েছে৷ ৩৭০ ধারার মাধ্যমে জম্মু ও  কাশ্মীরে সংবিধান লাগু হবে৷ তবে ১৯৬৩ সালের ২৭ নভেম্বর নেহরু লোকসভায় বলেছিলেন যে ৩৭০ ধারার ক্ষয় হয়েছে৷ জম্মু কাশ্মীরে ভারতীয় সংবিধান কার্যকর রাখার জন্য অন্তত ৪৫ বার ৩৭০ ধারা ব্যবহার করা হয়েছে৷ এ ভাবে রাষ্ট্রপতির আদেশের ভিত্তিতে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রায় নাকচ করা হয়েছে। ১৯৫৪ সালের নির্দেশ মোতাবেক প্রায় গোটা সংবিধানই, সমস্ত সংশোধনী সহ জম্মু-কাশ্মীরে কার্যকর করা হয়েছে। ৯৭টির মধ্যে ৯৪টি যুক্তরাষ্ট্রীয় তালিকা জম্মু কাশ্মীরে লাগু, ৩৯৫ টি অনুচ্ছেদের মধ্যে ২৬০টি রাজ্যে কার্যকর, ১৩টির মধ্যে ৭টি তফশিলও লাগু রয়েছে সেখানে৷ জম্মু কাশ্মীরের সংবিধানের ৩ নং অনুচ্ছেদে বলা রয়েছে যে জম্মু কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সংবিধানের প্রস্তাবনায় কোনও সার্বভৌমত্বের কথা তো বলাই নেই, বরং সংবিধানের উদ্দেশ্য হিসেবে অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরির কথা বলা রয়েছে। এ রাজ্যের জনগণ স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে স্বীকৃত, নাগরিক নয়। ৩৭০ ধারা সংহতি বিষয়ক নয়, স্বায়ত্তশাসন বিষয়ক। যাঁরা এর বিলোপ চাইছেন, তাঁরা সংহতি নিয়ে ভাবিত নন, তাঁদের মাথাব্যথা অভিন্নতা নিয়ে।

৩৫ এ ধারা কী? ৩৭০ ধারা থেকেই প্রবাহিত হয়েছে ৩৫এ ধারা, যা ১৯৫৪ সালের রাষ্ট্রপতির নির্দেশের মাধ্যমে কার্যকর হয়। ৩৫এ ধারানুসারে, জম্মু কাশ্মীরের বাসিন্দা বলতে কী বোঝায়, তাঁদের বিশেষ অধিকারগুলি কী কী, এ সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার জম্মু কাশ্মীর বিধানসভার উপর ন্যস্ত রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 + 17 =