নয়াদিল্লি: পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার মাথা হিসাবে আদিল আহমেদ নামে এক সন্ত্রাসবাদীকে চিহ্নিত করল জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ৷ পাক মদতপুষ্ট জঙ্গি গোষ্ঠী জয়েশ-ই-মহম্মদ পুলওয়ামার অবন্তীপোরায় সিআরপিএফ জওয়ানদের কনভয়ে হামলার দায় নিয়েছে৷
পুলিশ সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার বিকালে আইইডি বিস্ফোরকভর্তি গাড়ি নিয়ে জওয়ানদের বাসে ধাক্কা মেরা আদিল আহমেদ নামের এক জঙ্গি৷ তারপরই ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ৷ আদিল পুলওয়ামার কাকপোরার ছেলে৷ ২০১৮ সালে জয়েশে যোগ দেয় আদিল আহমেদ৷
পুলওয়ামার জঙ্গি হামলার ঘটনায় রাজধানীতে জরুরি বৈঠকে বসলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল৷ হামলার পর কীভাবে পাক জঙ্গিদের বিরুদ্ধে যোয্য জবাব নেওয়া যাবে, তা নিয়ে নিয়ে চলছে জরুরি বৈঠকে বসেছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের নেতৃত্বে বিশেষ দল৷ গোটা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে শুক্রবার আকূস্থলে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং৷
এদিনের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি৷ বলেন, পুলওয়ামায় সিআরপিএফের উপর হামলা ভয়ঙ্কর৷ এই ঘটনার নিন্দা জানানোর কোনও ভাষা নেই৷ জঙ্গি হামলায় শহীদদের পরিবারের পাশে আমি আমরা৷ আহতদের দ্রুত আরোগ্য প্রার্থনা করি৷’’ এই ঘটনায় জঙ্গিদের উচিত শিক্ষা দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি৷
ঘটনার পরেই ট্যুইটে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লা লেখেন, ‘‘উপত্যকার ভয়াবহ খবর৷ আইডি বিস্ফোরণে বেশ কয়েকজন সিআরপিএফ জওয়ান শহিদ ও আহত হয়েছেন৷ আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি৷ আহতদের জন্য আমার প্রার্থনা৷ শহিদ জওয়ানদের পরিবারের প্রতি আমাদর সমবেদনা৷’’
তীব্র নিন্দা করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ ট্যুইট করে তিনি জানান, এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা।তিনি এই হামলায় নিহত শহিদ জওয়ানদের স্যালুট জানিয়েছেন ও তাঁদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন। পাশাপাশি জখম জওয়ানদের দ্রুত আরোগ্য কামনাও করেছেন।
উরির পর বড়সড় জঙ্গিহানা উপত্যকায়, আত্মঘাতী জঙ্গিহানায় ১৮জন জওয়ান শহিদ হয়েছেন। জওয়ানদের ২৫টি কনভয়ের মধ্যে ঢুকে পড়ে বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি। তারপর গুলি চলল জওয়ানদের উপরে। এখনও পর্যন্ত ৩৫জন আহত জওয়ানকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তাঁদের তড়িঘড়ি নিকটবর্তী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আহতদের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে খবর। এদিন চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে শ্রীনগর জম্মু জাতীয় সড়কের উপরে, পুলওয়ামার অবন্তীপুরায়।
জানা গিয়েছে, ১০ দিন আগেই সম্ভাব্য জঙ্গিহানার খবর আসে। তারপরেও কী করে এত বড় জঙ্গিহানার ঘটনা ঘটল তানিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।সংশ্লিষ্ট এলাকায় লস্কর অথবা জৈশ জঙ্গিদের হাত থাকতে পারে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি কী করে কড়া নিরাপত্তা ভেঙে কীকরে কনভয়ে ঢুকে পড়ল তানিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ৫৪ নম্বর ব্যাটেলিয়নের ২৫০০ জন সিআরপিএফ জওয়ানকে ওই কনভয়ে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। সেই সময় আচমকাই কনভয়ের মধ্যে ঢুকে পড়ে ওই বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই জওয়ানদের লক্ষ্য করে গুলিবৃষ্টি শুরু হয়। সঙ্গে সঙ্গে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটে। জঙ্গিরা বিস্ফোরক, গুলি, রকেট লঞ্চার ব্যবহার করা হয়েছে।
জঙ্গিহানার খবর থাকার পরেও নিরাপত্তা কেন জোরদার হল না তানিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কী করে জওয়ানদের গাড়িতে জঙ্গিরা হামলা চালায় তানিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। ইতিমধ্যেই জঙ্গিহানার ঘটনায় কড়া নিন্দার পাশাপাশি মৃত ও আহত জওয়ানদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন ওমর আবদুল্লা।বিজেপি নেতা শাহনওয়াজ হোসেন বলেন, ধোঁকা দিয়ে হামলা করেছে জৈশ জঙ্গিরা। এরকম কাপুরুষের কাজ পাকিস্তানের, তারা জইশ জঙ্গিদের লালনপালন করে ওটাই ওদের কাজ।এর কঠোর শাস্তি ওদের পেতেই হবে। এখনও পর্যন্ত যা তথ্য জৈশ জঙ্গি আদিল আহমেদ বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি নিয়ে ৫৪ নম্বর ব্যাটেলিয়নের কনভয়ে ধাক্কা মারে। লোকসভা ভোটের আগে এই ভয়াবহ হামলা দেশের কেন্দ্রীয় রাজনীতিকে আন্দোলিত করবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।