পড়াশোনার খরচ চালাতে বেচেছেন ধূপকাঠি, দ্বাদশ শ্রেণিতে ফেল করা ছাত্রই এখন UPSC- চেয়ারম্যান

পড়াশোনার খরচ চালাতে বেচেছেন ধূপকাঠি, দ্বাদশ শ্রেণিতে ফেল করা ছাত্রই এখন UPSC- চেয়ারম্যান

নয়াদিল্লি:  এক সময় পড়াশোনার খরচ চালাতে ফুটপাতে বসে ধূপকাঠি বেচেছেন তিনি৷ সংসারের বোঝা কাঁধে নিয়ে করতে হয়েছে কঠোর পরিশ্রম৷ চলার পথে বহু বাঁধা এসেছে৷ বিজ্ঞান শাখায় পড়ার সময় দ্বাদশ শ্রেণিতে অনুত্তীর্ণও হন৷ সেই ছাত্রই আজ ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন (ইউপিএসসি)-র চেয়ারম্যান। নাম মনোজ সোনি৷ জানেন তাঁর পরিচয়?

আরও পড়ুন-করোনা গ্রাফে খুব একটা হেরফের নেই আজ, বাড়ল টিকাকরণ

১৯৬৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম মনোজের। মুম্বইয়ের ফুটপাতে জামাকাপড়ের হকারি করেই সংসার চালাতেন তাঁর বাবা। কিন্তু, বাবার অকালমৃত্যুতে তাঁদের পরিবারের উপর যেন বাজ ভেঙে করে৷ সংসার চালানোর দায়িত্ব এসে পরে মনোজের ঘাড়ে৷ সে সময় তিনি পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। শুরু হয় এক কঠিন লড়াই৷ সংসারের বোঝা টেনে পড়াশোনা চালাতে এক সময় ধূপকাঠি বিক্রি শুরু করেন তিনি৷ মুম্বইয়ের ভুলেশ্বর এলাকার বস্তিতে ধূপকাঠি বিক্রি করতেন। এক সময় ওই ফুটপাতে বসেই হকারি করতেন তাঁর বাবা৷ ধূপকাঠি বেচে যা জুটত, তা দিয়েই কোনও মতে সংসার চালিয়ে জোগাতেন পড়াশোনার খরচ৷ 

২০২২-এর ৫ এপ্রিল ইউপিএসসি-র শীর্ষকর্তা হিসাবে মনোজ সোনিকে নিয়োগ করেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। পূর্বতন চেয়ারম্যান প্রদীপকুমার জোশীর স্থলাভিষিক্ত হন মনোজ। ২০২৩-এর ২৭ জুন পর্যন্ত তাঁর কার্যকালের মেয়াদ। প্রসঙ্গত,  দেশের আমলাদের বাছাই করতে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় দায়িত্ব রয়েছে এই কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থার উপর।

ইউপিএসসি-র চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব নেওয়ার আগে দেশের দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবেও কর্তব্য পালন করেছেন মনোজ। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরের নানা স্বীকৃতি রয়েছে তাঁর ঝুলিতে।

মনোজ সোনির প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গেলে, আরও একটি বিষয় উল্লেখ করতেই হয়৷ ছাত্রাবস্থাতেই তিনি বাবার মতো স্বামীনারায়ণ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সদস্য হন৷ মুম্বইয়ে এই স্বামীনারায়ণ সম্প্রদায়ের অনুপম মিশনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মনোজ। সারা বিশ্বজুড়ে মিশনের কাজকর্ম দেখভাল করতেন সাহেব’জি নামে  এক ব্যক্তি। এক সময় মনোজের পড়াশোনার খরচ চালাতে সাহায্য এসেছিল সাহেব’জির মিশন থেকেও৷  

১৯৭৮ সালে মুম্বই থেকে গুজরাতের আনন্দ জেলায় চলে আসে মনোজের পরিবার। কিন্তু, পড়াশোনা ছাড়েননি৷ তবে হোঁচট খেতে হয়েছে তাঁকে৷ দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় ফেল করেন৷ তবুও হাল ছাড়েননি৷ নতুন উদ্যমে রাজরত্ন পিটি পটেল কলেজে কলা বিভাগে ভর্তি হন মনোজ। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাঠ শেষ করার পর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়েও পড়াশোনা করেন৷ 

মহারাষ্ট্র থেকে গুজরাতে যাওয়ার পরেও সাহেব’জির অনুপম মিশনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়নি৷ বরং মোহরি এলাকায় মিশনের  কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন মনোজ। বছর দুয়েক আগে ওই মিশন থেকেই তিনি দীক্ষা নেন৷ স্বামীনারায়ণ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সদস্য হিসাবে তিনি ‘নিষ্কাম কর্মযোগী’ থাকার ব্রতও পালন করেন বলে ঘনিষ্ঠ সূত্রে খবর৷ 

ইউপিএসসি-র ওয়েবসাইটে মনোজের সম্পর্কে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনিই দেশের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বকনিষ্ঠ উপাচার্য৷ ১৯৯১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে তিনি শিক্ষকতা করেছেন গুজরাতের বল্লভ বিদ্যানগরের সর্দার পটেল বিশ্ববিদ্যালয়েও৷ 

ইউপিএসসি-র ৩১তম চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব নেওয়ার আগে মনোজের নিয়োগকে কেন্দ্র করে কম বিতর্ক হয়নি৷ নেটমাধ্যমে সরব হন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ জহর সরকার-সহ প্রাক্তন আমলাদের একাংশ। কটাক্ষ করে প্রাক্তন আমলা জহর বলেন, ‘‘এবার মনোজ সোনি আইএএস, আইপিএস, কেন্দ্রীয় সরকারি আধিকারিকদের নির্বাচন করবেন। ঈশ্বর ভারতকে রক্ষা করুন।’’