লখনউ: গত ৩ জুলাই, গ্যাংস্টার বিকাশ দুবেকে গ্রেফতার করতে গিয়ে তার শাগরেদদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন এক ডেপুটি পুলিশ সুপার, আট পুলিশকর্মী৷ সম্প্রতি একটি খুনের মামালায় বিকাশের নাম জড়ানোর পরই তাকে গ্রেফতার করতে চৌবেপুর থানার বিকারু গ্রামে পৌঁছেছিল পুলিশের টিম। কিন্তু তার কাছে আগাম খবর ছিল৷ আর সেই খবরের ভিত্তিতেই বিকাশের নেতৃত্বে দুষ্কৃতীরা বাড়ির ছাদে উঠে পুলিশের উপর হামলা চালায়৷ এর পর বারবার পুলিশের চোখে ধুলো দিলেও, গতকাল মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনীর মন্দির থেকে ধরা পড়ে বিকাশ৷ শুক্রবার সকালে কানপুরে আনার সময় পুলিশের এনকাউন্টারে খতম হয় কুখ্যাত গ্যাংস্টার৷ বিকাশের এই গ্যাংস্টার হয়ে ওঠার ইতিহাস কিন্তু অনেক পুরনো৷
সালটা ২০০১৷ উত্তরপ্রদেশে মুখ্যমন্ত্রীর তখত-এ তখন বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং৷ সেই সময় রাজ্যের মন্ত্রী সন্তোষ শুক্লাকে খুন করে বিকাশ দুবে৷ তাঁর গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল শুক্লা৷ ২০০২ সালে পুলিশের কাছে আত্মমর্পণ করে বিকাশ৷ কিন্তু তার বিরুদ্ধে একজনও সাক্ষ্য দিতে রাজি হয়নি৷ প্রমাণের অভাবে অবশেষে ছাড়া পেয়ে যায় সে৷
অন্ধকার জগতের সঙ্গে বিকাশের সংযোগ আরও আগে৷ ১৯৯০ সালে প্রথম খুনের মামলায় নাম জড়ায় বিকাশের৷ সেখান থেকেই তার ক্রিমিনাল রেকর্ডের সূত্রপাত৷ এর পর বছরের পর বছর ধরে খুন, খুনের চেষ্টা, অপহরণ, চাঁদাবাজি এবং মারদাঙ্গার একাধিক মামলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে৷ কিন্তু তার টিকিও ছুঁতে পারেনি পুলিশ৷ যখনই তাকে থানায় ধরে আনা হয়েছে, তখনই একের পর এক ফোন এসেছে নেতাদের কাছ থেকে৷ ২০০০ সালে তারাচাঁদ ইন্টার কলেজের জমি দখল করে সেখানে বাজার তৈরির জন্য কলেজের উপাধ্যক্ষ সিদ্ধেশ্বর পাণ্ডেকে খুন করে বিকাশ। একমাত্র এই মামলাতেই দোষী সাব্যস্ত হয় সে৷ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় বিকাশকে৷ কিন্তু এর পরেও হাইকোর্টে জামিন পেয়ে যায় উত্তরপ্রদেশের এই গ্যাংস্টার৷
২০১৯ সালের অগাস্ট মাসে রাস্তার টেন্ডার নিয়ে অফিসারদের হুমকি দেওয়ার অপরাধে বিকাশকে আটক করে পুলিশ৷ কিন্তু এবারও ছাড়া পেয়ে যায় সে৷ অন্ধকার জগতে দুবের বিস্তার ছিল অনেক গভীরে৷ তার অপরাধের ইতিহাসও বেশ দীর্ঘ৷ বিকাশের মাথার দাম ছিল ২৫ হাজার টাকা৷
জেলের চার দেওয়ালে বসেও তার অঙ্গুলিহেলনে চলত অপরাধ জগতের কর্মকাণ্ড৷ অভিযোগ, জেলে বসেই তার তুতো ভাই অনুরাগকে হত্যার ছক কষেছিল বিকাশ৷ এমনকী জেলে আটক থাকার সময়ই শিবরাজপুর থেকে নগর পঞ্চায়েতের ভোটে জিতেছিল এই গ্যাংস্টার৷ অভিযোগ, ওই গ্রামে তার ইশারায় কাজ করত একদল সশস্ত্র পোষা গুণ্ডা৷ এলাকায় রীতিমতো ত্রাসের সৃষ্টি করেছিল তারা৷ বিকাশের স্ত্রী রিচা দুবেও জেলা পরিষদ সদস্য। শোনা যায়, বিকাশ বা তার স্ত্রীকে কোনও দিন ভোটের প্রচারে যেতে হয়নি৷ ভোট পড়েছে তাদের ইশারাতেই৷ ২০২২ সালের বিধানসভা ভোটে দাঁড়ানোর প্রস্তুতিও নিচ্ছিল বিকাশ৷ তবে তা আর হল না৷ এদিন সকালে পুলিশের এনকাউন্টারে যবনিকা পড়ল অপরাধ জগতের এক অধ্যায়ে৷