ঠাণের অটোচালক থেকে মহারাষ্ট্রের স্টিয়ারিং! মারাঠা-রাজনীতিতে শিন্ডের রূপকথার উত্থান

ঠাণের অটোচালক থেকে মহারাষ্ট্রের স্টিয়ারিং! মারাঠা-রাজনীতিতে শিন্ডের রূপকথার উত্থান

নয়াদিল্লি:  মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে একনাথ শিন্ডের মহাবিদ্রোহে উৎখাত উদ্ধব ঠাকরের রাজ্যপাট৷ কিন্তু বিদ্রোহের শুরুতেই শিন্ডে শিবিরের উদ্দেশে একটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিলেন উদ্ধব৷ তিনি বলেছিলেন, ‘‘দল ভাঙলেও একনাথ কি মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি পাবেন? বিজেপি কি পদ ছেড়ে দেবে?’’ এটা শুধু উদ্ধবের প্রশ্ন ছিল না, রাজনৈতিক মহল দৃঢ় বিশ্বাসী ছিল, মহারাষ্ট্রের মসনদে বসতে চলেছেন দেবেন্দ্র ফড়ণবীস৷ কিন্তু নাটকের একেবারে শেষ লগ্নে পৌঁছে পুরো খেলাটাই ঘুরিয়ে দিল গেরুয়া শিবির৷ ফড়ণবীস নন, শিবসেনার বিদ্রোহী বিধায়ক একনাথ শিন্ডেকেই বসানো হল মুখ্যমন্ত্রীর আসনে৷ ২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে এই সিদ্ধান্ত বিজেপি’র ‘সবচেয়ে পরিণত পদক্ষেপ’ বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা৷ 

আরও পড়ুন- অশান্তির জন্য তিনিই দায়ী, ক্ষমা চাওয়া উচিত! নূপুরকে প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট

সময়টা আশির দশক৷ মুম্বইয়ে তখন বালাসাহেবের দাপট৷ তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েই কলেজের পড়া ছেড়ে সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেন একনাথ শিন্ডে। মহারাষ্ট্রের সাতারার বাসিন্দা হলেও শিন্ডের রাজনীতির ক্ষেত্র হয়ে ওঠে শিবসেনার শক্ত ঘাঁটি ঠাণে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সেখানকার প্রভাবশালী শিবসেনা নেতা আনন্দ দীঘের ‘ডানহাত’ হয়ে ওঠেন তিনি।

ঘটনাচক্রে সেই শিন্ডের ‘তৎপরতাতেই’ বালাসাহেব-পুত্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন শিবসেনার একদল বিধায়ক৷ সেই বিদ্রোহের আঁচেই ক্ষমতা হারান বালাসাহেব-পুত্র। উদ্ধবের হাত থেকে মহারাষ্ট্রের স্টিয়ারিং চলে যায় অটোচালক শিন্ডের হাতে। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন তিনি৷ কিন্তু, কে এই একনাথ শিন্ডে? কী ভাবে তাঁর উত্থান? 

মহারাষ্ট্রের সাতারায় নিম্ন মধ্যবিত্ত মরাঠি পরিবারে জন্ম একনাথ শিন্ডের। পরে ঠাণেতে চলে আসে তাঁর গোটা পরিবার। সেখানেই পড়াশোনা ও বেড়ে ওঠা তাঁর। অস্বচ্ছল পরিবারের পাশে দাঁড়াতে খুব কম বয়সেই রোজগারের পথে নামেন শিন্ডে। প্রথম উপার্জন এসেছিল অটো রিকশা চালিয়ে৷

পশ্চিম মহারাষ্ট্রের প্রভাবশালী নেতা শিন্ডের রাজনীতির হাতেখড়ি হয় আশির দশকে। কিন্তু, ভোট-রাজনীতিতে পা দিয়েছিলেন ১৯৯৭ সালে, ঠাণে পুরসভার নির্বাচনে জিতে।

ইতিমধ্যে ২০০১ সালে তাঁর রাজনৈতিক গুরু আনন্দের অকালপ্রয়াণের পর ঠাণে ও সংলগ্ন জেলাগুলিতে শিবসেনা সংগঠনের নিয়ন্ত্রণ ভার চলে যায় শিন্ডের হাতে। এর পর ২০০৪ সালে ঠাণেরই কোপরী-পাচরপাখাডী কেন্দ্র থেকে প্রথমবার মহারাষ্ট্র বিধানসভা ভোটে জয়ী হন একনাথ। তার পর ২০০৯, ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের বিধানসভা ভোটেও জয়যুক্ত হন। এক সময় মহারাষ্ট্র বিধানসভায় বিরোধী দলনেতার দায়িত্বও সামলেছেন। ২০১৪ সালে বিজেপি-শিবসেনা জোট সরকারের মন্ত্রী হয়েছিলেন। ২০১৯ সালে মহাবিকাশ আঘাডী জোট সরকারের নগরোন্নয়ন ও পূর্ত দফতরের মন্ত্রী হন একনাথ৷ মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে বিধান পরিষদের সদস্য হওয়ায় বিধানসভার দলনেতার দায়িত্ব দেওয়া হয় শিন্ডের হাতে।

হঠাৎ করেই সেই শিন্ডে দলের মধ্যেই ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করলেন। প্রথমে অনুগামীদের নিয়ে ঘাঁটি গাড়লেন প্রধানমন্ত্রীর রাজ্যে। গুজরাতের সুরাটে৷ তার পর বিদ্রোহী শিবসৈনিক এবং নির্দল বিধায়কদের নিয়ে চলে যান আর এক বিজেপি শাসিত রাজ্য অসমে। তবে একনাথ স্পষ্ট জানান, তিনি বিজেপিতে যোগ দেবেন না। বিজেপিতে যাওয়ার কোনও ইচ্ছেই নেই তাঁর। একনাথের দাবি ছিল, বালাসাহেবের হিন্দুত্ববাদী আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়েছে শিবসেনা। 

উদ্ধবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয়ের পর বিজেপি’র প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা মহারাষ্ট্রের বিজেপি প্রধান দেবেন্দ্র ফড়ণবীসের পাশে দাঁড়িয়ে শিন্ডে বলেন, ‘‘বালাসাহেবের হিন্দুত্ববাদী আদর্শের কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রতিটি কেন্দ্রে উন্নয়নমূলক কাজ করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের সঙ্গে ৫০ জন বিধায়ক আছেন।’’ মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসার পর নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ এবং দেবেন্দ্র ফড়ণবীসের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন তিনি৷