কোথায়, কখন তাণ্ডব চালাবে ঘূর্ণিঝড় ‘ফনি’? কী কী সতর্কতা জারি?

কলকাতা: বঙ্গোপসাগরে দক্ষিণ-পূর্ব ও সন্নিহিত দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে ঘনীভূত সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় ‘ফনি’ ঘণ্টায় ২২ কিলোমিটার বেগে বিগত ৬ ঘণ্টা ধরে তীব্র গতিবেগে বয়ে চলেছে। বর্তমানে এটি ১২.৬ উত্তর অক্ষাংশে এবং ৮৫.৭ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে ওডিশার পুরী থেকে ৮০০ কিলোমিটার দক্ষিণে৷ শ্রীলঙ্কার ত্রিংকোমালি থেকে ৬৬০ কিলোমিটার উত্তর – উত্তর পূর্বে, অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনম থেকে ৬২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পূর্বে অবস্থান

imagesmissing

কলকাতা: বঙ্গোপসাগরে দক্ষিণ-পূর্ব ও সন্নিহিত দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে ঘনীভূত সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় ‘ফনি’ ঘণ্টায় ২২ কিলোমিটার বেগে বিগত ৬ ঘণ্টা ধরে তীব্র গতিবেগে বয়ে চলেছে। বর্তমানে এটি ১২.৬ উত্তর অক্ষাংশে এবং ৮৫.৭ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে ওডিশার পুরী থেকে ৮০০ কিলোমিটার দক্ষিণে৷ শ্রীলঙ্কার ত্রিংকোমালি থেকে ৬৬০ কিলোমিটার উত্তর – উত্তর পূর্বে, অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনম থেকে ৬২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পূর্বে অবস্থান করছে।

আগামী ১২ ঘণ্টায় এর তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পাবে। আজ পয়লা মে সন্ধ্যাবেলার মধ্যে এই ঝড় উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হবে। এরপর এর অভিমুখ পরিবর্তিত হয়ে উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে এগিয়ে ওড়িশা উপকূলে গোপালপুর এবং চাঁদবালির মধ্যে কোনও জায়গা থেকে পুরীর দক্ষিণে কোনও অঞ্চলের মধ্য দিয়ে ঘণ্টায় ১৭৫–১৮৫ থেকে ২০৫ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হবে।

সেখানে থেকে তিন তারিখ সন্ধ্যা সাড়ে আটটার পরে এ রাজ্যে ঢুকবে ফনি। হাওয়ার গতিবেগ ঘণ্টায় ১৩০-১৪০ কিলোমিটার থাকবে বলে পূর্বাভাস। উপকূল বরাবর আসায় এ রাজ্যেও ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে প্রবল বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। এর প্রভাব পড়বে কলকাতা, দুই মেদিনীপুর, দুই চব্বিশ পরগনা, হাওড়া ও হুগলিতে। উপকূলবর্তী এলাকা জুড়ে জারি করা হয়েছে সতর্কতা। প্রতি ঘণ্টায় সেখানে ঝড়ের গতিবেগ হতে পারে ১৭৫ থেকে ১৮৫কিলোমিটার।

তারিখ/ভারতীয় সময় অবস্থান (অক্ষাংশ-উত্তর/দ্রাঘিমাংশ- পূর্ব) ভূপৃষ্ঠে সর্বোচ্চ যে পরিমাণ গতিতে বায়ু প্রবাহিত হবে (কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা) ঘূর্ণিঝড়ের প্রকারভেদ
৩০.০৪.১৯/বেলা ১১টা ৩০ ১২.৬/৮৫.৭ ১৪৫-১৫৫ থেকে ১৭০ অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড়
৩০.০৪.১৯/ বিকেল ৫টা ৩০ ১৩.১/৮৫.৩ ১৬০-১৭০ থেকে ১৮৫ অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড়
৩০.০৪.১৯/ রাত ১১টা ৩০ ১৩.৫/৮৪.৭ ১৬৫-১৭৫ থেকে ১৯৫ প্রবল তীব্র ঘূর্ণিঝড়
০১.০৫.১৯/সকাল ৫টা ৩০ ১৩.৮/৮৪.৩ ১৭০-১৮০ থেকে ২০০ প্রবল তীব্র ঘূর্ণিঝড়
০১.০৫.১৯/বেলা ১১টা ৩০ ১৪.৪/৮৪.০ ১৭৫-১৮৫ থেকে ২০৫ প্রবল তীব্র ঘূর্ণিঝড়
০১.০৫.১৯/রাত ১১টা ৩০ ১৫.৪/৮৪.০ ১৭৫-১৮৫ থেকে ২০৫ প্রবল তীব্র ঘূর্ণিঝড়
০২.০৫.১৯/বেলা ১১টা ৩০ ১৭.৭/৮৪.২ ১৭৫-১৮৫ থেকে ২০৫ প্রবল তীব্র ঘূর্ণিঝড়
০২.০৫.১৯/রাত ১১টা ৩০ ১৮.০/৮৪.৭ ১৭৫-১৮৫ থেকে ২০৫ প্রবল তীব্র ঘূর্ণিঝড়
০৩.০৫.১৯/বেলা ১১টা ৩০ ১৯.২/৮৫.৩ ১৭৫-১৮৫ থেকে ২০৫ প্রবল তীব্র ঘূর্ণিঝড়
০৩.০৫.১৯/রাত ১১টা ৩০ ২০.৩/৮৬.২ ১৫০-১৬০ থেকে ১৭৫ অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড়
০৪.০৫.১৯/বেলা ১১টা ৩০ ২১.৪/৮৭.৩ ১২৫-১৩৫ থেকে ১৫০ অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড়
০৪.০৫.১৯/রাত ১১টা ৩০ ২২.৫/৮৮.৪ ৯০-১০০ থেকে ১১০ প্রবল ঘূর্ণিঝড়
০৫.০৫.১৯/বেলা ১১টা ৩০ ২৩.৫/৮৯.৬ ৫০-৬০ থেকে ৭০ গভীর নিম্নচাপ

 

সতর্কবার্তা

বৃষ্টিপাতজনিত সতর্কবার্তা: ২ মে হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হবার সম্ভাবনা রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশের উত্তর উপকূলে (সৃকাকুলাম ও বিজয়নাগ্রাম জেলায়) এবং ৩রা মে বেশিরভাগ জায়গায় ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।

ওডিশা: ২ মে হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে দক্ষিণ ওডিশা উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকায়। ৩ এবং ৪ মে ওডিশার উপকূলবর্তী এলাকা সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা।

পশ্চিমবঙ্গ : ৩ মে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী জেলাগুলির বেশিরভাগ জায়গায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ৪ মে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের কিছু জায়গায় ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে।

বায়ুপ্রবাহের সতর্কবার্তা: বঙ্গোপসাগরে দক্ষিণ-পূর্ব এবং সংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে ঘন্টায় ১৪৫–১৫৫ থেকে ১৭০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই ঝড়ের তীব্রতা আজ সকাল থেকে ১৭৫-১৮৫ থেকে ২০৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। উত্তর তামিলানাডুর পুদুচেরী ও দক্ষিণ অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে পয়লা মে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাবে। ২ মে থেকে উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওডিশা উপকূলে ঘন্টায় ৪০-৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ৩ মে বায়ুর গতিবেগ বৃদ্ধি পেয়ে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ১৭৫-১৮৫ থেকে ২০৫ কিলোমিটার হতে পারে। পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে ২ মে ঘণ্টায় ৪০-৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার, ৩ মে ঘণ্টায় ৬০-৭০ থেকে ৮৫ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ৪ মে সকালে এই ঝড়ের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়ে ঘণ্টায় ৯০-১০০ থেকে ১১৫ কিলোমিটার হতে পারে।

সমুদ্র পরিস্থিতি: বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ-পূর্ব এবং সংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে সমুদ্র উত্তাল থাকবে। পয়লা থেকে ৩রা মে পর্যন্ত উত্তর তামিলনাডু, পুদুচেরী এবং দক্ষিণ অন্ধ্রপ্রদেশ, ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আর ২রা থেকে ৪ঠা মে পর্যন্ত উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকবে। এই ঝড়ের ফলে ওডিশার গনজাম, খুরদা, পুরী এবং জগৎ সিংপুর জেলায় নীচু জমি ১.৫ মিটার উচ্চতার বানে ভেসে যেতে পারে।

মৎস্যজীবীদের উদ্দেশে সতর্কবার্তা: পয়লা থেকে ৪ঠা মে মৎস্যজীবীদের বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ-পূর্ব এবং সংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে মাছ ধরতে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। যে সমস্ত মৎস্যজীবী মাঝ সমুদ্রে চলে গেছেন, তাঁদের উপকূলে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে ওডিশার গনজাম, গজপতি, খুরদা, পুরী, জগৎ সিংপুর জেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

যে কোনও অনভিপ্রেত পরিস্থিতি এড়াতে মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যাওয়ার ক্ষেত্রে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। উপকূলবর্তী এলাকা থেকে সকলকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। রেল ও সড়ক পরিবহণে বিঘ্ন ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।

ওডিশার কেন্দ্রাপাড়া, ভদ্রক, জাজপুর, বালাসোর জেলা, পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, কলকাতা এবং অন্ধ্রপ্রদেশের সৃকাকুলাম ও বিজয়নাগ্রাম জেলায় এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে, কাঁচাবাড়ি, পুরনো পাকা বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ে ফসল, বাগিচা এবং নারকেল ও তালগাছের ক্ষতি হতে পারে। বিদ্যুৎ সরবরাহের খুঁটি থেকে সবাইকে সাবধানে থাকতে বলা হয়েছে। বড় বড় নৌকা এবং জাহাজ এই ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *