নয়াদিল্লি: সীমান্তে ভারত-পাক উত্তেজনার আবহে পিছিয়ে যাবে লোকসভা নির্বাচন? ভোটের মুখে এখনও জারি সংশয়৷ কিন্তু, হঠাৎ কেন এই সংশয়? কেনই বা পিছিয়ে যেতে পারে ভোটে? কবেই বা ঘোষণা হতে পারেন ভোটের নির্ঘণ্ট?
সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, আগামী ১১ মার্চ লোকসভার নিঘণ্ট ঘোষণা করা হতে পারে। সেক্ষেত্রে ৭-৮ দফায় নির্বাচন পর্ব ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। লোকসভার সঙ্গেই অন্ধ্রপ্রদেশ, সিকিম, ওডিশা এবং অরুণাচল প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনও ঘোষণা হতে পারে।
চলতি সপ্তাহের শুরুতেই জম্মু ও কাশ্মীর গিয়েছিলেন কমিশনের আধিকারিকরা। বর্তমানে রাজ্যপালের শাসন চলা উপত্যকায় লোকসভার সময়ই বিধানসভার রাজনৈতিক দাবি রয়েছে। কমিশন সূত্রকে উদ্ধৃত করে এক জাতীয় সংবাদমাধ্যম তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত লোকসভার তুলনায় হাতে সময় বেশি থাকায়, নির্ঘণ্ট ঘোষণার জন্য বাড়তি সময় রয়েছে কমিশনের কাছে। গতবার ৩১ মে-র মধ্যে সরকার গঠন করা হয়েছিল৷ এবার বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩ জুন৷
সীমান্তে ভারত-পাক উত্তেজনার আবহে বাহিনী পেতে চূড়ান্ত সমস্যায় পড়তে পারে কমিশন৷ হামলা আশঙ্কায় ইতিমধ্যেই দেশের সমস্ত সীমান্তে জারি হয়েছে অ্যালার্ট৷ সীমান্তজুড়ে সর্বত্র নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছে ভারত। ফলে, এই পরিস্থিতিতে ভোটের কাজে বাহিনী কতটা পাওয়া যাবে তা নিয়ে শুরু হয়েছে পর্যবেক্ষণ৷ ইতিমধ্যেই লোকসভা ভোটের আগে রাজ্য কত কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রয়োজন? কোথায় কত আধা সেনা মোতায়েন করা হবে? কোন জেলায় কত বাহিনী প্রয়োজন তা জানতে রাজ্য প্রশাসনের রিপোর্ট চেয়ে পাঠাল নির্বাচন কমিশন৷ অবিলম্বে সমস্ত তথ্য জানিয়ে রিপোর্ট পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷
কমিশনের তরফে রিপোর্ট চেয়ে পাঠানোর নির্দল দেওয়া হলেও বাহিনী মোতায়েন নিয়ে চূড়ান্ত টানাপড়েন তৈরি হয়েছে৷ কেননা, নির্বাচন কমিশনের সমস্ত পূর্ব পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিয়েছে পুলওয়ামায় জঙ্গি হানার ঘটনা৷ সীমান্তে যুদ্ধের পরিস্থিতির মধ্যে আদৌও বাহিনী মোতায়েন করা সম্ভব কি না তা নিয়ে শুরু হয়েছে পর্যালোচনা৷
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গি হানার পর থেকেই জাতীয় রাজনীতির গতিপথ পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে৷ তার উপর কড়া নাড়ছে নির্বাচন৷ গতবার ৪ মার্চ লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করে কমিশন৷ গত ২০১৪-র নির্বাচন মোট ৯ দফায় নেওয়া হয়৷ কিন্তু, এবার এখনও পর্যন্ত কোনও নির্ঘণ্ট প্রকাশ করতে পারেনি কমিশন৷ তবে, শুক্রবার কমিশনের তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, লোকসভার ভোট করাতে পুরোপুরি প্রস্তুতি তারা৷ আগামী লোকসভা নির্বাচন নির্দিষ্ট সময়েই হবে বলে এদিন সাফ জানিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন৷
লোকসভার ভোট নির্দিষ্ট সময়েই হওয়ার আশ্বাস মিললেও ভোটের প্রস্তুতি এখনও চলছে৷ কোথায় কত বাহিনী লাগবে, কোথায় থেকে বাহিনী আনানো হবে, একস্থান থেকে অন্য স্থানীয় বাহিনী নিয়ে যেতে কত সময় লাগবে, তাও হিসাব চলছে৷
কিন্তু, কেন এই বিলম্ব? জানা গিয়েছে, পাক হামলা রুখতে বেশ কিছুদিন ধরেই সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা হিসেবে সীমান্তজুড়ে সর্বত্র নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছে ভারত। তাই আগামী লোকসভা নির্বাচনে চাহিদা মতো কেন্দ্রীয় বাহিনী মিলবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কোন জেলায় কত কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন ছিল, তার হিসেব জেলার পুলিস সুপারদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন৷
আগামী লোকসভা ভোটে কত কেন্দ্রীয় বাহিনী দরকার, তার হিসেবও চাওয়া হয়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে সেই হিসেব পাঠানোর কাজ শুরু হয়েছে বলে কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে গোটা রাজ্যে ৬১৭ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এসেছিল। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে এসেছিল প্রায় ৭০০ কোম্পানি। এবার সেই সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী আসবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। গত ৩১ জানুয়ারি ও ১ ফেব্রুয়ারি দু’দিন ধরে রাজ্যে নানা বৈঠক করে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা৷ জানান, প্রতি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে। টহলদারিতেও থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। সেই সঙ্গে এও জানা গিয়েছিল, মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে বিভিন্ন এলাকায় টহলদারির জন্য রাজ্যে কমপক্ষে ১০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চলে আসবে। কিন্তু ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি দেশের পরিস্থিতি বদলে যায়। সিআরপিএফের উপর জঙ্গিহানার ঘটনার পর গোটা ফোর্সের নজর এখন অশান্ত কাশ্মীরে৷ ফলে, এই পরিস্থিতি বাহিনী কতটা মোতায়েন করা যাবে, তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে৷