মানব জীবনের লক্ষ্য কী? কী বলছে হিন্দু শাস্ত্র?

‘আয় মন বেড়াতে যাবি/ কালীকল্পতরুমূলে চারি ফল কুড়ায়ে খাবি’। সাধক রামপ্রসাদের এই গানে কোন চারটি ফল কুড়োনোর কথা বলা হয়েছে, তা রসিকজন জানেন। সেই চারটি ফলের জন্যই মানব জমিনে আবাদ। যথাযথ যত্নে এই চারটি ফলই সোনা ফলায় সেই পতিত জমিতে। না, জীবনের লক্ষ্যপূরণের জন্য আপনাকে সন্ন্যাস নিতে একবারও বলছে না হিন্দু শাস্ত্র। বরং গৃহীজীবনেই এই

মানব জীবনের লক্ষ্য কী? কী বলছে হিন্দু শাস্ত্র?

‘আয় মন বেড়াতে যাবি/ কালীকল্পতরুমূলে চারি ফল কুড়ায়ে খাবি’। সাধক রামপ্রসাদের এই গানে কোন চারটি ফল কুড়োনোর কথা বলা হয়েছে, তা রসিকজন জানেন। সেই চারটি ফলের জন্যই মানব জমিনে আবাদ। যথাযথ যত্নে এই চারটি ফলই সোনা ফলায় সেই পতিত জমিতে। না, জীবনের লক্ষ্যপূরণের জন্য আপনাকে সন্ন্যাস নিতে একবারও বলছে না হিন্দু শাস্ত্র। বরং গৃহীজীবনেই এই লক্ষ্যগুলিকে স্থির রাখার কথা বলছে বেদ।

মানব জীবলের লক্ষ্যগুলিকে ‘পুরষার্থ’ বলে উল্লেখ করে হিন্দু শাস্ত্র। দেখা যাক এদের স্বরূপ।

ধর্ম— এখানে ‘ধর্ম’ মানে ‘রিলিজিয়ন’ নয়। এর অর্থ, কিছু নৈতিক কর্তব্য পালন। যেমন, সমাজের প্রতি কর্তব্য, পরিবারের প্রতি কর্তব্য, মানবের প্রতি কর্তব্য। এই কর্তব্য পালনই ‘ধর্ম পালন’।

অর্থ— ‘অর্থ বলতে এখানে সম্পদকেই বোঝানো হয়েছে। হিন্দু শাস্ত্র কখনওই বিত্ত আহরণকে কোনও খারপ চেখে দেখন। বরং জীবন ধারণ ও যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় বিত্তকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এখানে। কিন্তু সেই আহরণের পন্থা যেন কখনওই অসৎ না হয়। ধর্ম ও অর্থের মধ্য সংঘাত বাধলে শাস্ত্রে ধর্মকেই প্রাধান্য দিতে বলা হয়েছে।

কাম— ‘কাম’-এর স্বরূপ নির্ধারণ করা আজ খুবই কঠিন। তবু এ কথা বোঝা যায়, ‘কাম’ মানে কখনওই যৌনতা নয়। কাম এখানে ‘সুখ’। যৌনসুখও তার মধ্যে একটি। তবে এখানে সাংস্কৃতিক কর্ম, ক্রীড়া, সৃজনশীল কাজ, সবকিছুকেই বোঝায়।

মোক্ষ— ‘মোক্ষ’ শব্দের অর্থ ‘মুক্তি’। জন্মান্তরচক্র থেকে মুক্তিলাভকে জীবনের অন্যতম লক্ষ্য বলে বর্ণনা করে হিন্দু শাস্ত্র। কর্মফল মানুষকে এক জন্ম থেকে অন্য জন্মের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যায়। বর্তমান জন্মে তাই সুকৃতির প্রয়োজন, যা এই চক্র থেকে মুক্তির পথ প্রশস্ত করবে। ‘মোক্ষ’-কেই জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য বলে বর্ণনা করেছেন শাস্ত্র-প্রণেতারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

7 + 10 =